Table of Contents
Pudina Cultivation in Bengali পুদিনা পাতা চাষ পদ্ধতি
বর্তমানে পুদিনা চাষ এমন একটি উল্লেখযোগ্য চাষ, যার চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে । (Pudina Cultivation) পাশাপাশি, পুদিনার একাধিক উপকারিতার জন্য বাজারে এর চাহিদাও আকাশছোঁয়া । পুদিনার ফলন হতেও বেশি সময় লাগেনা, যার ফলে কম সময়ের মধ্যেই প্রচুর অর্থ উপার্জনের সুযোগ থাকে কৃষকদের কাছে ।
পুদিনা পাতার সুগন্ধ ও ভেষজ গুনের কারণে দিন দিন সবার প্রিয় হয়ে উঠেছে । আজ পুদিনা ব্যবহার হয় না, এমন জায়গা আমাদের জীবনে নেই বললেই চলে । সে কারনে পুদিনা পাতার অর্থনৈতিক গুরুত্ব দিন দিন বেড়ে চলেছে । দীর্ঘদিন থেকেই এ দেশে পুদিনা পাতা ব্যবহার হয়ে আসছে । এক সময় ছিল যখন বাড়ির আঙিনায় ২ থেকে ৪টি পুদিনা গাছ লাগিয়ে পরিবারের চাহিদা মিটানো হতো ।
এখন অবস্থা বদলে গেছে । শহরাঞ্চলে পুদিনার চাহিদা দ্রুত বাড়ছে । (Pudina Cultivation in Bengali) পুদিনার চাষ এখন অন্যান্য ফসলের মতো বাণিজ্যিকভাবে করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে । পুদিনা পেপারমেন্ট নামে পরিচিত । আয়ুর্বেদে পুদিনায় পাওয়া তেলের অনেক গুরুত্ব রয়েছে । এটি অনেক রোগের জন্য ব্যবহৃত হয় । এর আয়ুর্বেদিক বৈশিষ্ট্যের কারণে বাজারে এর চাহিদা বেশি, তাই এর চাষ খুবই লাভজনক ।
বিভিন্ন বান্যিজিক ক্ষেত্রে পুদিনার প্রয়োগ রয়েছে । আমাদের দেশের বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় পুদিনা চাষের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে । কৃষকরা ব্যাপক হারে পুদিনা চাষ করে ভালো লাভ করছেন । এই চাষের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এক বার চারা রোপণ করে টানা চার বছর ফসল তোলা যায় ।
পুদিনা চাষের খরচ খুবই কম । কম খরচে অধিক লাভের ফসল এটি । আজ আমরা আপনাদের সাথে পুদিনা পাতার চাষ পদ্ধতি, উপকারীতা সহ নানা খুঁটিনাটি দিক নিয়ে আলোচনা করবো ।
পুদিনার জাত ও পরিচয়
- বিরুৎ অর্থাৎ খুবই ছোট আকারের গাছ পুদিনা । কাণ্ড ছোট ও নরম । পাতা ডিম্বাকার, কিনারা খাঁজকাটা ও লোমশ । তীব্র মিষ্ট গন্ধযুক্ত ।
- গাছের উচ্চতা ৫০ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার । গাছের গোড়া থেকে ধাবক বা রানার বের হয় । গাছ দ্রুত বাড়ে ও ঝোপ তৈরি করে ।
- পৃথিবীতে কয়েকশো প্রজাতির পুদিনা আছে । তার মধ্যে বিখ্যাত হল পিপারমিন্ট, স্পিয়ারমিন্ট, অ্যাপেলমিন্ট, জাপানিজ মিন্ট ইত্যাদি ।
- আমাদের দেশে জাপানিজ মিন্ট, পিপার মিন্ট ও স্পিয়ার মিন্ট বেশি পরিমানে চাষ হয়ে থাকে । (Pudina Cultivation in Bengali) আমাদের দেশে যে পুদিনা চাষ হয় তার কোনো ফল হয় না ।
(Pudina Cultivation) পুদিনার চাহিদা
রাজ্যের অনেক বেসরকারি সংস্থা কৃষকদের পুদিনা চাষে উদ্বুদ্ধ করছে । একই সঙ্গে কতিপয় সংগঠন কৃষকদের জানাচ্ছেন কীভাবে কম খরচে বেশি উৎপাদন করা যায় । আয়ুর্বেদিক বৈশিষ্ট্যের কারণে বাজারে পুদিনার চাহিদা অত্যন্ত বেশিঃ
- আমাদের দেশ ভারতে প্রতি বছর ১০ টনেরও অধিক পিপারমেন্ট তেলের চাহিদা রয়েছে । (Pudina Cultivation in Bengali) চাহিদার বিচারে অঙ্কটা বিরাট ।
- হিসাব করে দেখা গেছে, এ পরিমাণ তেল উৎপাদনের জন্য ১০ হাজার একর জমি প্রয়োজন । কিন্তু এই পরিমান চাষ এখনও হচ্ছে না ।
- দেশের উৎপাদন কম হওয়ায় ভারতে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার পিপারমেন্ট তেল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় ।
- প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে বছরে ১৮ টন কাঁচা পুদিনা পাতার চাহিদা রয়েছে । বাংলাদেশের বাজারে মূলত কাঁচা পুদিনার চাহিদাই বেশি ।
- পুদিনা পাতার ওপর ভিত্তি করে পিপারমেন্ট অয়েল শিল্প স্থাপন করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সাথে সাথে প্রচুর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতে পারে ।
(Pudina Cultivation)পুদিনা চাষের সময়
- প্রথম কথা হল, পুদিনা পাতার চাষ সারা বছরই করা যায় । তবে খারিফ মরসুম হল পুদিনা চাষের পক্ষে সব চেয়ে উপযুক্ত ।
- শীতকালে ভালোভাবে সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে শীতকালেও (Pudina Cultivation in Bengali) পুদিনা চাষ করে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব হয় ।
- সাধারণত বর্ষার আগে অথবা পরের সময়টা পুদিনার কাটিং রোপণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত বলে মনে করা হয় । তবে কেউ কেউ জানুয়ারি মাসেও চারা রোপণের উপযুক্ত বলে মনে করে থাকে ।
পুদিনা চাষের মোট খরচ
পুদিনা চাষে খরচ খুবই কম । অল্প খরচে ব্যাপক পরিমানে লাভ করা যায় পুদিনা চাষ করে । সম্ভাব্য খরচের হিসাব নিচে দেওয়া হলঃ
- জমি নিজের হলে ভালো । সেক্ষেত্রে কোনও খরচ নেই । নতুবা লিজে নিতে বছরে বিঘাপ্রতি ১০ হাজার টাকা লাগবে ।
- জমিতে পাঁচ ছয়টি চাষ দিতে প্রতি চাষ ৭০০ টাকা হিসাবে ৪২০০ টাকা লাগবে ।
- সেচ দেওয়ার প্রয়োজন আছে । চারা বসানো পর্যন্ত ৫ থেকে ৬ বার সেচ দিতে মোট খরচ সেচ প্রতি ৫০০ টাকা হিসাবে ৩০০০ টাকা ।
- গোবর সার ও অন্যান্য সার বাবদ ৪০০০ টাকা ধরে নেওয়া যায় ।
- চারার জন্য তেমন কোনও খরচ নেই । প্রথমে কিছু পরিমান চারা ১০০০ টাকা দিয়ে কিনে নিলেই চলে যাবে ।
- লেবার বাবদ সারা বছরই খরচ হয় । তবে প্রথম অবস্থায় চারজন লেবার চারদিন কাজ করলেই যথেষ্ট । তাতে ৪৮০০ টাকা খরচ ।
- তাহলে জমি নিজের ধরে নিলে, মোট খরচ দাঁড়ালো, ৪২০০ + ৩০০০ + ৪০০০ + ১০০০ + ৪৮০০ = ১৭০০০ টাকা । এছাড়া সারা বছর সেচ, নিড়ানি, সার দেওয়া ও ফসল তোলা বাবদ সর্বমোট ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা ধরে নেওয়া যায় । তাহলে মোট খরচ দাঁড়াবে বিঘাপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মতো ।
জমি নির্বাচন ও জমি তৈরি করা
যেকোনো চাষের ক্ষেত্রে জমি নির্বাচন ও জমি তৈরি বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ । (Pudina Cultivation in Bengali) জমির উপরই নির্ভর করে ফসলের পরিমান । তাই,
- এটেল ও দোআঁশ মাটি যুক্ত জমি পুদিনা চাষের পক্ষে ভালো হয়ে থাকে । রোদের পরিমান যেন জমিতে ভালো থাকে সেদিকেও লক্ষ্য রাখা দরকার ।
- জমিতে আর্দ্রতা বজায় থাকা প্রয়োজন । কিন্তু অতিরিক্ত জল জমে থাকলে চলবে না । পুদিনা গাছ নষ্ট হয়ে যাবে ।
- জমি নির্বাচন হয়ে গেলে, চার পাঁচ বার চাষ দিয়ে জমির মাটি ভালো করে তৈরি করে নিতে হবে । জমি শুষ্ক হলে, চাষের আগে হালকা সেচ দিয়ে আর্দ্রতা তৈরি করে নিতে হবে ।
- চাষের মাঝেই বিঘা প্রতি ৫ থেকে ৬ টন গোবর সার এবং ৩০ কেজি সুপার ফসফেট জমিতে ছড়িয়ে দিয়ে আবার চাষ দিতে হবে । জমিকে ভালো করে উর্বর করে নিতে হবে ।
- প্রতি ২ ফুট অন্তর ৬ ফুট চওড়া করে বেড তৈরি করে নিতে হবে । ওই বেডেই পুদিনার চারা বসবে । এই ভাবেই পুদিনা চাষের জমি চারা বসানোর জন্য উপযুক্ত তৈরি হবে ।
- পাশাপাশি বলে রাখি, পাহাড়ি বা ঠান্ডা জায়গায় এই চাষ খুব একটা ভালো ভাবে করা যায় না ।
পুদিনার চারা তৈরি ও চারা রোপণ
(Pudina Cultivation in Bengali) জমি তৈরি হয়ে গেলে চারা রোপণ করতে হবে । চারা রোপণের সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবেঃ
- পুদিনা পাতার চাষ বীজ দিয়ে হয় না । কাটিং দিয়েই করতে হয় । কাটিং দিয়ে চাষ করেই ভালো ফলাফল পাওয়া যায় ।
- চারা তৈরি করার জন্য পুরোনো গাছ থেকে ১০ সেমি লম্বা মাপের কাটিং নিয়ে বীজতলা বা হাপরে রোপন করতে হয় ।
- মূল জমিতে চারা রোপণের ১০ দিন আগে কাটিং করতে হয় । কারন, কাটিং থেকে শেকড় গজাতে মাত্র ৭ দিন সময় লাগে । শেকড় গজালেই মূল জমিতে রোপণ করার উপযুক্ত হয়ে ওঠে ।
- মূল জমিতে রোপণের সময় গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১ ফুট হওয়া উচিত । পাশাপাশি, সারি থেকে সারির দূরত্ব হতে হবে ন্যূনতম ১ ফুট । যাতে গাছগুলি বাধাহীন ভাবে বেড়ে উঠতে পারে ।
- বিকেলের দিকে চারা রোপণ করতে হবে । যাতে রোদের তেজে চারা নুইয়ে না যায় । চারা রোপণের পরে সেচের ব্যবস্থা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । তবে, অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে, জমিতে একটুও জল যাতে কোনো ভাবেই জমতে না পারে ।
পুদিনার চাষে পরিচর্যা
পরিচর্যার উপর ফসল নির্ভর করে । (Pudina Cultivation in Bengali) সঠিক ও নিয়মিত পরিচর্যা ফসলের উৎপাদন কয়েকগুণ বাড়িয়ে তোলে ।
পুদিনা চাষে সার প্রয়োগ
পুদিনা চাষে (Pudina Cultivation) অতিরিক্ত সারের প্রয়োজন হয় না । তবে জমি তৈরি করার সময় সার দিয়ে জমিকে ভালো করে উর্বর করে নিতে হয় ।
- এর জন্য, (Pudina Cultivation in Bengali) প্রতি বিঘা জমিতে কম্পোস্ট বা গোবর সার ৫ থেকে ৬ টন, সুপার ফসফেট ৩০ কেজি ভালো করে মিশ্রিত করে জমিতে বেড তৈরির সময় মাটির সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে ।
- চাইলে কাঠের ছাই ৩০ কেজি, হাড়ের গুঁড়া ১৫০ কেজি একসঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া যেতে পারে ।
- কেউ কেউ অধিক ফলন পাওয়ার আশায়, (Pudina Cultivation in Bengali) প্রতিবার ফসল তোলার পরে ইউরিয়া সার ৫ থেকে ৬ কেজি প্রয়োগ করে । বেশি ইউরিয়া প্রয়োগ ফসলের ক্ষতি করে ।
পুদিনা চাষে আগাছা দমন
- পুদিনার সঙ্গে সঙ্গে আগাছা যথেষ্ট পরিমানে বৃদ্ধি পায় । আগাছা ফসলকে ধ্বংস করে দেয় । তাই সব সময় (Pudina Cultivation in Bengali) পুদিনার জমি আগাছামুক্ত রাখতে হবে ।
- এছাড়া, আবর্জনা ও অন্যান্য দৃশ্যমান অপ্রয়োজনীয় বস্তু যা ফসলকে ক্ষতি করতে পারে, (Pudina Cultivation in Bengali ) জমি থেকে অপসারণ করতে হবে ।
পুদিনা চাষে সেচ প্রদান
সেচের প্রয়োজনীয়তা সব চাষেই আছে । পুদিনার চাষেও সেচের প্রয়োজন আছে । প্রয়োজন বুঝে সেচ দিতে হবেঃ
- চারা রোপণের (Pudina Cultivation) সঙ্গে সঙ্গে একটা সেচ দিতে হবে, যাতে চারা গুলি মরে না যায় বা মাটিতে ধরে নিতে সাহায্য করে ।
- এরপর, ১৫ দিন অন্তর অন্তর সেচ দিতে হবে । লক্ষ্য রাখতে হবে, জমিতে যেন জল জমে না যায় ।
- বর্ষাকালে সেচের প্রয়োজন হয় না । তবে অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে জমিতে জল দাঁড়িয়ে গেলে, সেই জল বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে ।
পুদিনা চাষে রোগ ও চিকিৎসা
পুদিনার বিশেষ কোনও রোগ নেই । তার জন্য (Pudina Cultivation in Bengali) পুদিনা চাষে তেমন কোনও চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না । শুধুমাত্র,
- পাতা শুকিয়ে যাওয়া রোগ কখনও কখনও দেখা যায় । এতে গাছের পাতা শুকিয়ে যায়, গাছকে মরে যাওয়ার মতো মনে হয় ও গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে । এর হাত থেকে বাঁচার জন্য, নিম পাতার জল তৈরি করে স্প্রে করলে বেশ উপকার পাওয়া যায় ।
- পাতা কুঁকড়ে যাওয়ার লক্ষণ মাঝে মাঝে দেখা যায় । সেক্ষেত্রে, কুঁকড়ানো পাতা কেটে বাদ দেওয়াই ভালো । বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করলে, উপযুক্ত কীটনাশক স্প্রে করলে উপকার পাওয়া যায় ।
পুদিনা পাতার গুনাবলী
পুদিনা পাতার অশেষ গুনাবলী রয়েছে । পুদিনা পাতার গুণাবলী বলে শেষ করা যাবে না । উপযুক্ত ব্যবহার করার জন্য গুণাবলী অবশ্যই জানা দরকারঃ
- ত্বকের যত্নেঃ ত্বক পুড়ে গেলে, পোড়া ত্বকে পুদিনা পাতার রস অ্যালোভেরার সাথে মিশিয়ে লাগালে জ্বালা কমে ও ক্ষত নিরাময় হয় । এছাড়া, গোলাপ, পুদিনা, আমলা, বাঁধাকপি ও শসার নির্জাস একসঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে মাখলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে ও ত্বক মসৃণ হয় ।
- ক্যানসার উপসমেঃ অনেক বিজ্ঞানীর মতে পুদিনা পাতা ক্যানসার রোগের প্রতিরোধক । পুদিনা পাতার পেরিলেল অ্যালকোহল যা ফাইটো নিউট্রিয়েন্টসের একটি উপাদান দেহে ক্যানসারের কোশ বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে ।
- ব্রণের চিকিৎসায়ঃ ব্রণের চিকিৎসায় পুদিনা পাতার ব্যবহার রয়েছে । (Pudina Cultivation in Bengali) পুদিনা পাতা বেঁটে মুখে লাগালে ব্রন চলে যায় ।
- উকুন থেকে মুক্তিঃ চুলে উকুন হলে, পুদিনা পাতা বেঁটে চুলে লাগিয়ে রাখতে হবে সপ্তাহে দুই তিন দিন । এক ঘণ্টা পরে শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে । উকুন থাকবে না ।
- সাইনাস ও সর্দিতে লাভদায়কঃ সর্দি হলে অনেক সময় নাক বন্ধ হয়ে যায় । আবার, অনেকের অ্যাজমায় কষ্ট হয় । পুদিনা পাতা গরম জলে মিশিয়ে তার ভাপ নিলে উপকার পাওয়া যায় । আবার টাটকা পুদিনা পাতা পিষে রস বের করে প্রতিদিন ১ চামচ করে ২ বার ১৫ থেকে ২০ দিন খেলে উপকার পাওয়া যাবে । কফ, সর্দি, কপালে সাইনাসের কারনে জমে যাওয়া ঘন সর্দি বের করে আনবে ।
- অরুচিতে উপকারীঃ পুদিনা পাতা ৮ থেকে ১০ নিয়ে বেটে জলেগুলে শরবত ৭ থেকে ৮ দিন খেতে হবে । অথবা পুদিনা পাতার চাটনি একাধারে ৭ থেকে ৮ দিন খেলেও অরুচি কমে যাবে ।
- হজমের সমস্যায়ঃ যাদের হজমের সমস্যা আছে, তীব্র পেট ব্যথা হয়ে থাকে, পেটে বায়ু জমে রয়েছে, তাদের পুদিনা পাতার চা রোজ ১ কাপ করে খেলে হজমের উপকার হয় । তাছাড়া, তুলসীপাতা, গোলমরিচ, আদা ও পুদিনা পাতা পরিমাণ মতো একসাথে মিশিয়ে পিষে নিয়ে জলে সেদ্ধ করে, একটা ঘন ক্বাথ তৈরি করুন । এ ক্বাথ চামচে নিয়ে অল্প একটু জিহ্বা দিয়ে চেটে অন্তত ৪ বার করে ৩ দিন খেলে পেটের বায়ু দূর হবে ও খুব ক্ষিদে পাবে । পুদিনা পাতায় অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ফাইটো নিউট্রিয়েন্টস থাকায় পেটের যেকোনো সমস্যা খুব তাড়াতাড়ি সমাধান করে ।
- অন্ত্রের দুর্বলতায়ঃ যারা অন্ত্রের রোগে ভুগছেন, তাদের টাটকা পুদিনা পাতার রস মধু মিশিয়ে খাওয়ালে অন্ত্রের সব গোলযোগ দূর হয় ।
- ব্যথা উপশমকারী হিসাবে পুদিনা তেলের অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে । পাশাপাশি, এই তেলে মেন্থোন, মেনথল এবং মিথাইলের মতো অ্যাসিটেট পাওয়া যায়, যা মাথা ব্যথা, হাঁটুর ব্যথা সহ কোমর ব্যথা এবং শ্বাসকষ্ট দূর করতে সহায়ক ।
- নিউমোনিয়াতে কার্যকরঃ টাটকা পুদিনার রস অল্প মধুর সাথে মিশিয়ে খাওয়ালে নিউমোনিয়া রোগীর অনেক বিকার দূর হয় ও জ্বরও তাড়াতাড়ি সেরে যায় । ১ চামচ করে প্রতি ২ ঘণ্টা অন্তর খাওয়াতে হবে ।
- পিত্ত বমিতে উপকারিঃ শ্লেষ্মাজ্বর, অম্লপিত্ত, আমাশয়, অজীর্ণ, উদরশূল প্রভৃতিতে বমি হতে পারে । আবার রোদে ঘোরাফেরা করে পরিশ্রম করলেও বমি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । সেক্ষেত্রে, ৮ থেকে ১০ গ্রাম পুদিনা পাতা বেটে তাতে পুরনো তেঁতুল ১ চা চামচ, সামান্য একটু চিনি ও লবন দিয়ে ২৫০ মিলি জলে গুলে দিনে ৩ বার খেলে খুব তাড়াতাড়ি উপকার হবে ।
- পুরনো সবিরাম জ্বরেঃ টাটকা পুদিনাপাতা ও তুলসীপাতা একসঙ্গে পিষে জল মিশিয়ে আগুনে ফুটিয়ে ঘন ঝোল বা ক্বাথ তৈরি করুন । প্রতিদিন যে জ্বর কোনো একটা বিশেষ সময়ে একটানা বহু দিন ধরে আসে, সেক্ষেত্রে এই ক্বাথ প্রতিদিন ২ থেকে ৩ বার করে অন্তত সপ্তাহখানেক খেলে জ্বর সেরে যাবে ।
- দাঁতের ব্যাথায় লাভদায়কঃ যদি কোনো ব্যক্তি দাঁতের ব্যথায় ভুগতে থাকে, তাহলে দাঁতের গোড়ায় পুদিনা তেল লাগালে ব্যথা থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া যায় ।
- টেনশন কমাতে উপকারীঃ পুদিনা তেলের সুগন্ধ মানুষের মনের স্ট্রেস এবং টেনশন কমাতে সহায়ক বলে প্রমাণিত হয়েছে ।
পুদিনার সার্বিক ব্যবহার
- পুদিনার সুগন্ধির কারণে বিভিন্ন মুখরোচক কাবাব, সালাড, বোরহানি ও চাটনি তৈরিতে ব্যবহার হয় । কাঁচা পুদিনা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় চাটনি, সালাড ও টিফিন খাওয়ার সময় ।
- এছাড়া মাছ, মাংস, সস, স্যুপ, স্টু, চা, তামাক, শরবত তৈরিতে (Pudina Cultivation in Bengali) পুদিনা পাতা ব্যবহার হয়ে থাকে ।
- ইউরোপের দেশগুলোতে ভেড়ার মাংসের রোস্ট ও মিন্ট জেলি তৈরিতে পুদিনা পাতা ব্যবহার হয় ।
- বিভিন্ন দেশে পুদিনার তেল বা পিপারমেন্ট অয়েল বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে । এ তেল বেশ মূল্যবান । বিভিন্ন শিল্প বিশেষ করে ওষুধ, টুথপেস্ট, মিন্ট চকোলেট, ক্যান্ডি, চুইয়িংগাম ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এসবে এটি ব্যবহার হয় ।
- কোনো কোনো ব্র্যান্ডের সিগারেটেও মেন্থল ব্যবহার হয় । তাই পুদিনা গাছের শিল্প মূল্য অনেক বেশি ।
- এছাড়াও, কমার্শিয়াল ভিত্তিতে বিভিন্ন কসমেটিকসের পণ্য তৈরিতে পুদিনা তেল ব্যবহার করা হয়, যেমন অনেক ধরনের ক্রিম ও সাবান ইত্যাদি ।
- পুদিনার ভেষজ গুন বহুল পরিমানে থাকায়, বিভিন্ন মেডিসিন তৈরি করতেও পুদিনার ব্যবহার ব্যাপক রয়েছে ।
- পুদিনা পাতার তীব্র ঘ্রানের জন্য দায়ী উপাদান মেন্থল ও মেন্থোন । পুদিনার তেলের একটি মনোরম সুগন্ধ রয়েছে, তাই এটি পানীয়, পারফিউম এবং মসলা তৈরিতেও ব্যবহৃত হয় । পণ্যকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে ।
পুদিনার ফসল সংগ্রহ
চাষের ফল লাভ ফসলে । (Pudina Cultivation in Bengali) পুদিনা চাষের মজার ব্যাপার হল, এক বার চাষ করে ৪ বছর পর্যন্ত ফসল সংগ্রহ করা যায় । তার বিবরণ দেওয়া হলঃ
- পুদিনা গাছ লম্বা হতে শুরু করলে ১০ সেন্টিমিটার লম্বা কাটিং বা ডাল কেটে ১০ থেকে ১৫টি শাখা একটি আঁটিতে বেঁধে বাজারে বিক্রি করার জন্য পাঠানো হয় ।
- এই ফসল মাত্র ৪৫ থেকে ৫০ দিনের মধ্যেই প্রস্তুত হয়ে যায় । তখন প্রথমবার ফসল সংগ্রহ করা হয় ।
- এরপর থেকে প্রতি ৩০ দিন অন্তর ফসল তোলা হয়ে থাকে । (Pudina Cultivation in Bengali) প্রতিবারে বিঘাপ্রতি প্রায় ৩০০০ কেজি পুদিনা পাওয়া যায় ।
- সারা বছরই ফসল সংগ্রহ করা যায় । কেবল মাত্র বর্ষাকালে তিন মাস ফসল তোলা বন্ধ থাকে, কারন বর্ষায় পাতা নষ্ট হয়ে যায় ।
- (Pudina Cultivation in Bengali) পুদিনা চাষ করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, এই গাছের তেলের চাহিদা বাজারে অত্যধিক বেশি । আপনি যদি ১ বিঘা জমিতে পুদিনা চাষ করেন, তবে এর গাছ থেকে প্রায় ২০ থেকে ২৫ লিটার কিংবা তারও অনেক বেশি তেল তৈরি হতে পারে ।
পুদিনার দাম ও লাভ
- খোলা বাজারে পুদিনার দাম আকাশ ছোঁয়া । সিজিন অনুযায়ী মিনিমাম ৪০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে ।
- (Pudina Cultivation in Bengali) চাষিরা কেজিপ্রতি ১০ টাকা থেকে উর্দ্ধে ১৫০ টাকা পর্যন্ত পেয়ে থাকে ।
- লাভের হিসাব করতে গেলে দেখা যায়, প্রতিবারে ৩০০০ কেজি পুদিনা উৎপাদন হচ্ছে । যদি ধরে নেওয়া হয়, গড়ে ২০ টাকা হিসাবে চাষিরা বিক্রি করতে পারে, সেক্ষেত্রে ৩০০০ * ২০ = ৬০০০০ টাকা আমদানি হবে ।
- বছরে কমকরে ৬ বার ফসল তোলা যাবে । ছয় বার তুললে মোট আমদানি দাঁড়াবে, ৬০০০০ * ৬ = ৩৬০০০০ টাকা ।
- বিঘাপ্রতি সর্বোচ্চ খরচ ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা । (Pudina Cultivation in Bengali) খরচ বাদ দিলে এক বিঘাতে বছরে লাভ দাঁড়ায় প্রায় ৩ লক্ষ টাকা । অর্থাৎ পুদিনা চাষ করে লাখপতি ।
Frequently Asked Questions
পুদিনা কি গ্যাসের পক্ষে উপকারী ?
ANS : অবশ্যই উপকারী । পুদিনা হজমে সাহায্য করে এবং এর কারমিনেটিভ প্রপার্টি গ্যাস থেকে অনেকটাই মুক্তি দিতে সাহায্য করে ।
মিন্ট ও পুদিনা কি আলাদা ?
ANS : একদম না । পুদিনাকেই অনেকে বা কোথাও কোথাও মিন্ট নামে ডাকা হয়ে থাকে ।
পুদিনার ব্যবহার কি কি হয় ?
ANS : যেহেতু পুদিনা হজমে সাহায্য করে, তাই খাবারের সাথে কিংবা রান্নাতে পুদিনা ব্যবহার করা হয়ে থাকে । এ ছাড়াও পুদিনার ঔষধি গুন অসংখ্য । তাই অনেক ক্ষেত্রেই পুদিনা ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।
পুদিনা গাছ কতো বড় হয়ে থাকে ?
ANS : পুদিনা আসলে গুল্ম জাতীয় গাছ । খুব বেশী বড় হতে দেখা যায় না । ৫ থেকে ৭ ফুট উচ্চতা যুক্ত ঝোপের আকারে হয়ে থাকে ।
পুদিনা চাষের কি কোনও মরশুম আছে ?
ANS : না । যেকোনো সময় পুদিনা চাষ করা যেতে পারে । এটি বহু বর্ষজীবী উদ্ভিত । কাজেই একবার লাগালে অনেক দিন ধরে সারা বছরই ফলন দিয়ে থাকে ।
আমাদের দেশে পুদিনার চাহিদা কেমন ?
ANS : অসম্ভব চাহিদা । প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম উৎপন্ন করা হয়ে থাকে । তাই প্রয়োজন মেটাতে বিদেশ থেকে পুদিনা আমদানি করতে হয় ।
পুদিনা চাষে সেচ ব্যবস্থা কেমন থাকা দরকার ?
ANS : তেমন বেশী সেচের প্রয়োজন হয় না । তবুও ব্যবস্থা রাখতে হয় । জমির আর্দ্রতা কমে গেলে চলবে না আবার বেশী জল থাকলেও চলবে না । শীতকালে বা অতিরিক্ত গরমে যদি জমি শুকিয়ে যায়, তখন সেচের প্রয়োজন হয় ।
বানিজ্য ক্ষেত্রে পুদিনার গুরুত্ব কি ?
ANS : পুদিনার গুরুত্ব ঘরোয়া থেকে বানিজ্য ক্ষেত্রেই বেশী । পুদিনাতে মেন্থল ও মেন্থন থাকার কারনে সিগারেট শিল্পে, কসমেটিক শিল্পে, ঔষধ শিল্পে, পারফিউম বা অন্য অনেক শিল্পে এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় ।
পুদিনার চারা কিভাবে পাওয়া যাবে ?
ANS : পুদিনার বীজ থেকে কোনও চারা হয় না । শাঁখা কলমের মাধ্যমে চারা তৈরি করে চাষ করা হয়ে থাকে ।
পুদিনা চাষের ভবিষ্যৎ কি ?
ANS : দারুণ উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ । আগামী দিনে প্রচুর চাহিদা বৃদ্ধি পাবে । ফলে পুদিনা চাষ করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করার সুযোগও থাকবে ।
আজ আমরা পুদিনা পাতা চাষ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম । আগামীতে আপনাদের সাথে Pudina Cultivation in Bengali পুদিনা পাতা চাষ নিয়ে আরো কিছু আলোচনা করবো, তাই আমাদের পেজে নিয়মিত চোখ রাখুন ।
আমার লেখাটি অনেকের উপকারে লাগতে পারে, তাই লেখাটি যতোটা সম্ভব শেয়ার করুন, যাতে করে অনেকে এই লেখা থেকে শিক্ষা গ্রহন করে Pudina Cultivation in Bengali পুদিনা পাতা চাষ করে ভালো আয় করার রাস্তা বের করতে পারে ।