Table of Contents
Sunflower Cultivation in Bengali সূর্যমুখী চাষ পদ্ধতি
সূর্যমুখী একটি ফুল হলেও এটি আসলে তেল জাতীয় ফসল । এর বীজ থেকে তেল তৈরি করা হয়ে থাকে । (Sunflower Cultivation in Bengali) সূর্যমুখী ফুলের নিষ্কাশিত তেল পুষ্টিগুণে ভরপুর । এর বীজ থেকে প্রস্তুত হওয়া তেল ভোজ্য তেল হিসাবে ব্যবহৃত হয় । হৃদরোগীদের জন্য এর তেল খুবই উপকারী । ঘিয়ের বিকল্প হিসেবে এই তেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে । রান্নায় এই তেল ব্যবহার করা যায় । এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ডি ও ই ।
বহু চাষিভাই সূর্যমুখী চাষ করে উপকার পেয়েছেন । এই ফুলের চাষ করার পদ্ধতি যেমন সহজ, তেমনই এই ফুলের চাষের থেকে অর্থকরী লাভও কম নয় ।
আজ আমরা আপনাদের সাথে সূর্যমুখী চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব । এতে করে আপনারা সহজেই (Sunflower Cultivation) সূর্যমুখী চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন । দেশের বিভিন্ন জায়গায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়ে থাকে । পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়ও এর চাষ লক্ষ্য করা যায় ।
সূর্যমুখী চাষের (Sunflower Cultivation) প্রয়োজনীয়তা
যে কোনও ফসলের চাষ তার প্রয়োজন অনুসারে প্রসার লাভ করে ও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে । সূর্যমুখী এমন একটি ফসল যার গুনাগুনের শেষ নেই । তাই এই চাষের (Sunflower Cultivation) প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বেড়ে চলেছে । নিচে এর ব্যবহার ও গুনাগুন আলোচনা করা হলঃ
- সূর্যমুখীর তেল পুষ্টিগুণে ভরপুর । এতে লিয়োনেইক এসিড থাকে যা রক্তে কোলেস্টেরল জমতে বাধা দেয় । ফলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমে যায় । হার্ট পেশেন্টদের জন্য এর তেল খুবই উপকারী ।
- এই তেলে ক্ষতিকর ইউরিক এসিড থাকে না । ফলে মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারী একটি উপাদান ।
- (Sunflower Cultivation) সূর্যমুখীর বীজ খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যায় ।
- সূর্যমুখীর তেল ভোজ্য হিসাবে ব্যবহার করা ছাড়াও সাবান তৈরিতে এবং প্রসাধনী তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।
- (Sunflower Cultivation) অন্য তৈলবীজের তুলনায় সূর্যমুখীতে অধিক পরিমানে প্রায় ৪০% থেকে ৫০% বেশি তেল পাওয়া যায় ।
- সূর্যমুখীর ভুষি এবং বীজ থেকে প্রাপ্ত খইল গবাদি পশুর খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যায় । এর খইলে প্রায় ৫০% থেকে ৬০% প্রোটিন থাকে, যা গবাদি পশুর স্বাস্থ্যের পক্ষে চমৎকার আহার ।
- গ্রাম বাংলায় সূর্যমুখীর শুকনো কাণ্ড জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে । এক কথায় বলতে গেলে সূর্যমুখীর কোনও অংশই বাদ যায় না । ফলে সূর্যমুখীকে একটি স্বাস্থ্যকর ও অর্থকরী উপকারী ফসল হিসাবে ধরে নেওয়া যায় ।
সূর্যমুখী চাষে জমি ও মাটি
যে কোনো চাষের পক্ষে জমি ও তার মাটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । জমির ধরন ও তার মাটির প্রকৃতি কেমন হবে তার উপর নির্ভর করে চাষে ফলন । সূর্যমুখীর ক্ষেত্রে জমি ও মাটি হওয়া চাই নিম্নরূপঃ
- সাধারনত ডাঙ্গা জমিতেই এই চাষ ভালো হয় । জমি নিচু হলে, গাছের গোঁড়ায় বেশি পরিমানে জল থাকলে ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে ।
- প্রায় সব ধরনের মাটিতেই সূর্যমুখী চাষ করা যায় । তবে দোয়াস বা বেলে দোয়াস মাটি সূর্মুমুখী চাষের জন্য বেশি উপযোগী ।
সূর্যমুখী চাষের সময়
সব চাষের একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে । সেই সময় অনুযায়ী সেই চাষ করতে হয় । ভালো ফলন পাওয়ার জন্য সূর্যমুখীর চাষ নিচের বর্ণিত সময় অনুযায়ী করতে হবেঃ
- প্রায় সারা বছরই সূর্যমুখী চাষ (Sunflower Cultivation) করা যেতে পারে ।
- তবে অগ্রহায়ন মাস অর্থাৎ নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায় । এই সময়ের ফলন যেমন অধিক হয়, তেমনি বীজের গুনগত মান ভালো হওয়ার ফলে তেলও বেশি পাওয়া যায় ।
- চাইলে, এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত অর্থাৎ বৈশাখ মাসেও এর চাষ করা যেতে পারে ।
সূর্যমুখী চাষের উপযুক্ত প্রজাতি
র্যমুখীর অনেক প্রজাতি পাওয়া যায় । তার মধ্যে উন্নত ও উচ্চ ফলন দায়ী কিছু প্রজাতি আছে যা চাষ করে চাষি আর্থিক দিক থেকে ভালো লাভবান হতে পারে ।
যেমনঃ সিরি ৩৩৩, ব্যাট ৩৬, ব্যাট ৩৬১, কেবিএসএইচ ১, কেবিএসএইচ ২৪৪১, কেবিএসএইচ ৪৪, কেবিএসএইচ ৫৩ ইত্যাদি ।
সূর্যমুখী চাষের পদ্ধতি
সব চাষেরই নির্দিষ্ট পদ্ধতি থাকে । সেই পদ্ধতি মেনে চাষ (Sunflower Cultivation) করলে ফলন ভালো হয় । সূর্যমুখী চাষের পদ্ধতি ধাপে ধাপে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
সূর্যমুখী চাষে (Sunflower Cultivation) জমি তৈরি
সূর্যমুখী চাষে বীজ বপন একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কাজ । সূর্যমুখীর বীজ বপন করতে হলে জমি ভালো ভাবে তৈরি করে নিতে হবে । যেমনঃ
- প্রথমে জমির আগাছা ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে । আগাছা ফসলের ক্ষতি করে থাকে ।
- জমি গভীর ভাবে চাষ ও মই দিয়ে ভালো ভাবে তৈরি করে নিতে হবে । ৪ থেকে ৬ বার আড়াআড়ি চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে ।
- মাটি এমন ভাবে আলগা করে দিতে হবে যাতে মাটিতে প্রয়োজনীয় আলো বাতাস পর্যাপ্ত প্রবেশ করতে পারে । তাতে ফসলের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে ।
সূর্যমুখী চাষে বীজ শোধন
সূর্যমুখী বীজ বপন করার আগে সঠিক ভাবে ভালো করে শোধন করে নিতে হবে । শোধন করলে বীজ থেকে রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায় । ফলে ফসলে রোগের প্রকোপ কম থাকে ও ফলন ভালো পাওয়া যায় । বীজ শোধনের কতোগুলি নিয়ম আছে । যেমনঃ
- প্রথমে সূর্যমুখী বীজ ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে রেখে তারপরে ছায়াতে শুকিয়ে নিতে হবে ।
- বীজ শোধন করার জন্য ভিটাভেক্স ২০০ প্রতি এক কেজি বীজের জন্য ৩ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে । অথবা কার্বোন্ডাজিম ৫০% প্রতি কেজি বীজে ২ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে ।
- একটি বড় প্লাস্টিকের ঢাকনাযুক্ত পাত্রে পরিমান মতো বীজ ও পরিমান মতো ঔষধ নিতে হবে ।
- পাত্রটির মুখ ভালো করে বন্ধ করে ঝাঁকাতে হবে । ঝাঁকিয়ে বীজ ও ঔষধ ভালো করে মিশিয়ে একদিন রেখে দিতে হবে ।
- একদিন এই ভাবে রেখে দিতে হবে । পরের দিন ওই বীজ জমিতে বপন করতে হবে । তাহলে বীজ ভালো জীবাণুমুক্ত হবে ।
সূর্যমুখী চাষে বীজ বপন
বীজ শোধনের পরে সেই বীজ বপন করাই হল আসল কাজ । সঠিক ভাবে নিয়ম মেনে বীজ বপন করতে হবে । নিচে সেই বিষয়ে একটা ধারনা দেওয়া হলঃ
- বীজ বপন খুবই সহজ কাজ । (Sunflower Cultivation) সূর্যমুখী চাষের আদর্শ নিয়ম সারি করে বীজ বোনা । সারি বিহীন ভাবে চাষ করলে ফসলের রক্ষনাবেক্ষন ও ফসল সংগ্রহ করা সমস্যা হয়ে থাকে । ফলে ফসলের ক্ষতি হয় ।
- সারি থেকে সারির দূরত্ব ও গাছ থেকে গাছের দূরত্ব নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সঠিক ভাবে বজায় রাখতে হবে । সারি থেকে সারির দূরত্ব কমপক্ষে ৫০ সেমি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২৫ সেমি রাখলে ভালো ।
- এই নিয়মে বীজ পোঁতা হলে প্রতি বিঘা জমিতে ৩ থেকে ৩.৫ কেজি বীজের দরকার পড়বে ।
সূর্যমুখীর পরিচর্যা
যে কোনও চাষেই যত্ন করা বা পরিচর্যা করা বাধ্যতামূলক । পরিচর্যার উপরই ফসলের ফলন নির্ভর করে থাকে । সূর্যমুখী চাষের ক্ষেত্রেও সঠিক পরিচর্যার প্রয়োজনঃ
সূর্যমুখী চাষে সার প্রয়োগ
উপযুক্ত পরিমানে এবং সঠিক অনুপাতে সঠিক সার সঠিক সময়ে প্রয়োগ করতে হবে । (Sunflower Cultivation) উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করতে হবে । যেমন,
- শেষ বার জমি চাষ করার সময় বিঘা প্রতি ১ থেকে ১.৫ টন জৈব সার ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে ।
- বীজ লাগানোর আগে নাইট্রোজেন ৫ কেজি, সিঙ্গেল সুপার ফসফেট ৫ কেজি, পটাশ ৫ কেজি ভালো করে মিশ্রিত করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে ।
- চারা গজানোর ২০ থেকে ২৫ দিন পর বিঘা প্রতি ১০ কেজি ইউরিয়া ছিটিয়ে দিয়ে সেচ দিতে হবে ।
- নাইট্রোজেন ২.৫ কেজি কুঁড়ি আসার সময়, আর ২.৫ কেজি ফুল ফোটা অবস্থায় প্রয়োগ করতে হবে ।
- কুঁড়ি অবস্থায় বোরন ২ গ্রাম ও জিঙ্ক ০.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে । এতে ফুলের বৃদ্ধি ও বীজের পুষ্টি ভালো হয়ে থাকে ।
সূর্যমুখী চাষে সেচ প্রদান
ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে প্রয়োজনীয় সেচ অবশ্যই দিতে হবে । পুরো চাষে বেশ কয়েকবার সেচের দরকার হয়ে থাকে । জমির আর্দ্রতা সবসময় লক্ষ্য রেখে নিয়ম মতো সেচ দিতে হবেঃ
- প্রথম বার সেচ দিতে হবে বীজ বপন করার আগে । অর্থাৎ জমি চাষের জন্য তৈরি করার প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে । জমিতে ভালো জো আনতে হবে ।
- এরপর চারা গজানোর ২০ থেকে ২৫ দিন পর ইউরিয়া চাপান দেওয়ার পরও সেচ দিতে হবে ।
- কুঁড়ি অবস্থায় অর্থাৎ চারা গজানোর প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর সেচ দেওয়া বাধ্যতামূলক ।
- ফুলের চাকতি অবস্থায় সেচ দিতে হবে ।
- আর শেষবারের মতো সেচ দিতে হবে চারা গজানোর ৭০ থেকে ৮০ দিন পর । বীজ পরিপক্ক হবার ঠিক আগে সেচ দিতে হবে ।
- তবে লক্ষ্য রাখতে জমিতে যেন জল জমে না থাকে । প্রয়োজনে নালা তৈরি করে অতিরিক্ত জল বের করার ব্যবস্থা করতে হবে ।
সূর্যমুখী চাষে আগাছা দমন
- জমিতে যেন আগাছা না জন্মে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে । জমি সর্বদা আগাছা মুক্ত রাখতে হবে । জমি সবসময়ই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা করতে হবে ।
- আগাছা জমলে তা লেবার লাগিয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে । মনে রাখতে হবে, আগাছা গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয় ।
- এছাড়া আগাছা দমন করার জন্য পেন্ডিমেথিলিন বা ফ্লুকোরিন বীজ লাগানোর ১ থেকে ৭ দিনের মধ্যে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে ।
সূর্যমুখী চাষে গাছ পাতলা করন
- গাছ অতিরিক্ত ঘন হয়ে গেলে স্বাস্থ্য ভালো হবে না, ফলে ফলন ভালো দিতে পারবে না । (Sunflower Cultivation in Bengali) পাতলা করে দিতে হবে ।
- চারা গজানোর ১৫ থেকে ২০ দিন পর সুস্থ চারা রেখে বাকি জীর্ণ চারাগুলো তুলে ফেলতে হবে । খেয়াল রাখতে হবে, চারা চারার দূরত্ব যেন ২৫ সেমি হয় ।
- এছাড়া চারার গোড়ায় মাটি চেপে দিতে হবে । গোড়া মজবুত করে দিতে হবে যাতে গাছ হেলে না পড়ে ।
- মাঝেমাঝে চারার গোঁড়ার মাটি আলগা করে দিতে হবে, যেন গাছ মাটি থেকে প্রয়োজনীয় সার গ্রহন করতে পারে ।
সূর্যমুখী চাষে রোগ ও পোকার উপদ্রব
সূর্যমুখী গাছে কিছু রোগ ও পোকার আক্রমন করতে দেখা যায় । তাদের লক্ষণ ও প্রতিকারের উপায়গুলি হলঃ
- সূর্যমুখী চাষে পাতা ঝলসানো রোগটি ভীষণ ভাবে ক্ষতিকর । অলটারনারিয়া হেলিয়ান্থি নামক ছত্রাকের আক্রমণে প্রথমে সূর্যমুখীর পাতায় গাঢ় বাদামি রঙের দাগ পড়ে । পরে ওই দাগ বড় হয়ে অবশেষে পাতা পুরোপুরি ঝলসে দেয় । এই রোগ দেখা দিলে রোভরাল ৫০ প্রতি লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর জমিতে স্প্রে করতে হবে এবং ফসল কাটার পর পরিত্যাক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে ।
- শিকড় পচা রোগ (Sunflower Cultivation) সূর্যমুখী চাষের আরও এক অন্তরায় । স্কেলেরোশিয়াম রলফসি নামক ছত্রাকের আক্রমণে এই রোগ হয়ে থাকে । এর ফলে গাছের গোড়া আক্রান্ত হয়ে পড়ে এবং সাদা তুলার মত ছত্রাকের মাইসেলিয়াম এবং গোলাকার দানার মত স্কেলেরোশিয়াম ছড়িয়ে পড়ে । প্রথমে দিকে গাছ নেতিয়ে পড়ে এবং কিছুদিনের মধ্যে সব গাছ শুকিয়ে মারা যায় । শেকড় পচা রোগ দেখা দিলে প্রোভেক্স ২০০ প্রয়োগ করতে হবে । জমিতে পর্যাপ্ত জল থাকতে হবে তাহলে এ রোগের বিস্তার কম হয় ।
- পোকার হাত থেকে সূর্যমুখী গাছকে রক্ষা করতে হবে । অনেক রকম পোকার আক্রমন হয়ে থাকে । বিছা পোকা, জামিরা পোকা, শোষক পোকা, জাব পোকা ইত্যাদি । পোকা আক্রমন করার সাথে সাথে পাতাসহ পোকা সংগ্রহ করতে হবে এবং তা মেরে ফেলতে হবে । তাছাড়া অ্যাকতারা ০.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে অথবা ইন্ট্রাপিড ১.৫ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করলে উপকার পাওয়া যাবে ।
- সূর্যমুখীর দানা তৈরি হলে লেদা পোকা ও শুয়ো পোকার আক্রমন দেখা যায় । দানা খেয়ে ব্যাপক ভাবে ক্ষতি করে । প্রোফেক্স সুপার ১.৫ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে ।
- টিয়াপাখির আক্রমণ মারাত্মক ভাবে হয়ে থাকে । (Sunflower Cultivation) সূর্যমুখীর বীজ খেয়ে ফসল নষ্ট করে । জমিতে নেট দিয়ে ঘিরে অথবা পুরানো ক্যাসেটের ফিতে টানটান করে বেঁধে দিয়ে টিয়াপাখির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে । আবার টিন বাজিয়ে আওয়াজ করে টিয়াপাখি তাড়ানোর ব্যবস্থা করা যায় ।
সূর্যমুখী চাষের খরচ
Sunflower Cultivation বা সূর্যমুখী চাষের খরচ খুব বেশি হয় না । ধাপে ধাপে হিসেব করে দেখা যাক এক বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করতে কেমন খরচ পড়বেঃ
- জমিতে ৪ থেকে ৫ বার চাষ দিতে হয় । প্রতি চাষে গড়ে ৬০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা ।
- প্রথমে ১ থেকে ১.৫ টন জৈব সার দিতে হয় । তার মূল্য প্রায় ১০০০ টাকা ।
- অন্যান্য রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়ে থাকে তা মোটামুটি ১০০০ টাকার মতো হবে ।
- ৪ থেকে ৫ বার সেচ দিতে হলে প্রতি সেচ ৫০০ টাকা করে মোট ২৫০০ টাকা ।
- ৩.৫ কেজি বীজের দাম ১০০ টাকা দরে ৩৫০ টাকা ।
- লেবার নিয়ে কাজ করার জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে মোটামুটি ২০০০ টাকা ।
- (Sunflower Cultivation) মোট খরচ দাঁড়ালোঃ ৩০০০ + ১০০০ + ১০০০ + ২৫০০ + ৩৫০ + ২০০০ = ৯৮৫০ টাকা । মোটামুটি ১০০০০ টাকা ।
ফসলসংগ্রহ ও সঞ্চয়
- বীজ পোঁতার দিন থেকে পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত ৯০ থেকে ১১০ দিনের মাথায় (Sunflower Cultivation) সূর্যমুখীর বীজ সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে আদর্শ সময় ।
- যদি সঞ্চয় করে রাখার ব্যাপার থাকে, তাহলে প্রতি ৩০ কেজি সূর্যমুখী বীজের সাথে ২৫০ গ্রাম ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড মিশ্রিত করে রাখলে ৮০% থেকে বেশি জীবাণুমুক্ত থাকে প্রায় ৮ থেকে ৯ মাস ।
- তবে বর্ষাকালে দুই থেকে তিন বার সুযোগ মতো রোদ খাওয়ানো ভালো । তাহলে বীজগুলো ছত্রাক আক্রান্ত হবে না ।
সূর্যমুখী চাষে ফলন
- উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করতে পারলে প্রতি বিঘাতে ফলন ৫০০ থেকে ৬০০ কেজি হয়ে থাকে । ভালো ফলন পাওয়ার জন্য চাষের প্রতি গুরুত্ব ও যত্নবান হতে হবে । (Sunflower Cultivation) সঠিক ভাবে সূর্যমুখী চাষ করলে প্রচুর মুনাফা করা যায় ।
- ভালো ফলন পাওয়ার জন্য অবশ্যই কৃত্রিম পদ্ধতিতে পরাগ মিলন ঘটানোর ব্যবস্থা করতে হবে । কৃত্রিম ভাবে পরাগ মিলন ঘটালে কোনও ফুলই বাদ যায় না । সব ফুলেই বীজ তৈরি হয় । ফলে ফলন বৃদ্ধি পায় ।
সূর্যমুখী চাষে লাভ ক্ষতির হিসাব
(Sunflower Cultivation) সূর্যমুখী চাষে লাভের পরিমান যথেষ্ট । আর্থিক লাভের চাইতে গুরুত্বপূর্ণ হল স্বাস্থের লাভ । যারা এই তেল ভোজ্য হিসাবে ব্যবহার করে তাদের লাভই বেশি ।
- প্রতি বিঘা জমিতে মোটামুটি ৫০০ থেকে ৬০০ কেজি সূর্যমুখীর বীজ পাওয়া যায় । যদি প্রতি কেজি গড়ে ৭০ টাকা হিসাবে বিক্রি করা যায়, তাহলে মোট আয় হয় ৫০০ কেজিতে ৩৫০০০ টাকা ।
- খরচ প্রতি বিঘাতে ১০০০০ টাকা বাদ দিলে মোট লাভ দাঁড়ায়ঃ ৩৫০০০ – ১০০০০ = ২৫০০০ টাকা । এই লাভ ১০০ দিনের মধ্যে প্রতি বিঘাতে হয়ে থাকে ।
Frequently Asked Questions
সূর্যমুখী চাষ কতোটা লাভ জনক ?
ANS : সূর্যমুখী চাষ বেশ লাভ জনক । প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ২৫০০০ টাকা অনায়াসেই লাভ করা যায় । চাষিদের কাছে এই লাভ যথেষ্ট সন্তোষজনক ।
সূর্যমুখীর ব্যবহার কিসে কিসে হয়ে থাকে ?
ANS : সূর্যমুখী প্রধানত তৈলবীজ হিসাবে পরিচিত । তেল উৎপাদনেই এর ব্যবহার হয়ে থাকে । সূর্যমুখীর তেল স্বাস্থের পক্ষে ভীষণ উপকারী । এতে কোলেস্টেরল থাকে না ।
এক বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষে কি রকম খরচ হতে পারে ?
ANS : প্রতি বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করতে মোটামুটি ১০০০০ টাকা খরচ হয়ে থাকে । আবার প্রতি বিঘা জমিতে ৩৫০০০ টাকা আমদানি হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে ।
কেমন জমিতে সূর্যমুখীর চাষ ভালো হয় ?
ANS : সাধারনত উঁচু জমিতে যেখানে জল দাঁড়ায় না, তেমন জমিতে সূর্যমুখীর চাষ ভালো রকম হয়ে থাকে । সব রকম মাটিতেই এই চাষ হয়, তবে বেলে দোয়াস মাটিতে ভালো হয়ে থাকে ।
সূর্যমুখীর প্রধান শত্রু কি ?
ANS : সূর্যমুখীর প্রধান শত্রু টিয়াপাখি ও শুঁয়োপোকা । এরা দুটোই পাকা বীজ খেয়ে ফসল নষ্ট করে । তাই এদের হাত থেকে সূর্যমুখীকে রক্ষা করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা রাখতে হবে ।
সূর্যমুখীর প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য কি ?
ANS : সূর্যমুখীর প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য যার কারনে মানুষ এই ফসলকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে, টা হল এর তেলে কোলেস্টেরল থাকে না । তাই শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর জন্য অনেকেই সূর্যমুখীর তেলকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে ।
সূর্যমুখীর কোনও অংশ বাদ যায় কি ?
ANS : একদম না । সূর্যমুখী এমন একটা ফসল যার প্রতিটি অংশই চাষি ভাইদের কাজে লেগে যায় । কোনও অংশই বাতিল হয় না ।
সূর্যমুখীর কোন অংশ কি কাজে লাগে ?
ANS : সূর্যমুখীর বীজ থেকে তেল পাওয়া যায়, যেটি প্রধান অংশ যার জন্য এর চাষ হয় । তেল নিষ্কাশনের পর যে খোল পাওয়া যায় তা গবাদি পশুর খাদ্য হিসাবে বা জমিতে সার হিসাবে ব্যবহৃত হয় । এ ছাড়াও গাছের খড় গবাদি পশুর খাদ্য হিসাবে বা জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করা হয় ।
সূর্যমুখীতে পুষ্টিগুণ হিসাবে কি কি থাকে ?
ANS : সূর্যমুখীতে পুষ্টিগুণ হিসাবে ভিটামিন এ, ডি ও ই থাকে । এছাড়া লিওনেইক অ্যাসিড থাকে যা কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে ।
সূর্যমুখী কোন রোগের পক্ষে খুবই উপকারী ?
ANS : সূর্যমুখীতে কোলেস্টেরল কমানোর উপাদান থাকায় হার্ট পেশেন্টদের কাছে খুবই উপকারী । হার্ট অ্যাটাক কমাতে সাহায্য করে ।
আজ আমরা Sunflower Cultivation নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম । আগামীতে Sunflower Cultivation নিয়ে আরো নতুন নতুন আলোচনা করবো, তাই আমাদের পেজে নিয়মিত চোখ রাখুন । এই লেখাটি অনেকের কাজে লাগতে পারে তাই লেখাটি যতটুকু সম্ভব শেয়ার করুন, যাতে করে অনেকের উপকারে আসে । আমাদের সাইটটি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন নতুন নতুন বিভিন্ন তথ্য জানার জন্য । ধন্যবাদ ।