Easy Sunflower Cultivation in Bengali 2022. সূর্যমুখী চাষ পদ্ধতি

Table of Contents

Sunflower Cultivation in Bengali সূর্যমুখী চাষ পদ্ধতি

সূর্যমুখী একটি ফুল হলেও এটি আসলে তেল জাতীয় ফসল । এর বীজ থেকে তেল তৈরি করা হয়ে থাকে । (Sunflower Cultivation in Bengali) সূর্যমুখী ফুলের নিষ্কাশিত তেল পুষ্টিগুণে ভরপুর । এর বীজ থেকে প্রস্তুত হওয়া তেল ভোজ্য তেল হিসাবে ব্যবহৃত হয় । হৃদরোগীদের জন্য এর তেল খুবই উপকারী । ঘিয়ের বিকল্প হিসেবে এই তেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে ।  রান্নায় এই তেল ব্যবহার করা যায় । এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ডি ও ই ।

বহু চাষিভাই সূর্যমুখী চাষ করে উপকার পেয়েছেন । এই ফুলের চাষ করার পদ্ধতি যেমন সহজ, তেমনই এই ফুলের চাষের থেকে অর্থকরী লাভও কম নয় ।

আজ আমরা আপনাদের সাথে সূর্যমুখী চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব । এতে করে আপনারা সহজেই (Sunflower Cultivation) সূর্যমুখী চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন । দেশের বিভিন্ন জায়গায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়ে থাকে । পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়ও এর চাষ লক্ষ্য করা যায় ।

সূর্যমুখী চাষের (Sunflower Cultivation) প্রয়োজনীয়তা

যে কোনও ফসলের চাষ তার প্রয়োজন অনুসারে প্রসার লাভ করে ও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে । সূর্যমুখী এমন একটি ফসল যার গুনাগুনের শেষ নেই । তাই এই চাষের (Sunflower Cultivation) প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বেড়ে চলেছে । নিচে এর ব্যবহার ও গুনাগুন আলোচনা করা হলঃ

  1. সূর্যমুখীর তেল পুষ্টিগুণে ভরপুর । এতে লিয়োনেইক এসিড থাকে যা রক্তে কোলেস্টেরল জমতে বাধা দেয় । ফলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমে যায় ।  হার্ট পেশেন্টদের জন্য এর তেল খুবই উপকারী ।
  2. এই তেলে ক্ষতিকর ইউরিক এসিড থাকে না । ফলে মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারী একটি উপাদান ।
  3. (Sunflower Cultivation) সূর্যমুখীর বীজ খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যায় ।
  4. সূর্যমুখীর তেল ভোজ্য হিসাবে ব্যবহার করা ছাড়াও সাবান তৈরিতে এবং প্রসাধনী তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।
  5. (Sunflower Cultivation)  অন্য তৈলবীজের তুলনায় সূর্যমুখীতে অধিক পরিমানে প্রায় ৪০% থেকে ৫০% বেশি তেল পাওয়া যায় ।
  6. সূর্যমুখীর ভুষি এবং বীজ থেকে প্রাপ্ত খইল গবাদি পশুর খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যায় । এর খইলে প্রায় ৫০% থেকে ৬০% প্রোটিন থাকে, যা গবাদি পশুর স্বাস্থ্যের পক্ষে চমৎকার আহার ।
  7. গ্রাম বাংলায় সূর্যমুখীর শুকনো কাণ্ড জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে । এক কথায় বলতে গেলে সূর্যমুখীর কোনও অংশই বাদ যায় না । ফলে সূর্যমুখীকে একটি স্বাস্থ্যকর ও অর্থকরী উপকারী ফসল হিসাবে ধরে নেওয়া যায় ।

সূর্যমুখী চাষে জমি ও মাটি

যে কোনো চাষের পক্ষে জমি ও তার মাটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । জমির ধরন ও তার মাটির প্রকৃতি কেমন হবে তার উপর নির্ভর করে চাষে ফলন । সূর্যমুখীর ক্ষেত্রে জমি ও মাটি হওয়া চাই নিম্নরূপঃ

Sunflower Cultivation in Bengali
Sunflower Cultivation
  1. সাধারনত ডাঙ্গা জমিতেই এই চাষ ভালো হয় । জমি নিচু হলে, গাছের গোঁড়ায় বেশি পরিমানে জল থাকলে ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে ।
  2. প্রায় সব ধরনের মাটিতেই সূর্যমুখী চাষ করা যায় । তবে দোয়াস বা বেলে দোয়াস মাটি সূর্মুমুখী চাষের জন্য বেশি উপযোগী ।

সূর্যমুখী চাষের সময়

সব চাষের একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে । সেই সময় অনুযায়ী সেই চাষ করতে হয় । ভালো ফলন পাওয়ার জন্য সূর্যমুখীর চাষ নিচের বর্ণিত সময় অনুযায়ী করতে হবেঃ

  1. প্রায় সারা বছরই সূর্যমুখী চাষ (Sunflower Cultivation) করা যেতে পারে ।
  2. তবে অগ্রহায়ন মাস অর্থাৎ নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায় । এই সময়ের ফলন যেমন অধিক হয়, তেমনি বীজের গুনগত মান ভালো হওয়ার ফলে তেলও বেশি পাওয়া যায় ।
  3. চাইলে, এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত অর্থাৎ বৈশাখ মাসেও এর চাষ করা যেতে পারে ।
READ MORE   Easy Pudina Cultivation in Bengali 2022. পুদিনা পাতা চাষ পদ্ধতি

সূর্যমুখী চাষের উপযুক্ত প্রজাতি

র্যমুখীর অনেক প্রজাতি পাওয়া যায় । তার মধ্যে উন্নত ও উচ্চ ফলন দায়ী কিছু প্রজাতি আছে যা চাষ করে চাষি আর্থিক দিক থেকে ভালো লাভবান হতে পারে ।

যেমনঃ সিরি ৩৩৩, ব্যাট ৩৬, ব্যাট ৩৬১, কেবিএসএইচ ১, কেবিএসএইচ ২৪৪১, কেবিএসএইচ ৪৪, কেবিএসএইচ ৫৩ ইত্যাদি ।

সূর্যমুখী চাষের পদ্ধতি 

সব চাষেরই নির্দিষ্ট পদ্ধতি থাকে । সেই পদ্ধতি মেনে চাষ (Sunflower Cultivation) করলে ফলন ভালো হয় ।  সূর্যমুখী চাষের পদ্ধতি ধাপে ধাপে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ

Sunflower Cultivation in Bengali
Sunflower Cultivation in Bengali

সূর্যমুখী চাষে (Sunflower Cultivation) জমি তৈরি

সূর্যমুখী চাষে বীজ বপন একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কাজ । সূর্যমুখীর বীজ বপন করতে হলে জমি ভালো ভাবে তৈরি করে নিতে হবে । যেমনঃ

  1. প্রথমে জমির আগাছা ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে । আগাছা ফসলের ক্ষতি করে থাকে ।
  2. জমি গভীর ভাবে চাষ ও মই দিয়ে ভালো ভাবে তৈরি করে নিতে হবে । ৪ থেকে ৬ বার আড়াআড়ি চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে ।
  3. মাটি এমন ভাবে আলগা করে দিতে হবে যাতে মাটিতে প্রয়োজনীয় আলো বাতাস পর্যাপ্ত প্রবেশ করতে পারে । তাতে ফসলের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে ।

সূর্যমুখী চাষে বীজ শোধন

সূর্যমুখী বীজ বপন করার আগে সঠিক ভাবে ভালো করে শোধন করে নিতে হবে । শোধন করলে বীজ থেকে রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায় । ফলে ফসলে রোগের প্রকোপ কম থাকে ও ফলন ভালো পাওয়া যায় । বীজ শোধনের কতোগুলি নিয়ম আছে । যেমনঃ

  1. প্রথমে সূর্যমুখী বীজ ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে রেখে তারপরে ছায়াতে শুকিয়ে নিতে হবে ।
  2. বীজ শোধন করার জন্য ভিটাভেক্স ২০০ প্রতি এক কেজি বীজের জন্য ৩ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে । অথবা কার্বোন্ডাজিম ৫০% প্রতি কেজি বীজে ২ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে ।
  3. একটি বড় প্লাস্টিকের ঢাকনাযুক্ত পাত্রে  পরিমান মতো বীজ ও পরিমান মতো ঔষধ নিতে হবে ।
  4. পাত্রটির মুখ ভালো করে বন্ধ করে ঝাঁকাতে হবে । ঝাঁকিয়ে বীজ ও ঔষধ ভালো করে মিশিয়ে একদিন রেখে দিতে হবে ।
  5. একদিন এই ভাবে রেখে দিতে হবে । পরের দিন ওই বীজ জমিতে বপন করতে হবে । তাহলে বীজ ভালো জীবাণুমুক্ত হবে ।

সূর্যমুখী চাষে বীজ বপন

বীজ শোধনের পরে সেই বীজ বপন করাই হল আসল কাজ । সঠিক ভাবে নিয়ম মেনে বীজ বপন করতে হবে । নিচে সেই বিষয়ে একটা ধারনা দেওয়া হলঃ

  1. বীজ বপন খুবই সহজ কাজ । (Sunflower Cultivation) সূর্যমুখী চাষের আদর্শ নিয়ম সারি করে বীজ বোনা । সারি বিহীন ভাবে চাষ করলে ফসলের রক্ষনাবেক্ষন ও ফসল সংগ্রহ করা সমস্যা হয়ে থাকে । ফলে ফসলের ক্ষতি হয় ।
  2. সারি থেকে সারির দূরত্ব ও গাছ থেকে গাছের দূরত্ব নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সঠিক ভাবে বজায় রাখতে হবে । সারি থেকে সারির দূরত্ব কমপক্ষে ৫০ সেমি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২৫ সেমি রাখলে ভালো ।
  3. এই নিয়মে বীজ পোঁতা হলে প্রতি বিঘা জমিতে ৩ থেকে ৩.৫ কেজি বীজের দরকার পড়বে ।

সূর্যমুখীর পরিচর্যা

যে কোনও চাষেই যত্ন করা বা পরিচর্যা করা বাধ্যতামূলক । পরিচর্যার উপরই ফসলের ফলন নির্ভর করে থাকে । সূর্যমুখী চাষের ক্ষেত্রেও সঠিক পরিচর্যার প্রয়োজনঃ

সূর্যমুখী চাষে সার প্রয়োগ 

উপযুক্ত পরিমানে এবং সঠিক অনুপাতে সঠিক সার সঠিক সময়ে প্রয়োগ করতে হবে । (Sunflower Cultivation)  উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করতে হবে । যেমন,

  1. শেষ বার জমি চাষ করার সময় বিঘা প্রতি ১ থেকে ১.৫ টন জৈব সার ভালো করে মিশিয়ে দিতে হবে ।
  2. বীজ লাগানোর আগে নাইট্রোজেন ৫ কেজি, সিঙ্গেল সুপার ফসফেট ৫ কেজি, পটাশ ৫ কেজি ভালো করে মিশ্রিত করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে ।
  3. চারা গজানোর ২০ থেকে ২৫ দিন পর বিঘা প্রতি ১০ কেজি ইউরিয়া ছিটিয়ে দিয়ে সেচ দিতে হবে ।
  4. নাইট্রোজেন ২.৫ কেজি কুঁড়ি আসার সময়, আর ২.৫ কেজি ফুল ফোটা অবস্থায় প্রয়োগ করতে হবে ।
  5. কুঁড়ি অবস্থায় বোরন ২ গ্রাম ও জিঙ্ক ০.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে । এতে ফুলের বৃদ্ধি ও বীজের পুষ্টি ভালো হয়ে থাকে ।
READ MORE   Huge Profitable Capsicum Cultivation in Bengali 2022. খুব লাভজনক ক্যাপসিকাম চাষ

সূর্যমুখী চাষে সেচ প্রদান

ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে প্রয়োজনীয় সেচ অবশ্যই দিতে হবে । পুরো চাষে বেশ কয়েকবার সেচের দরকার হয়ে থাকে । জমির আর্দ্রতা সবসময় লক্ষ্য রেখে নিয়ম মতো সেচ দিতে হবেঃ

  1. প্রথম বার সেচ দিতে হবে বীজ বপন করার আগে । অর্থাৎ জমি চাষের জন্য তৈরি করার প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে । জমিতে ভালো জো আনতে হবে ।
  2. এরপর চারা গজানোর ২০ থেকে ২৫ দিন পর ইউরিয়া চাপান দেওয়ার পরও সেচ দিতে হবে ।
  3. কুঁড়ি অবস্থায় অর্থাৎ চারা গজানোর প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর সেচ দেওয়া বাধ্যতামূলক ।
  4. ফুলের চাকতি অবস্থায় সেচ দিতে হবে ।
  5. আর শেষবারের মতো সেচ দিতে হবে চারা গজানোর ৭০ থেকে ৮০ দিন পর । বীজ  পরিপক্ক হবার ঠিক আগে সেচ দিতে হবে ।
  6. তবে লক্ষ্য রাখতে জমিতে যেন জল জমে না থাকে । প্রয়োজনে নালা তৈরি করে অতিরিক্ত জল বের করার ব্যবস্থা করতে হবে ।

সূর্যমুখী চাষে আগাছা দমন

  1. জমিতে যেন আগাছা না জন্মে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে । জমি সর্বদা আগাছা মুক্ত রাখতে হবে । জমি সবসময়ই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা করতে হবে ।
  2. আগাছা জমলে তা লেবার লাগিয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে । মনে রাখতে হবে, আগাছা গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয় ।
  3. এছাড়া আগাছা দমন করার জন্য পেন্ডিমেথিলিন বা ফ্লুকোরিন বীজ লাগানোর ১ থেকে ৭ দিনের মধ্যে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে ।

সূর্যমুখী চাষে গাছ পাতলা করন

  1. গাছ অতিরিক্ত ঘন হয়ে গেলে স্বাস্থ্য ভালো হবে না, ফলে ফলন ভালো দিতে পারবে না । (Sunflower Cultivation in Bengali) পাতলা করে দিতে হবে ।
  2. চারা গজানোর ১৫ থেকে ২০ দিন পর সুস্থ চারা রেখে বাকি জীর্ণ চারাগুলো তুলে ফেলতে হবে । খেয়াল রাখতে হবে, চারা চারার দূরত্ব যেন ২৫ সেমি হয় ।
  3. এছাড়া চারার গোড়ায় মাটি চেপে দিতে হবে । গোড়া মজবুত করে দিতে হবে যাতে গাছ হেলে না পড়ে ।
  4. মাঝেমাঝে চারার গোঁড়ার মাটি আলগা করে দিতে হবে, যেন গাছ মাটি থেকে প্রয়োজনীয় সার গ্রহন করতে পারে ।

সূর্যমুখী চাষে রোগ ও পোকার উপদ্রব

Sunflower Cultivation in Bengali
Sunflower Cultivation in Bengali

সূর্যমুখী গাছে কিছু রোগ ও পোকার আক্রমন করতে দেখা যায় । তাদের লক্ষণ ও প্রতিকারের উপায়গুলি হলঃ

  1. সূর্যমুখী চাষে পাতা ঝলসানো রোগটি ভীষণ ভাবে ক্ষতিকর । অলটারনারিয়া হেলিয়ান্থি নামক ছত্রাকের আক্রমণে প্রথমে সূর্যমুখীর পাতায় গাঢ় বাদামি রঙের দাগ পড়ে । পরে ওই দাগ বড় হয়ে অবশেষে পাতা পুরোপুরি ঝলসে দেয় । এই রোগ দেখা দিলে রোভরাল ৫০ প্রতি লিটার জলের সাথে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর জমিতে স্প্রে করতে হবে এবং ফসল কাটার পর পরিত্যাক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে ।
  2. শিকড় পচা রোগ (Sunflower Cultivation) সূর্যমুখী চাষের আরও এক অন্তরায় । স্কেলেরোশিয়াম রলফসি নামক ছত্রাকের আক্রমণে এই রোগ হয়ে থাকে । এর ফলে গাছের গোড়া আক্রান্ত হয়ে পড়ে এবং সাদা তুলার মত ছত্রাকের মাইসেলিয়াম এবং গোলাকার দানার মত স্কেলেরোশিয়াম ছড়িয়ে পড়ে । প্রথমে দিকে গাছ নেতিয়ে পড়ে এবং কিছুদিনের মধ্যে সব গাছ শুকিয়ে মারা যায় । শেকড় পচা রোগ দেখা দিলে প্রোভেক্স ২০০ প্রয়োগ করতে হবে । জমিতে পর্যাপ্ত জল থাকতে হবে তাহলে এ রোগের বিস্তার কম হয় ।
  3. পোকার হাত থেকে সূর্যমুখী গাছকে রক্ষা করতে হবে । অনেক রকম পোকার আক্রমন হয়ে থাকে । বিছা পোকা, জামিরা পোকা, শোষক পোকা, জাব পোকা ইত্যাদি ।  পোকা আক্রমন করার সাথে সাথে পাতাসহ পোকা সংগ্রহ করতে হবে এবং তা মেরে ফেলতে হবে । তাছাড়া অ্যাকতারা ০.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে অথবা ইন্ট্রাপিড ১.৫ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করলে উপকার পাওয়া যাবে ।
  4. সূর্যমুখীর দানা তৈরি হলে লেদা পোকা ও শুয়ো পোকার আক্রমন দেখা যায় । দানা খেয়ে ব্যাপক ভাবে ক্ষতি করে । প্রোফেক্স সুপার ১.৫ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে ।
  5. টিয়াপাখির আক্রমণ মারাত্মক ভাবে হয়ে থাকে । (Sunflower Cultivation) সূর্যমুখীর বীজ খেয়ে ফসল নষ্ট করে । জমিতে নেট দিয়ে ঘিরে অথবা পুরানো ক্যাসেটের ফিতে টানটান করে বেঁধে দিয়ে টিয়াপাখির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে । আবার টিন বাজিয়ে আওয়াজ করে টিয়াপাখি তাড়ানোর ব্যবস্থা করা যায় ।

সূর্যমুখী চাষের খরচ  

Sunflower Cultivation বা সূর্যমুখী চাষের খরচ খুব বেশি হয় না । ধাপে ধাপে হিসেব করে দেখা যাক এক বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করতে কেমন খরচ পড়বেঃ

  1. জমিতে ৪ থেকে ৫ বার চাষ দিতে হয় । প্রতি চাষে গড়ে ৬০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা ।
  2. প্রথমে ১ থেকে ১.৫ টন জৈব সার দিতে হয় । তার মূল্য প্রায় ১০০০ টাকা ।
  3. অন্যান্য রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়ে থাকে তা মোটামুটি ১০০০ টাকার মতো হবে ।
  4. ৪ থেকে ৫ বার সেচ দিতে হলে প্রতি সেচ ৫০০ টাকা করে মোট ২৫০০ টাকা ।
  5. ৩.৫ কেজি বীজের দাম ১০০ টাকা দরে ৩৫০ টাকা ।
  6. লেবার নিয়ে কাজ করার জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে মোটামুটি ২০০০ টাকা ।
  7. (Sunflower Cultivation) মোট খরচ দাঁড়ালোঃ ৩০০০ + ১০০০ + ১০০০ + ২৫০০ + ৩৫০ + ২০০০ = ৯৮৫০ টাকা । মোটামুটি ১০০০০ টাকা ।
READ MORE   Profitable Dragon Fruit Cultivation in Bengali 2022.  লাভজনক ড্রাগন ফ্রুটের চাষ

ফসলসংগ্রহ ও সঞ্চয়

Sunflower Cultivation in Bengali
Sunflower Cultivation in Bengali
  1. বীজ পোঁতার দিন থেকে পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত ৯০ থেকে ১১০ দিনের মাথায় (Sunflower Cultivation) সূর্যমুখীর বীজ সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে আদর্শ সময় ।
  2. যদি সঞ্চয় করে রাখার ব্যাপার থাকে, তাহলে প্রতি ৩০ কেজি সূর্যমুখী বীজের সাথে ২৫০ গ্রাম ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড মিশ্রিত করে রাখলে ৮০% থেকে বেশি জীবাণুমুক্ত থাকে প্রায় ৮ থেকে ৯ মাস ।
  3. তবে বর্ষাকালে দুই থেকে তিন বার সুযোগ মতো রোদ খাওয়ানো ভালো । তাহলে বীজগুলো ছত্রাক আক্রান্ত হবে না ।

সূর্যমুখী চাষে ফলন

  1. উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করতে পারলে প্রতি বিঘাতে ফলন ৫০০ থেকে ৬০০ কেজি হয়ে থাকে । ভালো ফলন পাওয়ার জন্য চাষের প্রতি গুরুত্ব ও যত্নবান হতে হবে । (Sunflower Cultivation) সঠিক ভাবে সূর্যমুখী চাষ করলে প্রচুর মুনাফা করা যায় ।
  2. ভালো ফলন পাওয়ার জন্য অবশ্যই কৃত্রিম পদ্ধতিতে পরাগ মিলন ঘটানোর ব্যবস্থা করতে হবে । কৃত্রিম ভাবে পরাগ মিলন ঘটালে কোনও ফুলই বাদ যায় না । সব ফুলেই বীজ তৈরি হয় । ফলে ফলন বৃদ্ধি পায় ।

সূর্যমুখী চাষে লাভ ক্ষতির হিসাব

(Sunflower Cultivation) সূর্যমুখী চাষে লাভের পরিমান যথেষ্ট । আর্থিক লাভের চাইতে গুরুত্বপূর্ণ হল স্বাস্থের লাভ । যারা এই তেল ভোজ্য হিসাবে ব্যবহার করে তাদের লাভই বেশি ।

  1. প্রতি বিঘা জমিতে মোটামুটি ৫০০ থেকে ৬০০ কেজি সূর্যমুখীর বীজ পাওয়া যায় । যদি প্রতি কেজি গড়ে ৭০ টাকা হিসাবে বিক্রি করা যায়, তাহলে মোট আয় হয় ৫০০ কেজিতে ৩৫০০০ টাকা ।
  2. খরচ প্রতি বিঘাতে ১০০০০ টাকা বাদ দিলে মোট লাভ দাঁড়ায়ঃ ৩৫০০০ – ১০০০০ = ২৫০০০ টাকা ।  এই লাভ ১০০ দিনের মধ্যে প্রতি বিঘাতে হয়ে থাকে ।

Frequently Asked Questions

সূর্যমুখী চাষ কতোটা লাভ জনক ?

ANS : সূর্যমুখী চাষ বেশ লাভ জনক । প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ২৫০০০ টাকা অনায়াসেই লাভ করা যায় । চাষিদের কাছে  এই লাভ যথেষ্ট সন্তোষজনক ।

সূর্যমুখীর ব্যবহার কিসে কিসে হয়ে থাকে ?

ANS : সূর্যমুখী প্রধানত তৈলবীজ হিসাবে পরিচিত । তেল উৎপাদনেই এর ব্যবহার হয়ে থাকে । সূর্যমুখীর তেল স্বাস্থের পক্ষে ভীষণ উপকারী । এতে কোলেস্টেরল থাকে না  ।

এক বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষে কি রকম খরচ হতে পারে ?

ANS : প্রতি বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করতে মোটামুটি ১০০০০ টাকা খরচ হয়ে থাকে । আবার প্রতি বিঘা জমিতে ৩৫০০০ টাকা আমদানি হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে ।

কেমন জমিতে সূর্যমুখীর চাষ ভালো হয় ?

ANS : সাধারনত উঁচু জমিতে যেখানে জল দাঁড়ায় না, তেমন জমিতে সূর্যমুখীর চাষ ভালো রকম হয়ে থাকে । সব রকম মাটিতেই এই চাষ হয়, তবে বেলে দোয়াস মাটিতে ভালো হয়ে থাকে ।

সূর্যমুখীর প্রধান শত্রু কি ?

ANS : সূর্যমুখীর প্রধান শত্রু টিয়াপাখি ও শুঁয়োপোকা । এরা দুটোই পাকা বীজ খেয়ে ফসল নষ্ট করে । তাই এদের হাত থেকে সূর্যমুখীকে রক্ষা করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা রাখতে হবে ।

সূর্যমুখীর প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য কি ?

ANS : সূর্যমুখীর প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য যার কারনে মানুষ এই ফসলকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে, টা হল এর তেলে কোলেস্টেরল থাকে না । তাই শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর জন্য অনেকেই সূর্যমুখীর তেলকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে ।

সূর্যমুখীর কোনও অংশ বাদ যায় কি ?

ANS : একদম না । সূর্যমুখী এমন একটা ফসল যার প্রতিটি অংশই চাষি ভাইদের কাজে লেগে যায় । কোনও অংশই বাতিল হয় না ।

সূর্যমুখীর কোন অংশ কি কাজে লাগে ?

ANS : সূর্যমুখীর বীজ থেকে তেল পাওয়া যায়, যেটি প্রধান অংশ যার জন্য এর চাষ হয় । তেল নিষ্কাশনের পর যে খোল পাওয়া যায় তা গবাদি পশুর খাদ্য হিসাবে বা জমিতে সার হিসাবে ব্যবহৃত হয় । এ ছাড়াও গাছের খড় গবাদি পশুর খাদ্য হিসাবে বা জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করা হয় ।

সূর্যমুখীতে পুষ্টিগুণ হিসাবে কি কি থাকে ?

ANS : সূর্যমুখীতে পুষ্টিগুণ হিসাবে ভিটামিন এ, ডি ও ই থাকে । এছাড়া লিওনেইক অ্যাসিড থাকে যা কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে ।

সূর্যমুখী কোন রোগের পক্ষে খুবই উপকারী ?

ANS : সূর্যমুখীতে কোলেস্টেরল কমানোর উপাদান থাকায় হার্ট পেশেন্টদের কাছে খুবই উপকারী । হার্ট অ্যাটাক কমাতে সাহায্য করে ।

আজ আমরা Sunflower Cultivation নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম । আগামীতে Sunflower Cultivation নিয়ে আরো নতুন নতুন আলোচনা করবো, তাই আমাদের পেজে নিয়মিত চোখ রাখুন । এই লেখাটি অনেকের কাজে লাগতে পারে তাই লেখাটি যতটুকু সম্ভব শেয়ার করুন, যাতে করে অনেকের উপকারে আসে । আমাদের সাইটটি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন নতুন নতুন বিভিন্ন তথ্য জানার জন্য । ধন্যবাদ ।

সুপ্রিয় বন্ধুরা, আমি কিংশুক দেবনাথ (Kingshuk Debnath), এই সাইটের রূপকার ও প্রতিষ্ঠাতা (Creator & Founder) । আমি একজন লেখকও বটে । আমি বিভিন্ন প্রকারের ব্যবসা, চাষআবাদ, পেশা সম্পর্কে সব তথ্য ও তত্ত্ব তুলে ধরতে চাই । শুধু তাই নয়, অনেক নতুন ধারনা যা আপনারা ভাবেন নি বা দেখেন নি সেই সবও । আমি চাই, নতুন প্রজন্ম এবং বেকার কর্মসন্ধানী মানুষেরা নিয়মিত আমার সাইটে নজর রাখুন এবং আকর্ষণীয় ধারনাগুলি দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠা করুন...

Leave a Comment