Table of Contents
Huge Profitable Turtle Cultivation আধুনিক কচ্ছপ চাষ পদ্ধতি
কচ্ছপের কথা উঠলে আমাদের একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যেতে হয় । আমরা যে কচ্ছপের কথা বলবো সেটা আসলে Turtle এবং (Turtle Cultivation) সেটা সাধারনত জলে বাস করে । আর এক ধরনের কচ্ছপ রয়েছে যার নাম Tortoise এবং এরা জলে থাকে না শুধু ডাঙায় থাকে । বাংলায় দুটোকেই কচ্ছপ বলা হয় ।
কচ্ছপ অতি ধীর এবং শান্ত প্রাণী । কচ্ছপ চাষ (Turtle Cultivation) করেপ্রচুর পরিমানে টাকা ইনকাম করার সুযোগ উজ্জ্বল । দেখতে নিরীহ হলেও কচ্ছপ কিন্তু অনেকদিন পর্যন্ত বাঁচতে পারে ।
ভারতের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে কচ্ছপ হত্যা ও খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ । এই জলজ প্রাণীর শিকার, হত্যার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি থাকায়, ভারতে কচ্ছপের প্রজনন ও বংশবিস্তার সুষ্ঠু ভাবে হয়ে চলেছে । সৌখিন মানুষেরা কচ্ছপ পোষেন । তাই বাংলায় কোথাও কোথাও কচ্ছপ খামার (Turtle Cultivation) গড়ে উঠেছে । এই খামারগুলি প্রধানত মিষ্টি জলের কচ্ছপ প্রতিপালন করে ।
কচ্ছপ চাষে আইনি সতর্কতা
যেহেতু কচ্ছপ প্রতিপালন করা, হত্যা করা ও খাদ্য হিসাবে গ্রহন করা ভারতে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ, তাই আমাদের দেশে ব্যাপক ভাবে কচ্ছপের চাষ (Turtle Cultivation) লক্ষ্য করা যায় না । কচ্ছপের মাংসের চাহিদা কিন্তু প্রচুর । সুস্বাদু ও মনোরম । এখনও বেশির ভাগ মানুষ কচ্ছপের মাংস খেতে পছন্দ করে এবং যতো বেশী দাম হোকনা কেন কিনতে আগ্রহী ।
কচ্ছপের চাষ (Turtle Cultivation) না হওয়ার কারনে চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে ও সঙ্গে সঙ্গে দামও তড়তড় করে বেড়ে চলেছে । ফলে একটা বিরাট অংশের মানুষ এই মাংস থেকে দিনদিন বঞ্চিত হয়ে পড়ছে । যাদের সামর্থ্য আছে তারা অসৎ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অনেক বেশী মূল্য দিয়ে চুরি করে কিনে খাচ্ছে । আর এই অসৎ ব্যবসায়ীদের কারনে কচ্ছপের অস্তিত্ব দিনে দিনে বিলীন হতে চলেছে ।
এইখানেই সরকারের কাছে আমার আবেদন ও প্রস্তাব, সরকার যদি উপযুক্ত আইনগত নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির মাধ্যমে কচ্ছপের চাষ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতো, তাহলে সাধারণ মানুষ যেমন উপকৃত ও লাভবান হতো, তেমনি সরকার নিজেও লাভবান হতে পারতো । যেমনঃ
1. গ্রাম বা শহরের অনেক বেকার মানুষের জীবিকা নির্বাহ হতো । ফলে কিছুটা হলেও বেকারের সমস্যা সমাধান করা যেতো ।
2. প্রচুর উৎপাদনের কারনে কচ্ছপের দাম বৃদ্ধি পেতো না, ফলে সাধারণ মানুষের পক্ষে কচ্ছপের মাংস খাওয়া অসম্ভব থাকতো না ।
3. অধিক পরিমানে চাষ শুরু হলে অসৎ উপায়ে কচ্ছপের চোরা কারবার বন্ধ হতো । সবাই মুক্ত ভাবে কেনা বেচা করতে পারতো ।
4. অতিরিক্ত উৎপাদনের ফলে কচ্ছপের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকতো না । কচ্ছপ বিলুপ্ত প্রায় প্রাণীর আখ্যা পেতো না ।
5. কচ্ছপের চাষ সর্বসাধারণের জন্য মুক্ত হলে, চুরি করে অবৈধ চাষ হতো না । অবৈধ চাষ বন্ধ করার পিছনে সরকারের মাথাব্যাথাও থাকতো না, অতিরিক্ত ব্যয়ভারও বহন করতে হতো না ।
6. ব্যাপক ভাবে চাষ ও কেনাবেচা চললে, দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব অবশ্যই পড়বে । তার ফলে, অর্থনীতি অনেকটা চাঙ্গা হতে পারতো ।
তাই সরকারের কাছে এই ব্লগের লেখার মাধ্যমে আমার সনির্বন্ধ আবেদন, প্রাণী সম্পদ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে উপযুক্ত নিয়ন্ত্রণ ও দেখভালের মাধ্যমে সরকারী তত্বাবধানে কচ্ছপের চাষ (Turtle Cultivation) কে পোলট্রি ও ছাগলের চাষের মতো সর্বসাধারণের কাছে উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক । এর ফলে, সরকার ও চাষি উভয় পক্ষই অনেক সুফল পেতে পারে, যেমনঃ
১) সরকারী কোষাগারে অতিরিক্ত অর্থ আসবেঃ কচ্ছপ যতো বেচাকেনা হবে ও বিদেশে রপ্তানি হবে, ট্যাক্স বাবদ অতিরিক্ত অর্থ সরকারী কোষাগারে জমা পড়বে । সরকার অর্থনৈতিক সচ্ছলতা পাবে ।
২) সাধারণ মানুষের ইচ্ছা পুরন হবেঃ কচ্ছপের মাংস সহজলভ্য হয়ে যাবে, সাধারণ মানুষের মধ্যে কচ্ছপের মাংস খাওয়ার যে সুপ্ত ইচ্ছা তা খুব সহজেই পুরন করতে পারবে । সরকারের উপর জনগন প্রসন্ন হবে ।
৩) অনেক বেকারের কর্মসংস্থান হবেঃ কচ্ছপের চাষ সাধারনের জন্য মুক্ত করলে, অনেক বেকার মানুষের এই চাষ করে কর্মসংস্থান হবে, ফলে সমাজে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে আসবে । তার সুফলে অসৎ কর্ম যেমন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ইত্যাদি অনেক অংশেই কমে যাবে ।
৪) সরকারের দায়ভার কমবেঃ যতো বেকারের কর্মসংস্থান হবে, ততোই সরকারের দায়িত্বভার ও মাথাব্যাথা কমবে । বেকারেরা চাকরি দাও, কাজ দাও বলে আন্দোলন করবে না । সরকারের আর্থিক দায়ভারও কমে যাবে ।
৫) দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বেঃ যতো কচ্ছপের কেনাবেচা ও রপ্তানি চলবে, যতো টাকার কারবার বেশী হবে, ততোই ট্যাক্স বেশী জমা পড়বে ও দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব অবশ্যই পড়বে ।
৬) সরকারের একই প্রশাসন ব্যয়ের বদলে আয় দেবেঃ অবৈধ চাষকে (Turtle Cultivation business) নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারকে প্রশাসনিক শক্তি ব্যবহার করতে হয় । সেই সঙ্গে আর্থিক ব্যয়ভার বহন করতে হয় । কিন্তু কচ্ছপ চাষকে সর্বসাধারণের জন্য মুক্ত করে দিলে, একই প্রশাসনিক শক্তি বৈধ চাষকে নিয়ন্ত্রণ করবে এবং আর্থিক ব্যয়ভারের বদলে প্রচুর মুনাফা ঘরে আসবে ।
কচ্ছপ চাষের (Turtle Cultivation) উপযুক্ত স্থান
পুরনো পুকুর অথবা কচ্ছপের জন্য তৈরি নির্দিষ্ট খামারে চাষ করা হয়ে থাকে । যেমনঃ
পুকুরে কচ্ছপের চাষ
১) মজুদ পুকুরের আয়তন উপযুক্ত পরিমানে থাকলে সেখানেও কচ্ছপের চাষ করা যায় । অনেকেই মজুদ পুকুরকে এই চাষে ব্যবহার করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করছেন ।
২) পুকুরের পরিমাপ কমপক্ষে ২০০ থেকে ১০০০ বর্গমিটার এবং জলের গভীরতা মোটামুটি ১ মিটার হতেই হবে ।
৩) পুকুর পাড়ে নাইলন নেট দিয়ে শক্ত করে বেড়া দিয়ে দিতে হবে, না হলে কচ্ছপ জল থেকে উঠে বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে ।
৪) পুকুরের চারিদিকে পাড়ের মাটিতে গর্ত করে কচ্ছপ বাস করতে পারে । গর্তগুলি অনেক দূর চলে গেলে কচ্ছপ হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে । তাই সব চেয়ে ভালো হয়, পুকুরের পাড় বরাবর ইটের গাঁথনি দিয়ে পাচিল তুলে দেওয়া ।
৫) পুকুরে যেন রোদ পর্যাপ্ত পরিমানে পড়ে, সেদিকেও লক্ষ্য রাখা দরকার । (Turtle Cultivation) কচ্ছপের ঠিকঠাক বেড়ে ওঠার জন্য রোদের প্রয়োজনীয়তা একান্ত কাম্য ।
৬) পুকুরের জলে আবর্জনা বা গাছের পাতা পড়ে থাকলে চলবে না । জলকে কোনও ভাবে নোংরা হতে দিলে চলবে না । জল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে ।
খামারে কচ্ছপের চাষ
১) খামারেও কচ্ছপ চাষ করা যায় । যাদের মজুদ পুকুর নেই কিন্তু কচ্ছপ চাষের ইচ্ছা আছে, তারা বাড়িতে বা উপযুক্ত জায়গায় পরিমান মতো খামার তৈরি করে কচ্ছপ চাষ করতে পারে ।
২) খামার দুরকম ভাবে করা যায়ঃ এক, মাটির উপরে পাকা দেওয়াল দিয়ে উপযুক্ত মাপের চেম্বার তৈরি করে । দুই, মাটির নিচে উপযুক্ত সাইজের গর্ত করে । এক্ষেত্রে গর্তের চারিদিকে পাকা দেওয়াল করে দিলে ভালো হয় ।
৩) খেয়াল রাখতে হবে যাতে জলের গভীরতা কমপক্ষে এক মিটার হয় । (Turtle Cultivation) কচ্ছপের বাচ্চারা যাতে ভালোভাবে চলাফেরা ও খেলাধুলা করতে পারে ।
৪) চেম্বার বা গর্তে যেন পর্যাপ্ত রোদ পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে । রোদ ঠিকমতো না পড়লে কচ্ছপের ক্ষতি হয়ে যাবে ।
৫) ভালো করে নেট দিয়ে চেম্বার বা গর্ত ঢেকে দিতে হবে, যাতে কচ্ছপের বাচ্চারা কোনোভাবে পালিয়ে যেতে না পারে ।
৬) খামারের জল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে । দূষিত জলে কচ্ছপের (Turtle Cultivation) বৃদ্ধি ভালো হয় না এবং তা কচ্ছপের পক্ষে ক্ষতিকারক ।
৭) যেহেতু ছোট জায়গা, তাই জল শুকিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা যায় । সেই কারনে পর্যাপ্ত জল সরবরাহের ব্যবস্থা রাখতে হবে ।
৮) খামারে পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা রাখতে হবে । কোনও অবস্থাতেই খাদ্যের জন্য কচ্ছপ যেন কষ্ট না পায় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে ।
৯) (Turtle Cultivation) পুকুরে চাষের মতো করে প্রজননের জায়গা তৈরি করে দিতে হবে ।
কচ্ছপের ডিম পাড়ার পদ্ধতি
১) কচ্ছপ একটি সরীসৃপ প্রাণী । ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা তৈরি করে । প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর কচ্ছপের ডিম ফোটা নির্ভর করে ।
২) কচ্ছপ সাধারণত একসঙ্গে ২ থেকে ২০টি ডিম পেড়ে থাকে । কোনও কোনও সমুদ্রের কচ্ছপ ৩০০ রও বেশি ডিম দেয় ।
৩) কচ্ছপ সাধারণত স্থলভাগে ডিম পাড়ে । মাটিতে বা বালি খুঁড়ে ডিম পেড়ে স্ত্রী কচ্ছপ পিছনের পা দিয়ে খোঁড়া মাটি দিয়ে সেই ডিম ঢেকে দেয় ।
৪)কচ্ছপের (Turtle Cultivation) ডিম গোলাকারও হয় অথবা ক্যাপসুলের মতনও দেখতে হয় । সাদা রঙের ডিমগুলির খোলস ভীষণই শক্ত হয় ।
পোনা উৎপাদন কৌশল
কচ্ছপের (Turtle Cultivation in Bengali) প্রজননের জন্য সতর্ক হওয়া অত্যন্ত জরুরী । প্রজননের জন্য পৃথকভাবে ব্যবস্থা করার দরকার হয়ে থাকেঃ
১) কচ্ছপের প্রজননের জন্য বড় পুকুর বা জলাশয়ের প্রয়োজন ।
২) পুকুর বা জলাশয়ের এক পাড়ে ২ থেকে ৩ বর্গমিটার স্থানে ১৫ থেকে ২৫ সেমি পুরু বালি বিছিয়ে তার ১ মিটার উপরে ছাউনি লাগিয়ে কচ্ছপের প্রজননের জায়গা তৈরী করলে ভালো হয় ।
৩) জল থেকে উঁচু জায়গায় উঠে এসে প্রজনন করার জন্য কাঠের সিঁড়ি তৈরী করে দেওয়া উচিত । যাতে উঁচুতে উঠে আসতে কষ্ট না হয় ।
৪) কচ্ছপের পায়ের দাগ লক্ষ্য করে বুঝতে হবে প্রজনন হয়েছে কি না । বেশি পরিমানে পায়ের দাগ দেখে বুঝে নিতে হবে, প্রজনন হয়েছে ও প্রজনন স্থল থেকে ডিম সংগ্রহ করতে হবে ।
৫) সকালবেলায় বালির নিচ থেকে ডিমগুলি সংগ্রহ করতে হবে । নিষিক্ত ও অনিষিক্ত ডিম বোঝার জন্য কাঠের বাক্সে ডিমগুলি ১ / ২ দিন রেখে দিতে হবে ।
৬) নিষিক্ত ডিমের মাথায় সাদা মুকুট দেখা যায়, আর অনিষিক্ত ডিমের গায়ে সাদা দাগ দেখা যায় । নিষিক্ত ডিম খুঁজে নিয়ে সাদা মুকুট উপরের দিকে রেখে ৫ সেমি পুরু বালি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে । ডিমের সাদা মুকুট উপরের দিকে রাখতেই হবে, নাহলে ডিম ফোটার হার অনেকাংশে কমে যাবে ।
৭) লক্ষ্য রাখতে হবে, ডিম ফোটার জায়গায় যাতে কড়া রোদ ও বৃষ্টি না পড়ে । মোটামুটি ২৫ ডিগ্রী থেকে ৬০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডে ৫০ থেকে ৬০ দিন পর ডিম ফুটে বাচ্চার জন্ম হয় ।
৮) (Turtle Cultivation in Bengali) ডিম ফোটার স্থানে সামান্য গভীর জলাশয় তৈরী করা উচিত যাতে ডিম থেকে বাচ্চা কচ্ছপ বার হয়ে জলে নিজের আশ্রয় করে নিতে পারে ।
৯) সবে সবে ডিম ফেটে বেরিয়ে আসা বাচ্চার আয়তন ২ থেকে ৩ সেমি এবং ওজন ২ থেকে ৪ গ্রামের মধ্যে হয়ে থাকে । মাছ, কেচোঁ ও মুরগির মাংস খাদ্য হিসেবে এইসময় কচ্ছপ ছানাদের খাওয়াতে হবে ।
১০) এদের বেড়ে ওঠা জলের পরিচ্ছন্নতা এবং খাদ্যের মানের উপর নির্ভর করে । কচ্ছপ বাচ্চার দৈর্ঘ্য ১০ থেকে ১২ সেমি না হওয়া অবধি সেগুলিকে লালন জলাশয়ে রেখে দিতে হবে ।
কচ্ছপ চাষের উপযুক্ত প্রজাতি
বিশ্বজুড়ে কচ্ছপের অনেক প্রজাতি আছে । আমাদের দেশ ভারতে মোটামুটি ২৮ / ৩০ প্রকারের প্রজাতি দেখা যায় । কিন্তু সব প্রজাতি চাষের (Turtle Cultivation) পক্ষে উপযুক্ত নয় । আমাদের দেশে লাভদায়ক কিছু প্রজাতির নাম এখানে বলবো । যেমনঃ
1) Red Eared Slider 2) Indian Roofed Turtle
3) Indian Soft Shell Turtle 4) Yellow Bellied Slider
5) Golden Thread Turtle 6) Albino Soft Shell Turtle
7) Albino Red Eared Turtle 8) Reeves Turtle
9) Eastern Painted Turtle
কচ্ছপের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার
১) কচ্ছপকে (Turtle Cultivation in Bengali) স্বাস্থ্য সম্মত খাদ্য প্রদান করতে হবে । সঠিক ভাবে বেড়ে ওঠার জন্য স্বাস্থ্য সম্মত খাদ্যই প্রয়োজন ।
২) কচ্ছপের খাদ্যে চর্বির পরিমান কম থাকবে এবং কমপক্ষে ৪৫% থেকে ৫৫% প্রোটিন থাকা বাঞ্ছনীয় ।
৩) ছোট মাছ, মুরগির মাংস কচ্ছপকে খাওয়াতে হবে । নিয়মিত পুকুরে কচ্ছপের খাবার যোগান দিতে হবে ।
জলের পরিচ্ছন্নতা
১) জলের পরিচ্ছন্নতা কচ্ছপের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । দূষিত জল কচ্ছপের পক্ষে ক্ষতিকর । এমনকি মারাও যেতে পারে ।
২) কচ্ছপ চাষ করতে গেলে তাদের বাসস্থান পুকুরটিকে পরিষ্কার রাখতে হবে । (Turtle Cultivation in Bengali) লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে শ্যাওলা বা আগাছা বৃদ্ধি না পায় । জল নোংরা না হয় । জলে অপ্রয়োজনীয় কোনও কিছু যাতে না পড়ে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার ।
৩) কচ্ছপ যেহেতু বেশিরভাগ সময় জলের তলায় কাদার ভিতরে থাকে, তাই পুকুরে জৈব পচন বেশি হয়ে গেলে, অক্সিজেন কমে আসবে । ফলে জলে বিষক্রিয়ায় কচ্ছপ মারা যেতে পারে । জলকে তাই পরিষ্কার ও স্বচ্ছ রাখার চেষ্টা করতে হবে ।
কচ্ছপ চাষের সতর্কতা
সব চাষের মতোই কচ্ছপ চাষেও কিছু কিছু সতর্কতার প্রয়োজন । যেমনঃ
১) কচ্ছপ বড় হয়ে উঠলে, পুরুষ ও স্ত্রী কচ্ছপকে আলাদা স্থানে রাখা প্রয়োজন । কারণ পুরুষ কচ্ছপ স্ত্রী কচ্ছপকে আক্রমণ করে কামড়ে দিতে পারে । তাতে স্ত্রী কচ্ছপের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় ।
২) পুকুরে বা খামারে যাতে পর্যাপ্ত জল থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে । কচ্ছপ যেন ভালোভাবে সাঁতার কেটে ঘোরা ফেরা করতে পারে ।
৩) (Turtle Cultivation) পুকুর ও খামারের পাড়ে পর্যাপ্ত ডাঙা জায়গা থাকতে হবে । যখন মনে করবে তখনই কচ্ছপ ডাঙায় উঠে রোদ পোয়াবে শরীর সুস্থ রাখার জন্য ।
৪) জল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত থাকবে । প্রয়োজনে জলে ফিল্টার ব্যবস্থা রাখতে হবে । সপ্তাহে একবার জল পাল্টাতে হবে ।
৫) (Turtle Cultivation in Bengali) পুকুরে ও খামারে যেন পর্যাপ্ত রোদ পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে । শীতকালে সম্ভব হলে জলে হিটারের ব্যবস্থা করতে হবে ।
৬) কচ্ছপ যাতে কোনও ভাবে পালিয়ে না যায়, সেই দিকে গুরুত্ব দিতে হবে । তার জন্য উপযুক্ত বেড়া বা দেওয়াল তৈরি করে দিতে হবে ।
৭) জলে ও ডাঙায় কচ্ছপের লুকানোর জায়গা করে দিতে হবে । মাঝে মাঝে ওরা সেখানে গিয়ে বিশ্রাম করবে ।
৮) প্রজননের জায়গা ব্যবস্থা করে দিতে হবে । প্রজননে যেন কোনও প্রকার বাধা সৃষ্টি না হয় । প্রজনন ভালো হলে কচ্ছপের বংশ বিস্তার ভালো হবে, আর দ্রুত কচ্ছপের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে । লাভের পরিমাণও বেড়ে যাবে ।
৯) কচ্ছপদের জন্য বিশেষ চিকিৎসার খুব একটা প্রয়োজন হয় না । ওদেরকে সঠিক যত্নের মাধ্যমে রোগ ব্যাধি থেকে দূরে রাখলেই চলবে । আপনার কচ্ছপের কোনও সমস্যা দেখা দিলে প্রথমে খাবার, জল ও বাসস্থান ইত্যাদি দ্রুত নিরীক্ষণ করে কারন খুঁজে বের করুন এবং তা নিরাময় করার ব্যবস্থা করুন ।
কচ্ছপ নিয়ে ধর্মীয় ধারনা
১) সৌভাগ্য বয়ে আনবে কচ্ছপ, পুষেই দেখুন না । বাস্তুশাস্ত্র ও ফেংশুই মতে কচ্ছপের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে । জীবনে সাফল্য ও সমৃদ্ধির ছোঁয়া পেতে কচ্ছপ বিশেষ ভূমিকা পালন করে ।
২) তাছাড়া, শারীরিক ভাবেও আপনাকে অনেক সুস্থ ও সবল রাখতে পারে কচ্ছপ । জীবিত কচ্ছপ পালন করতে না পারলে কচ্ছপের মূর্তি ঘরে রাখুন । কচ্ছপের মূর্তি থেকে যে পজিটিভ এনার্জি বেরোয়, তা আপনার এবং আপনার আশপাশের মানুষের জন্য খুবই উপকারী ।
৩) হিন্দু শাস্ত্র মতে কচ্ছপ বিষ্ণুর অবতার হওয়ায় লক্ষ্মীদেবী কচ্ছপকে বিশেষ প্রীতি করেন । সেই কারণে বাড়িতে কচ্ছপ পালন (Turtle Cultivation) করলে বা ঘরে কচ্ছপের মূর্তি রাখলে তা সৌভাগ্য নিয়ে আসে ।
৪) এক বাটি জলে কচ্ছপের মূর্তি বসিয়ে রাখুন । ঘরের উত্তরদিকে এই পাত্রটি রেখে দিন । কিছুদিনের মধ্যেই পার্থক্য বুঝতে পারবেন । আপনার ঘরে ধন সম্পত্তি যেন দিন দিন বেড়ে উঠছে । আগে অর্থের যেমন অভাব অনুভব করতেন, এখন তা আর দেখা যাচ্ছে না বলে আপনার অনুভব হবে ।
কচ্ছপ চাষে খরচ ও লাভের হিসাব
কচ্ছপ চাষের খরচের হিসাব
১) কচ্ছপ চাষের প্রধান খরচ খামার বা পুকুরের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে । মজুদ পুকুর থেকে থাকলে সুবিধা হয় । কোনও খরচ করতে হয় না । তা না হলে পুকুর ভাড়া বা লিজে নিয়ে এই চাষ করা যেতে পারে । আর যদি খামার তৈরি করে নিতে হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে কমবেশি এক লক্ষ টাকার মতো খরচ হতে পারে । এটা স্থায়ী খরচ । Turtle Cultivation এক বার করলে সারা জীবন সেখানে চাষ করা যাবে ।
২) কচ্ছপের বাচ্চা না কিনে প্রাপ্ত বয়স্ক কচ্ছপ আনাই ভালো । প্রথম বছর থেকেই ডিম পাওয়া যাবে । প্রথমে কম করে শুরু করাই ভালো । সেক্ষেত্রে দুটো মেল কচ্ছপের সঙ্গে আঠারোটা ফিমেল রাখা যেতে পারে । মোট কুড়িটা কচ্ছপের দাম পড়বে ৫০০ টাকা প্রতিটি হিসাবে ১০০০০ টাকা ।
৩) কচ্ছপের খাবারের পিছনে খরচ আছে । কিছু শুকনো ফিশ ফুড বাজার থেকে কিনতে হবে । আর তাছাড়া বাড়ির অপ্রয়োজনীয় ফলমূলের খোসা এবং মাছের নাড়ি ও মাঝে মাঝে মুরগীর নাড়িভুঁড়ি কুচিকুচি করে অল্প পরিমানে দেওয়া যেতে পারে । খরচ মোটামুটি মাসে এক হাজার টাকার মতো ধরে নেওয়া যায় ।
৪) (Turtle) কচ্ছপের কোনও রোগব্যাধি নেই বললেই চলে । ফলে রোগ বা মেডিসিনের পিছনে কোনও খরচ নেই ।
৫) কচ্ছপ চাষের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হল রিটার্ন পেতে চার বছর সময় লেগে যায় । চার বছর পরে ব্যাপক ভাবে ইনকাম করা যায় । চার বছরে খাবারের পিছনে খরচ হবে মাসে ১০০০ টাকা হিসাবে মোট ৪৮০০০ টাকা ।
৬) (Turtle Cultivation) খামার বা পুকুরের খরচটা বাদ দিলে মোট খরচ দাঁড়াবেঃ ১০০০০ + ৪৮০০০ = ৫৮০০০ টাকা । আনুষঙ্গিক খরচ ধরে মোটামুটি ৭০০০০ টাকা ।
কচ্ছপ চাষের লাভের হিসাব
কুড়িটা কচ্ছপ নিয়ে শুরু কেমন লাভের পরিমান দাঁড়ায় তার একটা হিসাব এখানে দেখানো হবে । যে যতো কচ্ছপ নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে চান এবং তাতে কি লাভ আসবে তা এই হিসেব থেকেই ধারনা করে নিতে পারবেন ।
১) (Turtle) কচ্ছপ সংখ্যায় অনেক ডিম দেয় এবং বছরে এক বা দুইবার দেয় । তাই কুড়িটা কচ্ছপ এক বছরেই ৫০০ থেকে ৭০০ কচ্ছপ হয়ে যায় অনায়াসে । গড়ে ৬০০ কচ্ছপ বছরে ধরে নেওয়া যেতে পারে ।
২) চার বছর পরে ৫ম বছরে প্রথম বছরের ৬০০ কচ্ছপ থেকে ৫০০ কচ্ছপ বিক্রয় করতে পারবেন এবং ১০০ কচ্ছপ রেখে দেবেন উৎপাদনের জন্য । প্রতিটি গড়ে ৫০০ টাকা হিসাবে বিক্রয় করলে মোট আমদানি, ৫০০ * ৫০০ = ২৫০০০০ টাকা ।
৩) এই ভাবে চলবে পরবর্তী দশ বছর এবং প্রতি বছরে কম করে ২৫০০০০ টাকা করে আয় করতে পারবেন ।
৪) দশম বছরের মাথায় প্রথম বছরের রেখে দেওয়া ১০০ কচ্ছপ থেকে শুরু করে প্রতি বছর অতিরিক্ত ১০০ কচ্ছপ ডিম দেওয়ার উপযুক্ত হয়ে যাবে । তারা ডিম দিলে বছরে ৩০০০ কচ্ছপ তৈরি হবে ।
৫) তার চার বছর পরে ১০০ কচ্ছপ রেখে দিয়ে ২৯০০ কচ্ছপ বিক্রয় করা যাবে । প্রতিটি ৫০০ টাকা হিসাবে মোট ২৯০০ * ৫০০ = ১৪৫০০০০ টাকা । পরের বছর দ্বিগুণ, তার পরের বছর তিনগুন, তার পরের বছর চারগুন… এই ভাবে আপনার ইনকাম বছর বছর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকবে ।
এক সময় দেখা যাবে, আপনি বছরে কোটি কোটি টাকা আয় করছেন । অর্থাৎ Turtle Cultivation একবার খরচ করে সারা জীবন প্রচুর প্রচুর টাকা আপনি ইনকাম করতে পারবেন ।
Frequently Asked Questions
ভারতে কচ্ছপের দাম কতো ?
ANS: দামের পরিমান যদিও কচ্ছপের সাইজ ও প্রজাতির উপর নির্ভর করে, তবুও বলা যায় মোটামুটি ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকার মধ্যে থাকে ।
কচ্ছপ চাষ করা কি লাভজনক ?
ANS: হ্যাঁ বন্ধু, কচ্ছপ চাষ একটি সাংঘাতিক পরিমানে লাভজনক চাষ । যদিও এই চাষে ইনকামের মুখ দেখতে একটু সময় লাগে কিন্তু একবার ইনকাম শুরু হয়ে গেলে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করার সুযোগ থাকে ।
কচ্ছপ চাষ কি ভারতে বৈধ ?
ANS: আংশিক ভাবে অবৈধ । ভারতীয় প্রজাতির কচ্ছপের চাষ Wild Life Protection Act দ্বারা দণ্ডনীয় অপরাধ । কিন্তু বিদেশী প্রজাতির ক্ষেত্রে এই চাষে কোনও বাধা নেই । বিদেশী প্রজাতির কচ্ছপ ঘরে রাখা বা চাষ করা যেতে পারে ।
কচ্ছপ কতো সময়ে উপযুক্ত বৃদ্ধি পেয়ে থাকে ?
ANS: কচ্ছপ বলতে যেটাকে Turtle বলে সেটা ৭ থেকে ৮ বছর লাগে ডিম দেওয়ার উপযুক্ত হতে । ৩ থেকে ৪ বছরেই মাংসের জন্য তৈরি হয়ে যায় । আর যেটা Tortoise সেটা প্রায় ২০ বছর লাগিয়ে দেয় উপযুক্ত হতে ।
কচ্ছপ কি অর্থের জন্য সৌভাগ্যসূচক হয়ে থাকে ?
ANS: কচ্ছপকে সৌভাগ্যসূচক হিসাবে ধরা হয় । ফেংসুই বা ভারতীয় জ্যোতিষ মতে কচ্ছপকে সৌভাগ্যের প্রতিক অর্থাৎ অর্থ আগমনের প্রতিক হিসাবে ধরা হয়ে থাকে । জীবিত বা ধাতব যাই হোক না কেন, কচ্ছপকে অর্থ, শান্তি, স্বাস্থ্য ও উন্নতির প্রতিক হিসাবে মেনে নেওয়া হয়ে থাকে ।
কচ্ছপের আয়ুষ্কাল কত ?
ANS: জলজ কচ্ছপ সাধারণত 20-30 বছর বন্দী অবস্থায় বেঁচে থাকে । তবে অনেকেই অনেক বেশি দিন বাঁচতে পারে । কচ্ছপগুলি তাদের দীর্ঘায়ুর জন্য আরও সুপরিচিত । কিছু কচ্ছপ আনুমানিক 100 থেকে 150 বছর বেঁচে থাকে । তবে মোটামুটি জানা যায়, কচ্ছপের সর্বাধিক আয়ুস্কাল প্রায় তিনশো বছর ।
ভারতে কি বাড়িতে কচ্ছপ বড় করতে পারি ?
ANS: না পারি না । বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইন 2022-এর সর্বশেষ সংশোধনী অনুসারে, যা এপ্রিল 2023 থেকে প্রযোজ্য হয়েছে, এখন কাউকে ভারতীয় কচ্ছপের প্রজাতি বাড়িতে রাখার অনুমতি দেওয়া হবে না ।
কচ্ছপ কি খায় ?
ANS: সাধারণত, পোষা কচ্ছপ সর্বভুক, যার অর্থ তারা মাংস এবং উদ্ভিদ উভয়ই খায় । একটি সাধারণ প্রাপ্তবয়স্ক পোষা কচ্ছপের খাদ্যের মধ্যে পশু পণ্য, শাকসবজি এবং ফল অন্তর্ভুক্ত করা উচিত । প্রায় 7 থেকে 10 বছর বয়সী ছোট কচ্ছপদের সাধারণত মাংসল খাবারের একটি বড় অংশের প্রয়োজন হয় ।
কচ্ছপ কত ঘন ঘন ডিম পাড়ে ?
ANS: কচ্ছপের বেশিরভাগ প্রজাতি বার্ষিক ডিম পেড়ে থাকে । কিছু প্রজাতি প্রতি এক বছর বাদে পাড়ে এবং কিছু প্রজাতি এক মৌসুমে দুবার পাড়ে । সামুদ্রিক কচ্ছপ সাধারণত তিন থেকে চার বছরের চক্রে বাসা বাঁধে । স্ত্রীরা সাধারণত প্রতিটি বাসা বাঁধার মৌসুমে একাধিক বার ডিমের ঝাক দেয় ।
ভারতে কোন প্রজাতির কচ্ছপ বৈধ ?
ANS: ভারতে কচ্ছপ পোষা প্রাণী হিসাবে রাখা বেআইনি । এই পরিপ্রেক্ষিতে কচ্ছপ অর্জন করা থেকে বিরত থাকা ভাল । বিপরীত দিকে, ভারতে কচ্ছপ থাকা বৈধ যেটি ভারতের স্থানীয় প্রজাতি নয় মানে ভারতীয় প্রজাতি নয় । যেমন, রেড-আরন্ড স্লাইডার বা সিঙ্গাপুর কচ্ছপ ইত্যাদি বৈধ ।
আজ আমরা কচ্ছপ চাষ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম । আগামীতে কচ্ছপ চাষ (Turtle Cultivation) নিয়ে আরো নতুন নতুন আলোচনা প্রয়োজনে করবো । আমাদের কচ্ছপ চাষ সম্পর্কিত দেওয়া তথ্য যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, আমাদের সাইটটি শেয়ার করুন ও সাবস্ক্রাইব করুন । এই রকম নতুন ও অন্য রকম চাষের ধারনার আলোচনা পেতে হলে আমাদের পেজে নিয়মিত চোখ রাখুন । এই লেখাটি আপনার বন্ধুদের কাজে লাগতে পারে তাই লেখাটি যতটুকু সম্ভব শেয়ার করুন, যাতে করে অনেকের উপকারে আসে । ধন্যবাদ ।