Table of Contents
Profitable Opium Poppy Cultivation আফিম চাষ খুবই লাভজনক
ভারত ঔষধি গাছের ভাণ্ডার । এখানে যুগযুগ ধরে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গাছ (Opium Poppy Cultivation) পাওয়া যায় । তাইতো ভারতের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতি সাড়া বিশ্বে বিখ্যাত । ঔষধি গাছগুলির মধ্যে একটি হল পোস্ত বা আফিম গাছ ।
আফিম নামটি ভারতের ইতিহাসে খুবই পুরনো । মুঘল আমলেও আফিমের (Opium Poppy Cultivation) অস্তিত্ব জানা যায় । পরবর্তীতে ব্রিটিশরা রীতিমতো আফিমের চাষ করিয়ে, তার পদ্ধতিকরন ও রপ্তানি করিয়ে একচেটিয়া ব্যবসা করে গেছে এবং বিস্তর মুনাফা লুটে নিয়েছে । ভারতীয় কৃষকরা কিন্তু চাষের বিনিময়ে সেই অর্থে কিছুই পায় নি ।
পোস্ত বা আফিম (Opium Poppy Cultivation) গাছে মরফিন, কোডেইন এবং নারকোটিন নামক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পাওয়া যায় । এই উপাদানগুলি থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ তৈরি করা হয়, যা ব্যথা উপশম এবং সম্মোহনী প্রভাবের জন্য ব্যবহৃত হয় । বিশেষ করে ক্যানসারের ব্যাথা উপসমে ও কফসিরাপ তৈরিতে ব্যবহৃত হয় । এই রাসায়নিক উপাদান থেকে প্রাপ্ত মরফিন, হেরোইন নামে পরিচিত । মরফিন এবং কোডিন প্রতিস্থাপনের জন্য সিন্থেটিক ওষুধের সন্ধানের প্রচেষ্টা এখনও ফলপ্রসূ হয়নি ।
বিশ্বের অনেক দেশেই আফিম চাষের প্রচলন আছে । আফগানিস্তানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আফিমের চাষ হয় । সেখান থেকে আফিম রপ্তানি হয় অনেক দেশে । ভারতে এই চাষ মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং উত্তর প্রদেশ রাজ্যে হয় ।
আফিম বা পোস্ত (Opium Poppy Cultivation) গাছের পরিচয়
আফিম বা পোস্ত গাছের দৈর্ঘ্য তিন থেকে চার ফুট । বড় হওয়ার সাথে সাথে তারা উপরের দিকে গলদা হয়ে যায় । এদের কাণ্ড সবুজ এবং মসৃণ । এই গাছের পাতাগুলি আয়তাকৃতি বা ডিম্বাকৃতি হয়ে থাকে । গাছগুলি দেখতে অনেকটা মুলো গাছ বা সরষে গাছের মতো । তাই সরষে বা মুলো চাষের সঙ্গে আফিম বা পোস্ত(Opium Poppy Cultivation) চাষ করলে সহজে ধরতে পারা যায় না ।
ফুলগুলি সাধারণত সাদা, বেগুনি বা নীল রঙের এবং বাটি আকৃতির হয় । এই গাছগুলি গোলাকার ডালিম আকৃতির চওড়া ব্যাস যুক্ত ফল উৎপন্ন করে । এই ফলকে ডোডাও বলা হয়ে থাকে ।
এই ফল থেকে যে আঠা বা ল্যাটেক্স পাওয়া যায় তাই আফিম নামে পরিচিত । আর, এই ফলগুলি পেকে শুকিয়ে গেলে তা থেকে যে সাদা বা কালো রঙের বীজ পাওয়া যায়, এই বীজগুলিই পোস্ত নামে পরিচিত ।
আফিমের পরিচয়
আফিম বিশ্বব্যাপী আলোচিত একটি মাদকদ্রব্য । মরফিন, ল্যাটেক্স, কোডাইন এবং প্যানানথ্রিন হলো আফিম বা পোস্তর বীজ থেকে তৈরি শক্তিশালী অ্যালকালয়েড । হেরোইন মাদককেও উৎস হিসেবে একেই বিবেচনা করা হয় ।
আফিম পোড়ালে কোন ধোঁয়া হয় না, ছাইও হয় না । যদিও এটি জলে সহজেই দ্রবীভূত হয় । Opium is a drug(অফিম ইজ এ ড্রাগ)। যার কারণে চাষিদের মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের অনুমতি নিতে হয় । তার পরেই আপনি সরকারের শর্তাবলী অনুযায়ী এর চাষ করতে পারবেন ।
আফিমের রং কালো । খেতে গেলে খুব তেতো লাগে ।
বিশ্বের অনেক দেশেই আফিম থেকে তৈরি স্ম্যাক, হেরোইন, ব্রাউন সুগার এবং অন্যান্য মাদক বিক্রির জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে । আরব দেশগুলোতে এ বিষয়ে কঠোর আইন রয়েছে । আমাদের দেশে ১৯৮৫ সালের NDPS আইনে বিভিন্ন শাস্তি দেওয়া হয় । এতে ১৫ ধারায় এক বছরের কারাদণ্ড, ২৪ ধারায় ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং এক লাখ থেকে দুই লাখ টাকা জরিমানা এবং ৩১এ ধারায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে ।
পোস্তর পরিচয়
পোস্ত(Poppy Seeds) না হলে বাঙালির যেন মনটাই ঠিক ভরে না । পোস্তর দাম আগুন ছোঁয়া হলেও বাঙালির পাতে পোস্ত চাই । পোস্তর বড়া থেকে শুরু করে আলু পোস্ত হোক বা পোস্তর অন্য কোনও তরকারিই হোক না কেন, পোস্ত ছাড়া পেট আর মন কোনওটাই ঠিক ভরে না ।
পোস্ত বাঙালির প্রিয় হলেও এই চাষ একেবারেই বেআইনি । পোস্ত চাষ করে তা থেকে সংগৃহীত আঠা বা ল্যাটেক্স বিপুল দামে বিক্রি করা হয় । তা দিয়ে অবৈধ কারবারি বেড়ে ওঠে বলে পোস্ত বা আফিম চাষ বেআইনি ।
আফিম বা পোস্তর ঔষধি গুনাগুণ
কেবল মাত্র আফিম মাদক আর পোস্ত মশলা হিসাবে ব্যবহৃত হয়, তা নয় । এর ঔষধি গুন অনেক বেশী । ঔষধি গাছগুলির মধ্যে একটি বিশেষ গাছ হল পোস্ত বা আফিম গাছ ।
পোস্ত গাছে মরফিন এবং কোডিন নামক দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পাওয়া যায় । এই উপাদানগুলি থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ তৈরি করা হয়, যা ব্যথা উপশম এবং সম্মোহনী প্রভাবের জন্য ব্যবহৃত হয় । বিশেষ করে ক্যানসারের ব্যাথা উপসমে ও কফসিরাপ তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ।
ভারতে আফিম বা পোস্ত চাষ
- ভারতে আফিম বা পোস্ত (Opium Poppy Cultivation) খুবই কম পরিমানে চাষ হয়, কারন ভারতে সার্বিকভাবে আফিম চাষ করা যায় না । এর জন্য কৃষকদের সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ নারকোটিক্স থেকে অনুমতি প্রাপ্ত হতে হয় ও লাইসেন্স নিতে হয় ।
- আমাদের দেশে মাত্র তিনটি রাজ্য মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং উত্তরপ্রদেশ আফিম বা পোস্ত চাষের লাইসেন্স দিয়ে থাকে ।
- মধ্যপ্রদেশের মন্দসৌর, কোটা, ঝালাওয়ার, চিতোরগড়, ভিলওয়ারা ও রাজস্থানের প্রতাপগড় এবং উত্তরপ্রদেশের লখনউ ও বারাবাঙ্কিতে আফিম চাষ হচ্ছে । মোট চাষের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর ।
- সম্প্রতি ঝাড়খণ্ডের রাজধানী রাঁচিতে অনুমতি ছাড়া আফিম চাষের কথা জানতে পারে প্রশাসন । সাথে সাথে তদন্ত শুরু করে । আফিম থেকে মাদক তৈরি হয় বলে, অনুমতি ছাড়া চাষ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয় ।
- লাইসেন্স ছাড়া কোনো কৃষক আফিম চাষ (Opium Poppy Cultivation) করতে পারবে না । NDPS আইন, ১৯৮৫-এর ধারা ৮এর অধীনে, কৃষকদের সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ নারকোটিক্স থেকে লাইসেন্স নিতেই হবে ।
- শুধু তাই নয়, আইনে অনেক ধারা সংযুক্ত করা আছে । যে কোনো পরিস্থিতিতে কৃষকদের ওই ধারাগুলো মেনে চলতে হবে । তা না হলে, অবৈধ চাষের অপরাধে জেল ও জরিমানা দুটোই হতে পারে ।
আফিম বা পোস্ত চাষের আইনগত বৈধতা
- বিশ্বের অনেক দেশেই আফিম চাষের (Opium Poppy Cultivation) প্রচলন আছে । আফগানিস্তানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আফিমের চাষ হয় । সেখান থেকে আফিম রপ্তানি হয় অনেক দেশে ।
- পাশাপাশি, বিশ্বের অনেক দেশেই আফিম থেকে তৈরি স্ম্যাক, হেরোইন, ব্রাউন সুগার এবং অন্যান্য মাদক বিক্রির জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে । আরব দেশগুলোতে এ বিষয়ে কঠোর আইন রয়েছে ।
- আমাদের দেশে ১৯৮৫ সালের NDPS আইনে, আফিম না পোস্ত (Opium Poppy Cultivation) চাষে বিভিন্ন শাস্তির বিধান দেওয়া আছে । এতে ১৫ ধারায় এক বছরের কারাদণ্ড, ২৪ ধারায় ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং এক লাখ থেকে দুই লাখ টাকা জরিমানা এবং ৩১এ ধারায় মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে ।
পশ্চিমবঙ্গে আফিম বা পোস্ত চাষ
পশ্চিমবঙ্গে আফিম বা পোস্ত(Opium Poppy Cultivation) চাষের সরকারী অনুমতি নেই । বীরভূম জেলার বেশ কিছু জায়গা যেমন দুবরাজপুর, খয়রাশোল, সিউড়ি, মেজিয়া ইত্যাদি ব্লকে বেআইনি পোস্ত বা আফিম চাষ করতে দেখা যায় । রমরমিয়ে চলে এই চাষ । কিছু অসাধু ব্যক্তি পুলিশের নজর এড়িয়ে পোস্ত বা আফিম চাষ করে।
পোস্ত বা আফিমের (Opium Poppy Cultivation) ফল থেকে সংগৃহীত আঠা বিপুল দামে বিক্রি করা হয় । কারণ এসব থেকেই তৈরি হয় মাদকদ্রব্য । কৃষকদের মধ্যে অনেক সময় এই পোস্ত বা আফিম চাষের প্রবণতা দেখা যায় । কারণ অল্প বিনিয়োগ করে অনেক বেশি লাভের মুখে দেখা যায় এই চাষের ক্ষেত্রে ।
এই চাষ বেআইনি হওয়ার কারণে প্রশাসনিক ভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়। আর তা খতিয়ে দেখতে অভিযানে নামে বীরভূম জেলার দুবরাজপুর আবগারি দফতর ও দুবরাজপুর থানার পুলিশ। পাশাপাশি পোস্ত চাষ রুখতে এলাকায় মাইকে প্রচার করা হয় এবং সচেতনতার জন্য লিফলেট বিলি করা হয়।
পোস্ত বা আফিম (Opium Poppy Cultivation) চাষ করার সময় যদি কোনও কৃষক ধরা পড়েন তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হয় । বিঘার পর বিঘা পোস্ত বা আফিমের জমি নষ্ট করা হয় । এমনকি, কৃষকের জেল পর্যন্ত হয়ে থাকে ।
পুলিশি নজরদারি চালিয়েও রোখা যাচ্ছে না অবৈধ পোস্ত বা আফিম চাষ । দামোদরের তীরে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে মাফিয়ারা অবৈধ ভাবে পোস্ত বা আফিম চাষ করে চলেছে দীর্ঘ দিন ধরেই । প্রশাসনের নাকের ডগাতেই সেই ব্যবসা রীতিমতো ফুলে ফেঁপে উঠছে ।
শীতের শুরুতে ধান কাটার পরপরই জমিতে সর্ষে ও মুলো লাগানো হয় বেশিরভাগ জমিতে। পোস্ত চারার সঙ্গে এই দুটি চারার সাদৃশ্য থাকায় বহু চাষি সর্ষে বা মুলোর আড়ালে দেদার পোস্ত চাষ শুরু করে মাদক কারবারিদের মদতে ।
এছাড়া, ধূর্ত মাদক কারবারিরা প্রশাসনের চোখে ধুলো দিতে সরকারি জমিতেই পোস্ত চাষ শুরু করে। ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমিগুলিতে তল্লাশি হলেও সরকারি জমি চোখ এড়িয়ে যায় সরকারী আধিকারিকদের। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই চালায় বেআইনি আফিম বা পোস্তর চাষ।
আফিম চাষে সরকারের কাছে আবেদন
বেআইনি চাষের প্রতি সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকবে সেটাই স্বাভাবিক । দেশের ও জনগনের সুরক্ষার জন্য সরকারের এই ভূমিকা সর্বজন গ্রাহ্য । কিন্তু এই প্রতিবেদকের বক্তব্য একটু ভিন্ন । বেআইনি চাষকে প্রতিরোধ করার জন্য রাষ্ট্রকে যে যে ক্ষমতা, লোক বল ও মেকানিজম প্রয়োগ করতে হয়, তাতে শুধুই ব্যয়ভার বৃদ্ধি পায়, আর রাষ্ট্রের মাথা ব্যাথার কারন হয়ে দাঁড়ায় ।
তার বদলে রাষ্ট্র যদি ভেবে দেখতে পারে যে, আফিম বা পোস্তর (Opium Poppy Cultivation) মাদক প্রয়োগের পাশাপাশি ঔষধি প্রয়োগ ও মশলা হিসাবে প্রয়োগ বহুল প্রচলিত । এর বাণিজ্যিক ব্যবহারও অর্থকরী ফলদায়ী হতে পারে ।
তাই যেখানে এই চাষের (Opium Poppy Cultivation) সম্ভাবনা আছে, সেখানে যথাযতো সরকারী তত্বাবধান, নজরদারি ও কঠোর নির্দেশিকার মাধ্যমে যদি আফিম বা পোস্ত চাষকে বৈধ করে চাষিদের চাষে লাগানো হয়, তাহলে চাষি ও সরকার উভয় পক্ষেরই অর্থনৈতিক ভাবে উপকার হয় একথা নিশ্চিত । আমি স্বপক্ষে কিছু যুক্তি দেখাতে পারিঃ
1. পুলিশি তদারকি ও অভিযান চালিয়েও এই চাষ রোখা যাচ্ছে না । কারন, এই চাষে মুনাফা অনেক বেশী । তাই চাষিরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই চাষ করতে বদ্ধপরিকর । আবার চাষি মুনাফা পেলে সরকারও মুনাফা পাবে ।
2. যে যে প্রশাসনিক শক্তি ও মেকানিজম অবৈধ আফিম বা পোস্ত (Opium Poppy Cultivation) চাষকে রুখতে ব্যবহার করা হয়, এই চাষে বৈধতা আনলে, সেই সেই প্রশাসনিক শক্তি ও মেকানিজম দিয়েই তদারকি করা যেতো । শুধু তফাৎ, আগে কেবল ব্যয় হতো কিন্তু এখন শুধু আয় হবে ।
3. যদি পোস্তর কথা ভাবা হয়, পোস্ত অতি দুর্মূল্য । কিন্তু বাঙালীর পাতে পোস্ত লাগবেই । তাই এর চাষে বৈধতা আনলে, উৎপাদন যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমন এর মূল্যও কমে যাবে । পোস্ত সহজলভ্য হয়ে যাবে ।
4. আফিম বা পোস্ত (Opium Poppy Cultivation) চাষে বৈধতা আনলে, চাষিরা যখন নির্দ্বিধায় চাষ করতে পারবে, মানুষের তখন আফিম বা পোস্তর প্রতি আগ্রহও অনেক কমে যাবে । ফলে, অবৈধ মাদক কারবারিদের রমরমাও কমে যাবে ।
5. খবর বলে, সরকারি এজেন্সিগুলোর চোখে ধুলো দিয়ে সরকারি জমিতেই রমরমিয়ে চলে পোস্ত বা আফিম চাষ । পোস্ত’র আঠার সঙ্গে রাসায়নিকের মিশ্রণে কুটির শিল্পের মতো তৈরি হয় ব্রাউন সুগার। যা চড়া দামে পাচার হয় নানা জায়গায়। ব্রাউন সুগারের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকত স্থানীয় তরুণ প্রজন্ম। এই চাষকে বৈধ করে সরকারী কঠোর নির্দেশিকা ও কঠোর তত্বাবধান থাকলে, ব্রাউন সুগারের কুটির শিল্পও চলবে না, আর পাচারকারীদেরও ধান্ধা বন্ধ হতো ।
6. এনসিবির একটি তথ্য অনুযায়ী আমাদের দেশে প্রতি বছর বেআইনি পোস্ত ও তা থেকে তৈরি মাদক পাচার করে প্রায় চারশো কোটির ব্যবসা চলে । যদি এই চাষ (Opium Poppy Cultivation) বৈধ করা হয়, তাহলে এই বিপুল টাকার ট্যাক্স সরকারের কাছে জমা পড়তো । সরকার আর্থিকভাবে লাভবান হতো ।
তাই সরকারের কাছে এই ব্লগের লেখার মাধ্যমে আমার সনির্বন্ধ আবেদন, কৃষি সম্পদ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে উপযুক্ত নিয়ন্ত্রণ ও দেখভালের মাধ্যমে সরকারী তত্বাবধানে আফিম বা পোস্তর চাষ(Opium Poppy Cultivation) কে আর পাঁচটা চাষের মতো সর্বসাধারণের কাছে উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক । এর ফলে, সরকার ও চাষি উভয় পক্ষই অনেক সুফল পেতে পারে, যেমনঃ
১) সরকারী কোষাগারে অতিরিক্ত অর্থ আসবেঃ আফিম ও পোস্ত যতো উৎপাদন হবে ও বিদেশে রপ্তানি হবে, ট্যাক্স বাবদ অতিরিক্ত অর্থ সরকারী কোষাগারে জমা পড়বে । সরকার অর্থনৈতিক সচ্ছলতা পাবে ।
২) সাধারণ মানুষের ইচ্ছা পুরন হবেঃ আফিম বা পোস্ত চাষ সহজলভ্য হয়ে গেলে, সাধারণ মানুষের মধ্যে পোস্ত চাষের যে সুপ্ত ইচ্ছা তা খুব সহজেই পুরন করতে পারবে । সরকারের উপর জনগন প্রসন্ন হবে ।
৩) অনেক বেকারের কর্মসংস্থান হবেঃ আফিম বা পোস্ত চাষ সাধারনের জন্য মুক্ত করলে, অনেক বেকার মানুষের এই চাষ করে কর্মসংস্থান হবে, ফলে সমাজে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে আসবে । তার সুফলে অসৎ কর্ম যেমন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ইত্যাদি অনেক অংশেই কমে যাবে ।
৪) সরকারের দায়ভার কমবেঃ যতো বেকারের কর্মসংস্থান হবে, ততোই সরকারের দায়িত্বভার ও মাথাব্যাথা কমবে । বেকারেরা চাকরি দাও, কাজ দাও বলে আন্দোলন করবে না । সরকারের আর্থিক দায়ভারও কমে যাবে ।
৫) দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বেঃ যতো আফিম বা পোস্ত কেনাবেচা ও রপ্তানি চলবে, যতো টাকার কারবার বেশী হবে, ততোই ট্যাক্স বেশী জমা পড়বে ও দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব অবশ্যই পড়বে ।
৬) সরকারের একই প্রশাসন ব্যয়ের বদলে আয় দেবেঃ অবৈধ চাষকে (Opium Poppy Cultivation) নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারকে প্রশাসনিক শক্তি ব্যবহার করতে হয় । সেই সঙ্গে আর্থিক ব্যয়ভার বহন করতে হয় । কিন্তু আফিম বা পোস্ত চাষকে সর্বসাধারণের জন্য মুক্ত করে দিলে, একই প্রশাসনিক শক্তি বৈধ চাষকে নিয়ন্ত্রণ করবে এবং আর্থিক ব্যয়ভারের বদলে প্রচুর মুনাফা ঘরে আসবে ।
আফিম বা পোস্ত (Opium Poppy) চাষের পদ্ধতি
আফিম বা পোস্ত চাষের উপযুক্ত সময়
আফিম চাষের (Opium Poppy Cultivation) জন্য বীজ বপনের উপযুক্ত সময় অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাস । এই সময়ের আবহাওয়া আফিম বা পোস্ত চাষের সবচেয়ে বেশী ফলন বান্ধব হয়ে থাকে । অন্য সময়ে চাষ করলে, ফসলের ফলন ও গুনগত মান ভালো হয় না ।
আফিম চাষের জলবায়ু এবং মাটি
- আফিম একটি নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু ফসল । তবে গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে শীতকালে সফলভাবে আফিম চাষ (Opium Poppy Cultivation) করা যায় ।
- তুষারময় বা শুষ্ক তাপমাত্রা, মেঘলা বা বৃষ্টির আবহাওয়া আফিম চাষের (Opium Poppy Cultivation) পক্ষে মোটেও ভালো না । এমন আবহাওয়া শুধু উৎপাদনই কমায় না, আফিমের গুণগত মানও কমিয়ে দেয় ।
- একটি সুনিষ্কাশিত, অত্যন্ত উর্বর হালকা দোআঁশ মাটি যার সর্বোত্তম pH প্রায় 7.0 থাকে আফিম (Opium Poppy Cultivation) উৎপাদনের জন্য উপযোগী ।
আফিম চাষের জমি প্রস্তুতকরন
- অন্যান্য সকল চাষের মতোই আফিম চাষের (Opium Poppy Cultivation) জমিতে ৩ থেকে ৪ বার লাঙল দিতে হবে যাতে মাটি ভালোভাবে ঝুরঝুরে হয় । ঝুরঝুরে মাটিতে যেকোনো ফসল ভালোভাবে উৎপাদন করা যায় ।
- জমিতে উপযুক্ত পরিমানে গোবর সার বা ভার্মি কম্পোস্ট সার অথবা যে কোনও জৈব সার ভালো করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে ।
- জমিতে উপযুক্ত জো এলে তবেই লাঙল দেওয়া উচিত । যদি দেখা যায় জমি কড়া হয়ে গেছে, তাহলে হালকা সেচ করে নিতে হবে ।
- মাটি ঝুরঝুরে হলে জমিতে সুবিধাজনক আকারের বেড প্রস্তুত করে নিতে হবে । তার ফলে ফসলের দেখভাল সুবিধাজনক হয় ।
- রাসায়নিক সার সরকারী নির্দেশ মতো অল্প পরিমানে ব্যবহার করতে হবে ।
আফিমের বীজ শোধন ও বপন
- বীজ বপনের আগে ভালো করে শোধন করে নিতে হবে । শোধিত বীজে রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমন কম হয়ে থাকে । ফলে ফসলের মান ভালো হয় ।
- ডাইথেন M45 ছত্রাকনাশক ৪ গ্রাম প্রতি কেজি হিসাবে ব্যবহার করে বীজ শোধন করা হয় ।
- বীজ সম্প্রচারের আগে সাধারণত সূক্ষ্ম বালির সাথে মিশ্রিত করা হয়, যাতে বীজটি বিছানা জুড়ে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে । তারফলে সর্বত্র সমানহারে চারা উৎপাদন হবে ও চারাদের স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে ।
- মাটির আর্দ্রতার উপর নির্ভর করে অঙ্কুরোদগম হতে পাঁচ থেকে দশ দিন সময় লাগে । অর্থাৎ দশবারো দিনের মধ্যেই বেড সবুজ হয়ে উঠবে ।
আফিম চাষের পরিচর্যা
অন্যান্য ফসলের মতো আফিম বা পোস্ত (Opium Poppy Cultivation) চাষেও উপযুক্ত পরিচর্যার দরকার । পরিচর্যা ঠিকঠাক হলে ফলনও বৃদ্ধি পেয়ে থাকে ।
আফিমের চারা পাতলা করন
গাছের অভিন্ন এবং ভালো বৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য পাতলা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসলের কার্যকলাপ । এটি সাধারণত করা হয় যখন গাছের উচ্চতা ৫ থেকে ৬ সেমি হয় এবং গাছে ৩ থেকে ৪টি পাতা থাকে। গাছটি ১৪ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার উচ্চতা না হওয়া পর্যন্ত পাতলা করা হয়। এই প্রক্রিয়াটি ৩ থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে করা হয়।
আফিম (Opium Poppy) চাষে সার প্রয়োগ
- আফিমে (Opium Poppy Cultivation) সার ব্যবহারে উল্লেখযোগ্য ভাবে সাড়া দেয় । আফিমের ফলন এবং গুণমান উভয়ই বৃদ্ধি করে ।
- প্রথমে চাষের সময় সম্প্রচার পদ্ধতিতে 20 থেকে 30 টন প্রতি হেক্টর হারে এফওয়াইএম দেওয়া হয় ।
- এছাড়াও, প্রতি হেক্টরে 60 থেকে 80 কেজি N এবং 40 থেকে 50 কেজি P2O5 সুপারিশ করা হয় । এতে পটাশ ব্যবহার করা হয় না ।
- N এর অর্ধেক এবং সম্পূর্ণ P জমিতে বসানো পদ্ধতিতে বপনের সময় দেওয়া হয় এবং অবশিষ্ট অর্ধেক N রোজেট পর্যায়ে দেওয়া হয় ।
আফিম চাষে সেচ প্রদান
- ভাল আফিম (Opium Poppy Cultivation) ফলন পেতে একটি সতর্ক সেচ ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য ।
- একটি হাল্কা সেচ বীজ বপনের সাথে সাথে দিতে হবে এবং বীজ অঙ্কুরোদগম শুরু হওয়ার ৭ দিন পর দ্বিতীয় হালকা সেচ দিতে হবে ।
- 12 থেকে 15 দিনের ব্যবধানে তিনটি সেচ দিতে হবে প্রাকফুলের পর্যায় পর্যন্ত এবং তারপরে ফুল ও ক্যাপসুল গঠনের পর্যায়ে সেচের ফ্রিকোয়েন্সি 8 থেকে 10 দিনে কমে যায় ।
- সাধারণত, পুরো ফসলের সময়কালে 12 থেকে 15টি সেচ দেওয়া হয় ।
- ফ্রুটিং এবং ল্যাটেক্স নিষ্কাশন পর্যায়ে আর্দ্রতা হ্রাস উল্লেখযোগ্য ভাবে ফলন হ্রাস করে ।
আফিমের ফসল সংগ্রহ
আফিমের ফসল দুই ভাবে সংগ্রহ করতে হয় । এখানেই আফিম চাষের (Opium Poppy Cultivation) মজা । একই চাষে দুই ধরনের ফলন পাওয়া যায়- ল্যাটেক্স ও পোস্ত । ল্যাটেক্স সংগ্রহ করাকে বলে ল্যান্সিং, আর পোস্ত অন্যান্য ফসলের মতোই সাধারণ ভাবে ফসল কেটে সংগ্রহ করা হয় । এই দুই পদ্ধতি নিচে আলোচনা করা হলঃ
ল্যান্সিং এবং ল্যাটেক্স সংগ্রহ
- আফিম (Opium Poppy Cultivation) বপনের 95 থেকে 115 দিনের মধ্যে ফুল ফোটা শুরু হয় । ফুল ফোটার 3 থেকে 4 দিন পর ফুলের পাপড়ি ঝড়ে পড়া শুরু হয় ।
- পাপড়ি ঝড়ে গেলে আস্তে আস্তে ফল তৈরি হয়, যা ক্যাপসুল বা ডোডা নামে পরিচিত । ক্যাপসুল বা ডোডাগুলি 15 থেকে 20 দিন পরে পরিপক্ক হয়ে ওঠে । এই পর্যায়ে ল্যান্সিং করলে সর্বোচ্চ ল্যাটেক্স রিলিজ করে ।
- ক্যাপসুল বা ডোডার বৃত্তে সবুজ থেকে হালকা সবুজ রঙের পরিবর্তন দ্বারা নিশ্চিত করা হয় যে, ক্যাপসুল বা ডোডা ল্যাটেক্স সংগ্রহ করার উপযুক্ত । এই পর্যায়কে বলা হয় শিল্প পরিপক্কতা । তখনই ল্যান্সিং করা হয় ।
- ল্যান্সিং হল, একটি ধারালো সূক্ষ্ম ছুরি দিয়ে ক্যাপসুল বা ডোডার গায়ে সমান দুরত্বে চার পাঁচটি রেখা টেনে 1 থেকে 2 মিমি গভীর করে কেটে দেওয়া । খুব বেশী গভীর বা খুব কম গভীর কাটা উপযুক্ত হয় না । আগের দিন অপরাহ্নে এই কাজটি করতে হয় । সারারাত এই কাটা জায়গা দিয়ে এক ধরনের আঠা বা তরল বের হয়ে জমাট বেঁধে থাকে । এটাই হল আফিম ।
- পরদিন ভোরবেলা সূর্য ওঠার আগে হালকা ছুরি আকৃতির একটি যন্ত্র দিয়ে সেই জমাট বাঁধা আঠা বা তরলকে কেখে তুলে নিতে হয় । দুইতিন দিন অন্তর প্রতিটি ক্যাপসুল বা ডোডায় ল্যান্সিং করা যেতে পারে ।
ফসল কাটা ও পোস্ত বীজ সংগ্রহ
- শেষ ল্যান্সিং এ ক্যাপসুল বা ডোডা থেকে ল্যাটেক্স নিঃসরণ বন্ধ হয়ে গেলে প্রায় 20 থেকে 25 দিনের মতো লাগে ফসল শুকাতে ।
- ফসল (Opium Poppy Cultivation) পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে ক্যাপসুলগুলি ভেঙে নিয়ে নেওয়া হয় আর গাছের অবশিষ্ট অংশ কেটে ফেলা হয় ।
- সংগৃহীত ক্যাপসুলগুলি খোলা রোদে শুকানো হয় । ভালোভাবে শুকিয়ে গেলে, কাঠের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ক্যাপসুলগুলো ভেঙ্গে বীজ আলাদা করা হয় । সেই বীজ সংগ্রহ করা হয় ।
- আফিমের (Opium Poppy Cultivation) ফলন 50 থেকে 60 কেজি প্রতি হেক্টর ।
আফিম চাষে আনুমানিক খরচের হিসাব
আফিম বা পোস্ত (Opium Poppy Cultivation) চাষের হেক্টর প্রতি খরচ আনুমানিক ধারনা অনুযায়ী দেওয়া হল । খরচের হিসাব ঠিক এই রকমঃ
- ৩ থেকে ৪ বার চাষ দিতে মোট প্রায় ১০০০০/- টাকা ।
- সেচ দিতে খরচ মোটামুটি ৮০০০/- টাকা ।
- সার প্রয়োগ করতে ব্যয় হবে মোটামুটি ৩০০০০/- টাকা ।
- বীজের কোনও খরচ নেই । সরকারী চুক্তিতে বীজ দেওয়া হবে ।
- লেবার ও ফসল দেখভালের জন্য খরচ মোটামুটি ৩০০০০/- টাকা ।
- তাহলে, দেখা যাচ্ছে আফিম বা পোস্ত (Opium Poppy Cultivation) চাষ করতে গেলে একজন চাষির প্রতি হেক্টরে খরচ হবে মোট ৮০০০০/- টাকার মতো আনুমানিক ।
আফিম চাষে লাভ ও ক্ষতির হিসাব
সরকারের স্বীকৃতি ও নিয়ম মেনে এই চাষ করলে সহজেই আফিম বা পোস্ত (Opium Poppy Cultivation) চাষ থেকে লাখ লাখ টাকা আয় করা যায়, কারণ বাজারে আফিম ও পোস্ত দুটোরই চাহিদা অনেক বেশি । লাভের হিসাবটা দেখা যাকঃ
- সরকারী নিয়ম অনুযায়ী প্রতি হেক্টর চাষের জন্য ৪.২ থেকে ৫.৪ কেজি ল্যাটেক্স সরকারী দপ্তরে জমা করতে হয় । মোটামুটি ৫ কেজি ধরে নিলে, প্রতি কেজি ১৮০০/- টাকা হিসাবে ৯০০০/- টাকা পাওয়া যায় ।
- ল্যাটেক্স তোলার পরে ডোডাগুলোর বীজই পোস্ত । এই পোস্ত বাজারে চাষি বিক্রি করতে পারে ৪০০০০/- থেকে ১২০০০০/- টাকা কেজি দরে ।
- মোটামুটি ৫০০০০/- টাকা প্রতি কেজি ধরলে, প্রতি হেক্টরে কমপক্ষে ৩০ কেজি পোস্ত উৎপাদন হবে । তাহলে মোট আমদানি হবে ১৫ লক্ষ টাকা । এখানেই এই চাষটির মজা ।
আফিম বা পোস্ত চাষে লাইসেন্স পাওয়ার উপায়
- সেন্ট্রাল নারকোটিক্স ডিপার্টমেন্ট লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া চালায় এবং আফিম উৎপাদনও সংগ্রহ করে । যতো ল্যাটেক্স উৎপাদন হবে এই দপ্তরকেই জমা করতে হবে ।
- সাধারণত নতুন চাষিদের এই লাইসেন্স দেওয়া হয় না । পুরনো লাইসেন্সই নবীকরণ করা হয় ।
- যোগ্য কৃষকদের এক বছরের জন্য লাইসেন্স দেওয়া হয় এবং এক বছর পর আবার নতুন লাইসেন্স দেওয়া হয় ।
- চাষি কোনও রকম ভাবে চালাকি বা মিথ্যার আশ্রয় নিলে সঙ্গে সঙ্গে তার লাইসেন্স বাতিল করে আফিম বা পোস্ত ক্ষেত ধ্বংস করে দেওয়া হয় । এই ক্ষেত্রে কোনরকম সহানুভূতি দেখানো হয় না ।
- চাষিকে হেক্টর প্রতি ৪.২ থেকে ৫.৪ কেজি ল্যাটেক্স সরকারী দপ্তরে জমা করতে হবে । এই সীমার নিচে হলে তার লাইসেন্স বাতিল হবে ।
- লাইসেন্সের বর্ণিত শর্ত অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে হবে । অন্যথায় লাইসেন্স বাতিল এবং সঙ্গে জরিমানাও হতে পারে ।
Frequently Asked Questions
আফিম আসলে কি ?
ANS: আফিম এক ধরনের বিশ্ব পরিচিত মাদক । কিন্তু এর মধ্যে মাদক গুনের পাশাপাশি ঔষধি গুন যথেষ্ট আছে । তাই এই কৃষি পণ্যটি বিপুল মূল্যবান । মাদক হিসাবে বেশী পরিচিত কিন্তু ওষধি হিসাবে বেশী ব্যবহৃত ।
ভারতে কোথায় আফিম চাষ হয়ে থাকে ?
ANS: ভারতে আইন সম্মত ভাবে আফিম বা পোস্তর চাষ হয় তিনটি রাজ্যে- উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থান । এছাড়া অন্য রাজ্যে এই চাষ বৈধ নয় । কিন্তু কমবেশি অনেক রাজ্যেই আফিমের চাষ হয়ে থাকে ।
আফিমের ঔষধি গুন আছে কি ?
ANS: আফিমের ঔষধি গুন যথেষ্ট । এতে যে মরফিন থাকে তা দিয়ে ব্যথা উপশমের ঔষধ তৈরি হয়ে থাকে । আর কোডেইন থেকে কফসিরাপ তৈরি হয় ।
কোন সময় আফিম চাষ ভালো হয় ?
ANS: সাধারনত, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর । এর মধ্যেই আফিম বা পোস্তর চাষ সম্পন্ন করতে হবে ।
আফিম ও পোস্তর মধ্যে তফাৎ কি ?
ANS: আফিম হল আফিম গাছের ফলের থেকে যে আঠা বের করা হয় সেটা । আর পোস্ত হল আফিম গাছের পাকা ফলের বীজ । দুটোই মহা মূল্যবান ।
আফিম চাষের জন্য কোথা থেকে লাইসেন্স নিতে হয় ?
ANS: সেন্ট্রাল নারকোটিক্স ডিপার্টমেন্ট থেকে লাইসেন্স দেওয়া হয় । নতুন লাইসেন্স খুব কম দেওয়া হয় । পুরনো লাইসেন্সকেই নবীকরণ করা হয় ।
সরকারী তত্তাবধানে, উপযুক্ত নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে এই চাষ হয়ে থাকে । যেহেতু মাদকের ব্যাপার, তাই এর অপব্যবহার বেশী হওয়ার আশঙ্কা থাকে ।
পশ্চিমবঙ্গে আফিম চাষ বৈধ কি ?
ANS: না । পশ্চিমবঙ্গে আফিম বা পোস্ত চাষ বৈধ নয় । এখানে কেউ আফিম চাষ করার অনুমতি পায় না । কিন্তু, খবরে দেখা যায় কয়েকটি জেলায় লুকিয়ে অবৈধ ভাবে এই চাষ হয়ে চলেছে । এর মানে হল পশ্চিমবঙ্গ আফিম চাষের জন্য উপযুক্ত ।
পশ্চিমবঙ্গে আফিমের চাষ হয় কি ?
ANS: পশ্চিমবঙ্গে আফিম বা পোস্ত চাষ বৈধ নয় । তবুও, পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে অবৈধ ভাবে অনেক জায়গায় চাষ হয়ে থাকে । বিশেষ করে, বীরভূমের দামোদরের উপত্যকায় অনেক জায়গায় চাষ হয়ে থাকে । এই অবৈধ চাষকে রুখতে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে ।
একই প্রসাশনিক ব্যবস্থাপনায় যদি আফিম চাষটিকে সরকার বৈধতা দিতো, তাহলে সরকার পক্ষ লাভবান হতো এবং সাথে সাথে অনেক বেকারের জীবিকার ব্যবস্থা হতো । দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়তো ।
আফিমে কি কি রাসায়নিক পদার্থ থাকে ?
ANS: আফিমে মরফিন, কোডেইন ও থেমাইন নামক রাসায়নিক থাকে । এই রাসায়নিক পদার্থগুলোই আফিমের মূল্য নির্ধারণের চাবিকাঠি ।
ল্যাটেক্স কি ?
ANS: ল্যাটেক্স হল আফিম বা পোস্ত গাছের ফল থেকে প্রাপ্ত আঠা । যা থেকে পরবর্তীতে অনেক ধরনের মাদক ও ওষুধ তৈরি হয় । এই ল্যাটেক্সের জন্যই আফিম এতো মূল্যবান ।
আজ আমরা আফিম বা পোস্ত চাষ (Opium Poppy Cultivation) নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম । আগামীতে আফিম বা পোস্ত চাষ নিয়ে আরো নতুন নতুন আলোচনা করবো, তাই আমাদের পেজে নিয়মিত চোখ রাখুন । এই লেখাটি অনেকের কাজে লাগতে পারে তাই লেখাটি যতটুকু সম্ভব শেয়ার করুন, যাতে করে অনেকের উপকারে আসে । আমাদের সাইটটি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন নতুন নতুন বিভিন্ন তথ্য জানার জন্য । ধন্যবাদ ।