Table of Contents
High Profitable Deer Farming. হরিণ পালন খুবই লাভজনক
বাণিজ্যিক হরিণ চাষ (Deer Farming) একটি চমত্কার নতুন ব্যবসার ধারণা । হরিণ পালন করা খুবই সহজ এবং তাদের সহজেই রক্ষণাবেক্ষণ করা যায় । এগুলি অন্যান্য গৃহপালিত প্রাণীর মতোই । হরিণ চাষের ব্যবসা উচ্চ মুনাফা অর্জন এবং একটি ভাল কর্মসংস্থানের উত্স হিসাবে দুর্দান্ত হতে পারে ।
হরিনের জনপ্রিয় প্রজাতি হল এলক, মুস, রেইনডিয়ার বা বিশেষ করে সাদা লেজযুক্ত হোয়াইটটেল হরিণ পশুপালন হিসাবে উত্থিত হয়।
বাণিজ্যিকভাবে হরিণের চাষ (Deer Farming) জনপ্রিয়তা লাভ করছে প্রধানত এর মূল্যবান মাংস, চামড়া, শিং ইত্যাদির জন্য । হরিণের বড় আকারের বাণিজ্যিক চাষের উৎপত্তি মূলত নিউজিল্যান্ডে এবং সেই দেশে এখনও বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত হরিণ চাষ শিল্প রয়েছে।
হরিণ প্রকৃতির সবচেয়ে সুন্দর বন্য প্রাণীদের মধ্যে একটি এবং সব ধরনের মানুষ তাদের ভালোবাসে, বিশেষ করে তাদের সৌন্দর্য এবং কোমল প্রকৃতির জন্য। প্রজাতি ভেদে হরিণের শরীর অনেক রঙিন হয় ।
হরিণ একটি বন্য প্রাণী এবং বন্য অঞ্চলে এদের সংখ্যা ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে । তাই বাণিজ্যিকভাবে হরিণ পালন (Deer Farming) করে আমরা একটি ভালো আয়ের উৎস তৈরি করতে পারি এবং একই সঙ্গে বিলুপ্তপ্রায় এই প্রাণীটিকে বাঁচাতে পারি ।
হরিনের কিছু বৈশিষ্ট্য
হরিণ খুবই দৃষ্টিনন্দন প্রাণী । দেখতে সবার ভালো লাগে । হরিনের মধ্যে অনেক ধরনের বৈশিষ্ট্য দেখা যায় । (Deer Farming Business) সেগুলি হলঃ
১) সমস্ত হরিণের (Deer) স্বাভাবিক দাঁত 32 বা 34 টি ।
২) সমস্ত হরিণ চার আঙ্গুলযুক্ত । দুটি মাঝখানের আঙ্গুল একটি ক্লোভেন খুর তৈরি করে।
৩) পাকস্থলী চার প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট ।
৪) সমস্ত হরিণ চোখের সামনে অবস্থিত মুখের উপর একটি গ্রন্থি ধারণ করে যা একটি তীব্র গন্ধ নিঃসরণ করে ।
৫) কস্তুরী হরিণ (Deer) বাদে বিভিন্ন হরিণ প্রজাতির পুরুষদের শিং আছে। শুধুমাত্র রেইনডিয়ারে স্ত্রীদের শিং থাকে।
৬) স্ত্রী হরিণের চারটি টিট থাকে এবং সাধারণত একটি, কদাচিৎ দুটি বাচ্চা উৎপন্ন করে।
৭) মহিলারা সাধারণত পুরুষদের তুলনায় কিছুটা ছোট এবং আরও সূক্ষ্মভাবে নির্মিত হয়।
৮) সাধারণত বছরে দুটি পেলেজ পরিবর্তন ঘটে, শীতের আবরণ গ্রীষ্মের চেয়ে দীর্ঘ হয়।
বন্য হরিণ বনাম গৃহপালিত হরিণ
বন্য হরিণ
বন্য হরিণ মুক্ত ও সীমাহীন বনে থাকে । বনের বিস্তৃত এলাকায় চলাচল করে । গাছের পাতা, ঘাস, নানান ফলমূল আহার করে থাকে । যেহেতু প্রাকৃতিক পরিবেশে এরা বড় হয়ে ওঠে, দৌড়ঝাঁপ করার জন্য বিস্তৃত এলাকা পেয়ে থাকে, রোদ বৃষ্টি ও মুক্ত বাতাসে বেড়ে ওঠে, তাই এদের শরীর শক্ত ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশী । গাছের নিচে ও ঝোপ জঙ্গলে এদের জীবন যাপন ।
গৃহপালিত হরিণ
গৃহপালিত হরিণ নির্দিষ্ট বদ্ধ এলাকায় বাস করে । সীমাবদ্ধ স্থানে এদের চলাচল করতে হয় । গাছের পাতা, ঘাস, নানান ফলমূল এদের খাদ্য হিসাবে দেওয়া হয় । যেহেতু কৃত্রিম পরিবেশে এরা বড় হয়ে ওঠে, দৌড়ঝাঁপ করার মতো পর্যাপ্ত স্থান পায় না, রোদ বৃষ্টি ও মুক্ত বাতাস সেভাবে পায় না, তাই এদের শরীর তুলনামুলক ভাবে কম শক্ত ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম হয়ে থাকে । নির্দিষ্ট ঘরে ও কৃত্রিম জায়গায় এদের জীবন যাপন ।
হরিণ চাষ (Deer Farming) ব্যবসার সুবিধা
আপনার কেন হরিণ চাষের (Deer Farming) ব্যবসা শুরু করা উচিত তার অনেকগুলি ভাল কারণ রয়েছে। এখানে আমরা বাণিজ্যিক হরিণ চাষ ব্যবসার শীর্ষ সুবিধা সম্পর্কে বর্ণনা করার চেষ্টা করছিঃ
১) সাধারণত হরিণ অন্যান্য গবাদি পশু যেমন ছাগল, গরু বা ভেড়ার মতো ঘাস, পাতা বা শস্য খায়। তাই তাদের খাওয়ানো খুবই সহজ।
২) সারা বিশ্বের কিছু সমাজে হরিণ চাষকে (Deer Farming) আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয় । আপনার সম্মান বেড়ে যাবে । অল্প সময়ের মধ্যেই আপনি আপনার এলাকায় খুব জনপ্রিয় এবং বিখ্যাত হয়ে উঠতে পারেন ।
৩) হরিণ চারন ক্ষেত্রের দৃশ্য বা স্বয়ং হরিণ সকল বয়স্ক মানুষের জন্য, বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য বিনোদনের একটি বড় উৎস।
৪) হরিণের চামড়া ও শিং খুবই মূল্যবান । ধনী ব্যক্তিরা তাদের ঘর সাজানোর জন্য চামড়া ও শিং দুটোই ব্যবহার করেন।
৫) অনেকে হরিণের চামড়া দিয়ে অনেক মূল্যবান পণ্য তৈরি করে । আমেরিকা এবং ইউরোপীয় দেশগুলিতে এই সব পন্যের প্রচুর চাহিদা রয়েছে ।
৬) হরিণের মাংস খুবই সুস্বাদু এবং মুখরোচক । সারা বিশ্বে এর ব্যাপক চাহিদা এবং উচ্চ মূল্য রয়েছে । সুতরাং বিপুল লাভের সম্ভাবনা ।
৭) আপনি হরিণ পালন (Deer Farming) শুরু করতে পারেন, যদি আপনার গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি পালনের অভিজ্ঞতা থাকে। হরিণ চাষ ছাগল পালনের মতো খুব সহজ।
৮) অন্যান্য গবাদি পশুর তুলনায় হরিণে রোগ কম হয়। বাণিজ্যিক ভাবে হরিণ পালন (Deer Farming) করে আপনি একটি স্থায়ী আয় ও কর্মসংস্থানের উৎস করতে পারেন। বেকার শিক্ষিত যুবকরা সহজেই এ ব্যবসা শুরু করতে পারে।
কিভাবে হরিণ চাষের ব্যবসা শুরু করবেন
একটি বাণিজ্যিক হরিণ চাষের (Deer Farming) ব্যবসা শুরু করা অন্য যে কোনও পশুপালন ব্যবসা শুরু করার মতোই। এমনকি নতুনরাও কিছু হরিণ পালন শুরু করতে পারে । তবে, একটি হরিণের খামার শুরু করার জন্য অনেক কিছুর জানার প্রয়োজন ।
এখানে আমরা একটি হরিণ চাষ ব্যবসা (Deer Farming Business) শুরু এবং পরিচালনা সম্পর্কে আরও বর্ণনা করার চেষ্টা করছিঃ
উপযুক্ত ভাল জায়গা নির্বাচন
আপনার ব্যবসার জন্য ভালো এবং যথোপযুক্ত জায়গার প্রথম প্রয়োজন । জায়গার গুনে অনেক সময় ব্যবসার উন্নতি নির্ধারণ হয়ে থাকে । তাই,
১) আপনাকে আপনার ব্যবসা শুরু করার জন্য একটি খুব ভাল অবস্থান নির্বাচন করতে হবে । আপনার খামারের জন্য একটি শান্ত ও শব্দবিহীন এবং দূষণ মুক্ত স্থান নির্বাচন করার চেষ্টা করুন।
২) আপনার খামারে (Deer Farming Business) ভালো জলের উৎস নিশ্চিত করুন । কারন, হরিণগুলো ভালো পরিষ্কার জল যেন পান করতে পারে ।
৩) বিদ্যুতের প্রাপ্যতা দরকার । আপনার খামারে (Deer Farming) বিদ্যুৎ যোগাযোগ অবশ্যই থাকতে হবে । খামারের জমিতে ঘাসের জন্য জলসেচ করা, রাতে আলো জ্বালিয়ে পাহারা ও তদারকি করা ইত্যাদির জন্য বিদ্যুৎ যোগাযোগ প্রয়োজন ।
৪) খামারে (Deer Farming) শ্যালো বসাতে হবে । ঘাসের জমিতে জলসেচ দেওয়ার জন্য এবং হরিনের পানের জন্য তৈরি জলের ডোবায় সবসময় জল পর্যাপ্ত রাখার জন্য শ্যালো দরকার ।
৫) ভাল পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে । হরিণ চাষের প্রয়োজনে বিভিন্ন কারনে পরিবহনের প্রয়োজন হতে পারে । সেই দিকে নজর রাখার দরকার ।
হরিণ চাষের ফার্ম লেআউট
একটি চাষে সফলতা অর্জন করার জন্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে চাষ করা গুরুত্বপূর্ণ । খামারের বিন্যাস এবং জায়গার নকশা একটি হরিণ খামারের (Deer Farming business) দক্ষতা এবং স্টক ব্যবস্থাপনার উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে । আপনি পরিকল্পনা অনুযায়ীঃ
১) ফার্মের (Deer Farming) পরিসীমা, প্লট নির্বাচন, খাবারের ব্যবস্থা, সব মালপত্রের হ্যান্ডলিং সুবিধা এবং ভালো প্রজনন এলাকা আগে থেকেই ডিজাইন করতে নিতে পারেন। ভবিষ্যতে সম্ভাব্য সম্প্রসারণের পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করা আদর্শ ।
২) এক একর জমিতে, 2 থেকে 3টি প্রাপ্তবয়স্ক হোয়াইটটেইল হরিণ, 4 থেকে 5টি প্রাপ্তবয়স্ক লাল হরিণ, 3 থেকে 4টি প্রাপ্তবয়স্ক ফলো, 1 থেকে 2টি এলক এবং 3 থেকে 5টি অক্ষের জন্য জায়গা থাকতে পারে ।
৩) চারণভূমিকে সুস্থ রাখবে এমন উদ্ভিদের ঘনত্ব বজায় রাখার জন্য আপনার প্রাণীদের পুরো জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া শেষ পর্যন্ত ফলদায়ক হবে ।
৪) খামার (Deer Farming) মধ্যে নির্ভরযোগ্য এবং স্থির পরিষ্কার জলের উৎস থাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রতিটি হরিণের পানের জন্য পরিষ্কার জল থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
৫) এছাড়াও, খামারের রাস্তা ঘাট এমন করে বানাতে হবে যাতে হরিণগুলো দৌড়াদৌড়ি ও লাফালাফি করতে পারে । পাশাপাশি বিশেষ ব্যবহারের স্থানগুলির প্রতুলতা থাকার প্রয়োজন ।
৬) বাঞ্ছনীয় ভাবে হরিণের খামারের (Deer Farming) ব্যবস্থাপক খামার চত্বরে বসবাস করবেন, কারণ এতে তত্ত্বাবধান করা সহজ হয় এবং চোরাশিকারিদের আটকাতে সাহায্য করে ।
৭) খামারে যানবাহনের অ্যাক্সেস বাঞ্ছনীয়, কারণ মাঝে মাঝে কোনও প্রয়োজনে, চিকিৎসার কারনে বা বাইরে স্টক সরানোর জন্য বড় গাড়ি আনার প্রয়োজন হতে পারে ।
৮) ফার্মের কোথায় কি ব্যবস্থা রাখা আছে তার সম্পূর্ণ লেআউট নক্সা আকারে এমন জায়গায় দৃশ্যমান করে রাখতে হবে, যাতে সবার চোখে পড়ে । কোনও সমস্যা হলে তৎক্ষণাৎ পৌঁছানো যায় ।
খামারের চারিদিকে ঘের তৈরি করা
খামারের (Deer Farming) চতুর্দিকে শক্ত তারের বেড়া দিয়ে ঘের করে দিতে হবে । ঘেরের বেড়া কমপক্ষে 2 মিটার উঁচু হওয়া উচিত, যাতে হরিণ লাফিয়ে বাইরে যেতে না পারে ।
বেড়া কাঠের এবং লোহা পোস্ট উভয় দ্বারা মজবুত ভাবে সমর্থিত হবে । কাঠের পোস্টগুলিকে নিয়মিত রক্ষনাবেক্ষন করা উচিত ।
হরিনের জন্য উপযুক্ত হাউজিং
বাণিজ্যিক হরিণ পালন ব্যবসার (Deer Farming) জন্য আবাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ । বন্য হরিণ বড় গাছের নীচে বা যে কোনও তৃণভূমির কাছে মুক্ত আকাশের নিচে বাস করতে পারে।
তবে বাণিজ্যিক হরিণ আপনার সংরক্ষিত এলাকার ভিতরে থাকবে, বাস করবে ও বৃদ্ধি পাবে । আপনাকে তাদের জন্য একটি আরামদায়ক এবং উপযুক্ত ঘর বা কামরা তৈরি করতে হবে।
হরিণ সাধারণত বসবাসের জন্য উঁচু ও শুষ্ক জায়গা পছন্দ করে। তাই তাদের জন্য উঁচু জায়গায় একটি ঘর তৈরি করুন এবং ঘরটি সবসময় শুকনো রাখার চেষ্টা করুন। ঘরগুলো কোনোভাবেই আবদ্ধ প্রকৃতির হবে না ।
হরিনের আহার খাওয়ানো
হরিণের খাদ্যাভ্যাস ছাগল, গরু, ভেড়া এবং অন্যান্য তৃণভোজী গৃহপালিত প্রাণীর মতোই । তাই আপনি হরিণকে,
১) ঘাস, গাছের পাতা, রান্নাঘরের আবর্জনা, বিভিন্ন ধরণের শস্য, সয়া-তেল খাবার, লুসার্ন খড় এবং খনিজ ইত্যাদি খাওয়াতে পারেন ।
২) দানাদার খাবার যেমন গম, ভুট্টা ইত্যাদিও খাওয়াতে পারেন, যা হরিনের জন্য খুবই স্বাস্থ্যকর ।
৩) সাইলেজ ঘাস, তিল এবং সূর্যমুখী বীজ, তিসি খাবার, ভুট্টার তেল, গুড় এবং ভিটামিন এ, ডি এবং ই সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে পারেন ।
৪) বার্লি, লুসার্ন এবং তিসি খাবারের একটি ছোট মিশ্রন খাওয়াতে পারেন । এটি হরিনের পক্ষে খুবই ভালো মানের উপকারী খাদ্য ।
৩) পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহের পাশাপাশি তাদের চাহিদা অনুযায়ী বিশুদ্ধ জলের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করুন।
হরিনের প্রজনন
অন্যান্য অনেক গৃহপালিত প্রাণীর মতো, হরিণ প্রাকৃতিকভাবে খুব ভাল প্রজননকারী । আপনি যদি আপনার খামারে (Deer Farming) পুরুষ ও স্ত্রী হরিণের অনুপাত ভালো রাখেন তবে তারা সহজেই বংশবৃদ্ধি করবে ।
প্রতি ছয় সাত মাসে একবার বাচ্চা দেয় । দুই বছরের মধ্যেই দ্বিগুণ সংখ্যা তৈরি করতে পারদর্শী ।
হরিনের রোগ এবং তার চিকিৎসা ও প্রতিকার
হরিনের রোগ জীবাণু
প্রাকৃতিক পরিসরে হরিণ সাধারণত কোন উল্লেখযোগ্য রোগ দ্বারা প্রভাবিত হয় না । বদ্ধ অবস্থায় তারা অনেক সময় রোগের কবলে পড়ে, তাও খুব কম । যেমনঃ
১) মস্তিষ্কের ফোড়াঃ মাথার খুলি এবং মস্তিষ্কে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ । সাদা লেজযুক্ত হরিণে মস্তিষ্কের ফোঁড়া প্রায়শই ঘটে থাকে । অ্যান্টলারের (শাখাযুক্ত শিং) বিকাশ এবং লড়াইয়ের কারণে হয়ে থাকে ।
২) লাইম রোগঃ লাইম রোগ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয় যা নির্দিষ্ট প্রজাতির দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে । ব্ল্যাকলেগড হল প্রাথমিক প্রজাতি যা লাইম রোগ ছড়ায় ।
৩) ক্রনিক ওয়েস্টিং ডিজিজঃ CWD একটি প্রগতিশীল, মারাত্মক রোগ যা মস্তিষ্ক, মেরুদন্ড এবং অন্যান্য অনেক টিস্যুকে প্রভাবিত করে ।
৪) হেমোরেজিক রোগঃ হেমোরেজিক ডিজিজ হল সাদা লেজযুক্ত হরিণের একটি সংক্রামক রোগ । এই রোগের কারনে হরিণগুলি শেষে মারা যায় ।
৫) ত্বকের ফাইব্রোমাসঃ কিউটেনিয়াস ফাইব্রোমাস হল একটি ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট রোগ যা প্রায়শই একটি মুক্ত ক্ষত বা পোকামাকড়ের কামড়ের মাধ্যমে হরিণকে সংক্রামিত করে ।
৬) অন্যান্য রোগঃ উত্তর আমেরিকায় সাদা লেজের হরিণে মিউকোসাল রোগ দেখা দিয়েছে । হরিণের মধ্যে জলাতঙ্ক দেখা দেয় । ইংল্যান্ডে লুপিং রোগ দেখা যায় ।
৭) ধমনী কৃমিঃ সাদা লেজযুক্ত হরিণের ধমনীতে বাস করে । সংক্রমণের ফলে মুখ ফুলে যায়, মাঝে মাঝে দাঁত ক্ষয় এবং চোয়ালের হাড়ের ক্ষয় হয় ।
৮) ফুসফুসের কৃমিঃ ফুসফুসকে সংক্রামিত করে । গুরুতর ফুসফুসের কৃমির সংক্রমণে দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট এবং অলসতা দেখা যায় ।
৯) ম্যাঞ্জঃ সাদা লেজযুক্ত হরিণের ম্যাঞ্জ ম্যাঞ্জ-মাইট দ্বারা সৃষ্ট হয় । ফলে চুল পড়া, ত্বক পুরু হয়ে যাওয়া, পুঁজ ভরা ক্ষত ইত্যাদি দেখা দেয় ।
হরিনের রোগ জীবাণু প্রতিকার
১) চিকিৎসার চেয়ে পুষ্টি ব্যবস্থাপনা, নিয়মিত পরীক্ষা নিরীক্ষা, টিকা প্রদান, ভেজানো এবং ডুবিয়ে রোগ প্রতিরোধ করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ।
২) নিয়মিত হরিণের প্রাণশক্তি, চুল, তাপমাত্রা, দৃশ্যমান মিউকাস মেমব্রেন, শ্বাস, টিউমিনেশন, মলমূত্র এবং প্রস্রাব পরীক্ষা করুন ।
৩) নিয়মিতভাবে ঘের এবং পাত্রগুলি জীবাণুমুক্ত করুন । পরজীবীর উপস্থিতি পরীক্ষা করুন, থাকলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিন । মশা, মাছি এবং ইঁদুর নির্মূল করুন ।
৩) অ্যানথেলমিন্থিক্সের নিয়মিত ব্যবহার করুন এবং ওভারস্টকিং বন্ধ করুন । কারণ, উচ্চ ঘনত্বের স্টকিংয়ের সাথে রোগের প্রকোপ প্রায়ই বৃদ্ধি পায় ।
৪) নতুন অর্জিত স্টক অন্যান্য হরিণ থেকে আলাদা রাখুন । প্রয়োজনে চিকিত্সা দিন । সুস্থ অবস্থায় না আসা পর্যন্ত অন্য হরিণের সাথে ছেড়ে দেবেন না ।
৫) হরিণের খাওয়ার স্থান ও পাত্রগুলি সংক্রমণের আদর্শ । তাই হরিণকে পরিষ্কার পাত্রে খাওয়াতে হবে । মাটিতে সরাসরি খাদ্য স্থাপন করা যাবে না ।
৬) খামারে ভিজে যাওয়া হরিণগুলিতে পরজীবীর সংক্রমন বেশি থাকে । সঠিকভাবে ড্রেঞ্চিং পদ্ধতি অনুসরণ করলে এই সমস্যাটি কাটিয়ে উঠতে পারে ।
৭) কিছু হরিণের খামারে ফুসফুসে সংক্রমন লক্ষ্য করা যায় । অ্যানথেলিমিন্থিক দিয়ে নিয়মিত ভিজিয়ে, চারণভূমি পরিষ্কার করে এবং অন্য প্রাণীদের অপসারণের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যেতে পারে ।
৮) একটি অ্যান্টিবায়োটিক সংযোজন, যেমন টেরামাইসিন, উন্নত ফিড সাপ্লিমেন্ট হল ব্যাকটেরিয়াল এন্টারাইটিসের চিকিত্সার সবচেয়ে সন্তোষজনক পদ্ধতি ।
৯) সর্বদা আপনার এলাকার একজন পশু চিকিৎসকে দিয়ে নিয়মিত দেখভাল করান । তাঁর নির্দেশ মতো পরিচর্যা করার চেষ্টা করুন ।
১০) কোনও অবস্থায় খাবারের ঘাটতি হওয়া চলবে না । খামারের জমিতে ঘাসের পরিমান কমে গেলে বাইরে থেকে ব্যবস্থা করতে হবে । প্রয়োজনে, হরিণ খায় এমন গাছের পাতা যোগান দিতে হবে ।
হরিণ চাষে আইনি সতর্কতা
যেহেতু হরিণ প্রতিপালন করা, হত্যা করা ও খাদ্য হিসাবে গ্রহন করা ভারতে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ, তাই আমাদের দেশে ব্যাপক ভাবে হরিনের চাষ লক্ষ্য করা যায় না । হরিনের মাংসের চাহিদা কিন্তু প্রচুর । সুস্বাদু ও মনোরম । এখনও বেশির ভাগ মানুষ হরিনের মাংস খেতে পছন্দ করে এবং যতো বেশী দাম হোকনা কেন কিনতে আগ্রহী ।
হরিনের চাষ (Deer Farming) না হওয়ার কারনে চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে ও সঙ্গে সঙ্গে দামও তড়তড় করে বেড়ে চলেছে । ফলে একটা বিরাট অংশের মানুষ এই মাংস থেকে দিনদিন বঞ্চিত হয়ে পড়ছে । যাদের সামর্থ্য আছে তারা অসৎ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অনেক বেশী মূল্য দিয়ে চুরি করে কিনে খাচ্ছে । আর এই অসৎ ব্যবসায়ীদের কারনে হরিনের অস্তিত্ব দিনে দিনে বিলীন হতে চলেছে ।
এইখানেই সরকারের কাছে আমার আবেদন ও প্রস্তাব, সরকার যদি উপযুক্ত আইনগত নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির মাধ্যমে হরিনের চাষ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতো, তাহলে সাধারণ মানুষ যেমন উপকৃত ও লাভবান হতো, তেমনি সরকার নিজেও লাভবান হতে পারতো । যেমনঃ
1. গ্রাম বা শহরের অনেক বেকার মানুষের জীবিকা নির্বাহ হতো । ফলে কিছুটা হলেও বেকারের সমস্যা সমাধান করা যেতো ।
2. প্রচুর উৎপাদনের কারনে দাম বৃদ্ধি পেতো না, ফলে সাধারণ মানুষের পক্ষে হরিনের মাংস খাওয়া অসম্ভব থাকতো না ।
3. অধিক পরিমানে চাষ শুরু হলে অসৎ উপায়ে হরিনের চোরা কারবার বন্ধ হতো । সবাই মুক্ত ভাবে কেনা বেচা করতে পারতো ।
4. অতিরিক্ত উৎপাদনের ফলে হরিনের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকতো না । হরিণ বিলুপ্ত প্রায় প্রাণীর আখ্যা পেতো না ।
5. হরিণ চাষ সর্বসাধারণের জন্য মুক্ত হলে, চুরি করে অবৈধ চাষ হতো না । অবৈধ চাষ বন্ধ করার পিছনে সরকারের মাথাব্যাথাও থাকতো না, অতিরিক্ত ব্যয়ভারও বহন করতে হতো না ।
6. ব্যাপক ভাবে চাষ ও কেনাবেচা চললে, দেশের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব অবশ্যই পড়বে । তার ফলে, অর্থনীতি অনেকটা চাঙ্গা হতে পারতো ।
তাই সরকারের কাছে এই ব্লগের লেখার মাধ্যমে আমার সনির্বন্ধ আবেদন, প্রাণী সম্পদ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে উপযুক্ত নিয়ন্ত্রণ ও দেখভালের মাধ্যমে সরকারী তত্বাবধানে হরিনের চাষ (Deer Farming) কে পোলট্রি ও ছাগলের চাষের মতো সর্বসাধারণের কাছে উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক । এর ফলে, সরকার ও চাষি উভয় পক্ষই অনেক সুফল পেতে পারে, যেমনঃ
১) সরকারী কোষাগারে অতিরিক্ত অর্থ আসবেঃ হরিনজাত পন্য যতো বেচাকেনা হবে ও বিদেশে রপ্তানি হবে, ট্যাক্স বাবদ অতিরিক্ত অর্থ সরকারী কোষাগারে জমা পড়বে । সরকার অর্থনৈতিক সচ্ছলতা পাবে ।
২) সাধারণ মানুষের ইচ্ছা পুরন হবেঃ হরিনের মাংস সহজলভ্য হয়ে যাবে, সাধারণ মানুষের মধ্যে হরিনের মাংস খাওয়ার যে সুপ্ত ইচ্ছা তা খুব সহজেই পুরন করতে পারবে । সরকারের উপর জনগন প্রসন্ন হবে ।
৩) অনেক বেকারের কর্মসংস্থান হবেঃ হরিণ চাষ সাধারনের জন্য মুক্ত করলে, অনেক বেকার মানুষের এই চাষ করে কর্মসংস্থান হবে, ফলে সমাজে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে আসবে । তার সুফলে অসৎ কর্ম যেমন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ইত্যাদি অনেক অংশেই কমে যাবে ।
৪) সরকারের দায়ভার কমবেঃ যতো বেকারের কর্মসংস্থান হবে, ততোই সরকারের দায়িত্বভার ও মাথাব্যাথা কমবে । বেকারেরা চাকরি দাও, কাজ দাও বলে আন্দোলন করবে না । সরকারের আর্থিক দায়ভারও কমে যাবে ।
৫) দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বেঃ যতো হরিণ ও হরিণজাত পন্যের কেনাবেচা ও রপ্তানি চলবে, যতো টাকার কারবার বেশী হবে, ততোই ট্যাক্স বেশী জমা পড়বে ও দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব অবশ্যই পড়বে ।
৬) সরকারের একই প্রশাসন ব্যয়ের বদলে আয় দেবেঃ অবৈধ চাষকে (Deer Farming business) নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারকে প্রশাসনিক শক্তি ব্যবহার করতে হয় । সেই সঙ্গে আর্থিক ব্যয়ভার বহন করতে হয় । কিন্তু হরিণ চাষকে সর্বসাধারণের জন্য মুক্ত করে দিলে, একই প্রশাসনিক শক্তি বৈধ চাষকে নিয়ন্ত্রণ করবে এবং আর্থিক ব্যয়ভারের বদলে প্রচুর মুনাফা ঘরে আসবে ।
হরিনের প্রজাতি সমূহ
খামারে মজুদকৃত হরিণ প্রজাতির জীববিজ্ঞানের সেই দিকগুলির একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হবে, যা পরিচালকের দৈনন্দিন কাজকর্মে সবচেয়ে বেশি উপযোগী।
১) লাল হরিণ বা রেড ডিয়ার (Red Deer)
লাল হরিণ প্রজাতিটি ফিনল্যান্ড, পর্তুগাল, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, কোরিয়া, যুক্তরাজ্য এবং আর্জেন্টিনায় দেখা যায় ।
এদের রঙ সাধারণ লালচে বা ধূসর বাদামী, উচ্চতা 1.2-1.5 মি, ওজন 95 থেকে 300 কেজি । এরা একটি, কখনও কখনও দুটি সন্তানের জন্ম দিয়ে থাকে ।
২) ওয়াপিটি ডিয়ার (Wapiti Deer)
উত্তর আমেরিকা, এশিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ায় ওয়াপিটি প্রজাতির হরিণটি দেখা যায় । মখমলের শিংএর চাহিদার কারণে এদের সংখ্যা হ্রাস পেয়ে চলেছে।
এদের উচ্চতা 1.4 – 1.5 মি, ওজন 200 থেকে 450 কেজি। এরা একটি, কখনও কখনও (Deer Farming in Bengali) দুটি সন্তানের জন্ম দিয়ে থাকে ।
৩) সিকা ডিয়ার (Sika or Japanese Deer)
পূর্ব এশিয়ায় সিকার বিস্তৃত বিতরণ রয়েছে । সিকা নিউজিল্যান্ড, মরক্কো, গ্রেট ব্রিটেন, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া এবং পোল্যান্ডে দেখা যায় ।
এদের উচ্চতা 65 – 109 সেমি, ওজন 45 – 80 কেজি । এদের বাসস্থান খোলা বনভূমি । এরা একটি, কখনও কখনও দুটি সন্তানের জন্ম দিয়ে থাকে ।
৪) রুসা ডিয়ার (Rusa Deer)
এটি ইন্দোনেশিয়ান দ্বীপপুঞ্জে ব্যাপকভাবে দেখা যায় । এছাড়াও দক্ষিণ পূর্ব কালিমান্তান, নিউ গিনি, বিসমার্ক দ্বীপপুঞ্জ, নিউ ক্যালেডোনিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে দেখা যায় ।
সাধারণ রঙ ধূসর থেকে হলদে বাদামী, পিছনের অংশ এবং উরুতে বাদামী ।
উচ্চতা 1.10 মি হয়ে থাকে । ওজন 102 কেজি । এরা একটি সন্তান দিয়ে থাকে ।
৫) রেইন ডিয়ার (Reindeer)
উত্তর ইউরোপ এবং রাশিয়া, পশ্চিমে নরওয়ে থেকে পূর্বে বেরিং সাগর এবং দক্ষিণে উত্তর মঙ্গোলিয়া পর্যন্ত রেইনডিয়ারের বিস্তৃত রয়েছে । বন এবং তুন্দ্রা রেইনডিয়ার উভয়ই সাইবেরাইতে পালন করা হয়।
এদের রঙ গাঢ়, ধূসর বাদামী থেকে সম্পূর্ণ সাদা । নীচের অংশগুলি সাদা । উচ্চতা 1.1 – 1.4 মি এবং ওজন 320 কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে ।
তুন্দ্রা রেইনডিয়ার সারা বছর তুন্দ্রায় থাকে বা শীতকালে বনে থাকে । বন রেইনডিয়ার প্রধানত তাইগা বনে বাস করে । এরা একটি, কখনও কখনও দুটি সন্তানের জন্ম দিয়ে থাকে ।
৬) ফলো ডিয়ার (Fallow Deer)
এই প্রজাতিটি বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশে বন্য এবং বন্দী অবস্থায় পাওয়া যায় । এছাড়া এরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে প্রবর্তিত আছে ।
এদের রঙ গ্রীষ্মকালে সাদা দাগ সহ সমৃদ্ধ শ্যামলা এবং শীতকালে অভিন্ন ধূসর বাদামী । লেজটি লম্বা, উপরে কালো এবং নীচে সাদা । শিংগুলি চ্যাপ্টা এবং অসংখ্য বিন্দুর সাথে তালমেলা ।
উচ্চতা 1 মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং ওজন 50-80 কেজি পর্যন্ত দেখা যায় ।
এই হরিণ অত্যন্ত ভীতু এবং খুব নার্ভাস হয় । এরা একটি, কখনও কখনও দুটি সন্তানের জন্ম দিয়ে থাকে ।
৭) মাস্ক ডিয়ার (Musk Deer)
চীন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় উৎপাদক। কোরিয়া, তিব্বত, বার্মা, উত্তর ভারত, পাকিস্তান, ভুটান, নেপাল সহ মধ্য ও উত্তর-পূর্ব এশিয়ায়ও পাওয়া যায় । এই হরিণটি বন্য অঞ্চলে সংখ্যা অনেক হ্রাস পেয়েছে, কারণ এটি বহু শতাব্দী ধরে মূল্যবান কস্তুরীর জন্য নির্যাতিত হয়েছে।
শরীর লম্বা, ঘন, ঝাঁঝালো চুলে ঢাকা । রঙ সাধারণত সমৃদ্ধ গাঢ় বাদামী। কস্তুরী গ্রন্থি পুরুষদের পেটে অবস্থিত । উচ্চতা 60 সেমি এবং ওজন 9-12 কেজি।
এরা সাধারণত একাকী থাকে, কখনও দুই বা তিনটি একসঙ্গে থাকে । এরা লাজুক এবং ভীরু অভ্যাসের এবং দ্রুত দৌড়াতে পারে, উঁচুতে লাফ দিতে পারে । সন্তানের সংখ্যা সাধারণত দুটি, কদাচিৎ একটি বা তিনটি হয়ে থাকে ।
এছাড়াও কিছু জনপ্রিয় হরিণের প্রজাতি আছে । যেমন, এলক, মুস ইত্যাদি ।
হরিণজাত পন্য
জীবিত হরিণ থেকে প্রাপ্ত পন্য
জীবিত অবস্থায় হরিণ থেকে প্রধানত দুটি পন্য পাওয়া যায় । যেমন মখমলের কস্তুরী এবং দুধ ।
১) নিঃসন্দেহে সবচেয়ে মূল্যবান পণ্য হল কস্তুরী, একটি শক্তিশালী গন্ধযুক্ত সুগন্ধি যা শুধুমাত্র কস্তুরী হরিণ থেকে পাওয়া যায়। এটি প্রধানত প্রাচ্যের ওষুধে এবং কিছু পরিমাণে সুগন্ধি শিল্পে ব্যবহৃত হয়।
কস্তুরী জীবিত প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের থেকে আহরণ করা হয়। এটি একই হরিনের দেহ থেকে প্রতি বছর বারবার সংগ্রহ করা যেতে পারে । কস্তুরী গ্রন্থিটি পুরুষের পেটের অঞ্চলে অবস্থিত । কস্তুরী একটি ঘন লাল-বাদামী রঙের তেল।
২) রাশিয়া, উত্তর আমেরিকা ও আরও অন্যান্য জায়গায় রেইন ডিয়ারের দুধ খাওয়া হয় । এই দুধ প্রোটিন, ফ্যাট এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ ।
মৃত হরিণ থেকে প্রাপ্ত পন্য
মৃত্যুর পর হরিণ থেকে সংগ্রহ করা হয়, যেমন হরিণের চামড়া, লেজ, পিজলস, সাইনিউজ, গ্রন্থি, দাঁত, হৃদপিণ্ড, যকৃত, জিহ্বা এবং কিডনি ।
১) পুরুষ হরিণের অণ্ডকোষ এবং লেজগুলি মখমলের শিংগুলির মতো গুণাবলীর অধিকারী বলে বলা হয়। অতীতে এদের প্রচুর চাহিদা ছিল । এখনো আছে ।
২) ভেলভেট এন্টলার হল আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপজাত, যা ঔষধি উদ্দেশ্যে পাউডার হিসাবে বা পাতলা টুকরোতে ব্যবহৃত হয় । এটি একটি টনিক অমৃত।
৩)প্যানটোক্রিন, অক্ষ হরিণের শিং থেকে একটি প্রস্তুতি, প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা অনুশীলনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় । রেনটারিন, রেইনডিয়ারের মখমল শিং থেকে একটি ঔষধি প্রস্তুতি, এতে প্রদাহ বিরোধী এবং স্ট্রেস বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে, পাশাপাশি হাইপোটেনসিভ অ্যাকশন রয়েছে।
৪) নির্দিষ্ট অসুস্থতা নিরাময়ের জন্য ডিজাইন করা ওষুধ ‘থ্রি পিজল ওয়াইন’ স্মৃতিশক্তি হ্রাস, রক্তাল্পতা এবং শিঙ্গলস নিরাময় করতে কাজে লাগে ।
৫) লাল হরিণের ক্যানাইন দাঁতগুলির একটি সীমিত বাজার রয়েছে জার্মানি এবং অস্ট্রিয়াতে, যেখানে তারা গহনা তৈরি করা হয়, যেমন কাফ-লিঙ্ক, ব্রোচ এবং কানের দুল ইত্যাদি ।
৬) বিভিন্ন প্রজাতির হরিণের শিংগুলি বোতাম, পাইপ, ছুরির হাতল, লেটার ওপেনার এবং ওয়াকিং স্টিক হ্যান্ডলগুলিতে তৈরি করা হয় ।
৭) হার্ট, লিভার, জিহ্বা এবং কিডনির একটি বাজার প্রধানত ইউরোপে রয়েছে, তবে উত্তর আমেরিকাতেও রেইন ডিয়ারের হার্ট এবং লিভার খাওয়া হয় ।
হরিণ খামার ব্যবসায় খরচের হিসাব
হরিণ খামার (Deer Farming) ব্যবসায় খরচের পরিমান একটু বেশী । ছোট মাপের ব্যবসা করতে চাইলে, কমপক্ষে এক একর জমির প্রয়োজন । জমি নিজস্ব আছে ধরে নিয়ে, বাদবাকি খরচ আনুমানিক হিসাব করলে দাঁড়ায়ঃ
১) জমিতে ঘেরা দিতে হবে । খরচ ২ লক্ষ টাকা,
২) হরিণের হাউজিং বানাতে খরচ ১ লক্ষ টাকা,
৩) ইলেকট্রিফিকেশন খরচ ৩০ হাজার টাকা,
৪) শ্যালো, মোটর ও আনুসাঙ্গিক খরচ ২০ হাজার টাকা,
৫) ৪ টি হরিণ মূল্য ২ লক্ষ টাকা ।
৬) অন্যান্য ৫০ হাজার টাকা ।
তাহলে, ৪ টি হরিণ শাবক নিয়ে ছোট আকারে হরিণের খামার (Deer Farming) শুরু করতে মোটামুটি হিসাব অনুযায়ী ৬ লক্ষ টাকা কমবেশি খরচ হবে ।
হরিণ খামার ব্যবসায় লাভের হিসাব
হরিণ খামারে (Deer Farming Business) আয় ব্যাপক । তবে প্রথম প্রথম সেটা পাওয়া যাবে না । প্রথম কয়েক বছর লাগবে খামারের পরিপূর্ণতা আনতে । মোটামুটি চার থেকে পাঁচ বছরে খামার হরিণের সংখ্যায় পরিপূর্ণ হয়ে গেলে, তবেই হরিণ ও হরিণজাত পন্য বিক্রয়ের মাধ্যমে প্রচুর প্রচুর মুনাফা অর্জন করা যাবে । যেমন,
১) হরিণের মাংস বিক্রি করে যার প্রচুর দাম,
২) কস্তুরি বিক্রি করে যা মহামূল্যবান একটি বস্তু,
৩) মখমলের শিং ও অ্যান্টলার বিক্রি করে । দাম অনেক,
৪) হরিণের দাঁত ও হাড় থেকে আকর্ষণীয় মূল্যে,
৫) লিভার, অণ্ডকোষ ইত্যাদি বিক্রি করেও বিপুল আয় করা যায়,
৬) চামড়া থেকে আয় করা যায় ।
হরিণের মাংস ও হরিণজাত পন্যগুলির দারুণ চাহিদা ও আকর্ষণীয় মূল্য রয়েছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে । সুতরাং বলাই যায় যে, হরিণ খামার (Deer Farming Business) করে একজন পাঁচ বছর পর থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করতে পারবে ।
হরিনের উন্নত মানের মার্কেটিং
ভালো মার্কেটিং যদি করতে না পারেন অর্থাৎ হরিণের পণ্য বাজারজাত যদি করতে না পারেন, তাহলে আপনার ব্যবসার মূল চাবিকাঠি কিন্তু ব্যর্থ ।
এখানে একটা কথা বলে নেওয়া ভালো, বাণিজ্যিক হরিণ চাষ (Deer Farming) সব দেশে অনুমোদিত নয় । সুতরাং, এই ব্যবসা শুরু করার আগে প্রথমে আপনার বিপণন কৌশল নির্ধারণ করুন । অবৈধ উপায়ে আপনি মার্কেটিং করতেই পারেন, কিন্তু একজন ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে সেটা সাময়িক সুবিধা দিতে পারে, স্থায়ী নয় । আমি এখানে বৈধ উপায় নিয়েই আলোচনা করবোঃ
পোস্টার বা সাইনবোর্ডের মাধ্যমে
আপনি আপনার হরিণ ফার্মের (Deer Farming) নাম দিয়ে সুন্দর আকর্ষণীয় পোস্টার অথবা সাইনবোর্ড তৈরি করে আপনার এলাকায় বিভিন্ন জায়গায় খাটিয়ে দিয়ে প্রচার করতে পারেন । এর মাধ্যমে বহু মানুষের কাছে আপনার হরিণ ফার্মের নাম চলে যাবে এবং আপনার উৎপন্ন হরিণ সম্পর্কে তারা জানতে পারবে । অবশ্যই তাদের মধ্যে কিছু লোক আপনার গ্রাহক হতেই পারে ।
অনলাইনের মাধ্যমে ডিজিটাল মার্কেটিং
যদি আপনার হরিণ বা হরিণজাত পন্য গুলিকে অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করতে চান, তাহলে অ্যামাজন, ফ্লিপকার্টের মতো সাইটগুলোতে নাম রেজিস্ট্রেশন করে মার্কেটিং করতে পারেন । আপনার নিজস্ব পোর্টালের মাধ্যমেও অনলাইনে স্টোর করতে পারেন । সেখানে হরিণ বা হরিণজাত পন্য গুলোর আকর্ষণীয় ছবি রেখে দিন, তা দেখে গ্রাহক অনলাইনের মাধ্যমে কেনার আগ্রহ পাবেন ।
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মার্কেটিং
আজকাল সোশ্যাল মিডিয়া একটি সবচেয়ে শক্তিশালী প্লাটফর্ম । যেখানে যে কোন ব্যবসার (Deer Farming Business) প্রচার করা যায় ও ব্যবসার বৃদ্ধি করা যায় । ফেসবুক, হোয়াটসআপের মতো বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকাউন্ট করে ফ্রেন্ড সার্কেল বৃদ্ধি করুন ।
আপনার ব্যবসা সম্পর্কে বলুন, পোস্ট দিন, সুন্দর সুন্দর ছবি দিন । ওয়েবসাইট বানিয়ে তার লিঙ্ক শেয়ার করুন । আস্তে আস্তে দেখবেন অনেক গ্রাহক তৈরি হয়ে গেছে ও আপনার ব্যবসার প্রতি আকর্ষন বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
ডাইরেক্ট সেলিং
ব্যবসার মূল ভিত্তি হল ডাইরেক্ট সেলিং । এটি একটি চিরাচরিত পদ্ধতি । ডাইরেক্ট সেলিং আপনি কয়েকটি (Deer Farming) উপায়ে করতে পারেনঃ
১) আপনার এলাকায় বিভিন্ন বাজারে পুশিং সেল বা ফেস টু ফেস আপনি নিজে হরিণ বা হরিণজাত পন্য সেলিং করতে পারেন ।
২) প্রয়োজনে সেল বাড়ানোর উদ্দেশ্যে দুজন সেলসম্যান রেখে কমিশন ভিত্তিতে আপনার হরিণ বা হরিণজাত পন্য বাজারজাত করতে পারেন ।
৩) কোনও মেলা বা প্রদর্শনীতে যোগ দিতে পারেন । সেখানে স্টল দিলে আপনার হরিণ বা হরিণজাত পন্য সেল হওয়ার পাশাপাশি ভালো প্রচারও পেয়ে যাবে । আপনার ব্যবসার নাম ছড়িয়ে পড়বে । আপনি সফল (Deer Farming) হবেন নিশ্চিত ।
Frequently Asked Questions
হরিণ চাষ কি লাভজনক ?
ANS: হ্যাঁ, বাণিজ্যিক হরিণ চাষ একটি অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা । আপনি যদি সবকিছু নিখুঁতভাবে পরিচালনা করতে পারেন তবে আপনি এই ব্যবসা থেকে ভাল মুনাফা করতে পারেন।
আমরা কি ভারতে হরিণ চাষ করতে পারি বা মালিক হতে পারি ?
ANS: ভারতে সকলের জন্য হরিণের বাণিজ্যিক উৎপাদন অনুমোদিত নয় । হরিণ পালনের জন্য সরকারি সংস্থার লাইসেন্স থাকতে হবে। আপনি ভারতে একটি হরিণ দত্তক নিতে পারবেন না ।
এক একর জমিতে কয়টি হরিণ থাকতে হবে ?
ANS: আপনি এক একর জমিতে প্রায় 12 থেকে 15 টি হরিণ রাখতে পারেন ।
হরিণ বাড়তে কতক্ষণ সময় নেয় ?
ANS: হরিনের বৃদ্ধি জাত এবং অন্যান্য অনেক কারণের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, বেশিরভাগ হরিণের বাচ্চা 5 থেকে 7 বছর বয়সের মধ্যে পরিপক্ক হয়।
একটি হরিণ এক বছরে কত বাচ্চা দিতে পারে ?
ANS: সাধারনত, একটি মেয়ে হরিণ বছরে একটি মাত্র বাচ্চার জন্ম দিয়ে থাকে । কখনও কখনও দুটি বাচ্চার জন্ম দেয় ।
হরিণের প্রিয় খাবার কি ?
ANS: খামারগুলিতে, হরিণ পছন্দ করে এমন সবজির মধ্যে রয়েছে মটরশুটি, লেটুস, বাঁধাকপি এবং কোল ফসল যেমন ব্রকলি, ফুলকপি, ব্রাসেলস স্প্রাউট ইত্যাদি। হরিণের জন্য সেরা ফসল হল গম, রাই, ওটস, ট্রিটিকাল ইত্যাদি।
কস্তুরি কি ?
ANS: হরিণ থেকে প্রাপ্ত একটি শক্তিশালী গন্ধযুক্ত সুগন্ধি । ব্যবসায়িক ভিত্তিতে এর চাহিদা প্রচুর । তাই এর মূল্যও অনেক । পারফিউম, কসমেটিক ও ঔষধ শিল্পে এর প্রচুর ব্যবহার আছে ।
হরিণের দুধ কি জন্য ব্যবহার করা হয় ?
ANS: হরিণের দুধ একটি বহুমুখী উপাদান যা খাদ্য, প্রসাধনী, পরিপূরক এবং পুষ্টির প্রয়োগে ব্যবহৃত হয়।
হরিণের সংখ্যা কত দ্রুত বৃদ্ধি পায় ?
ANS: যতক্ষণ পর্যাপ্ত খাদ্য সংস্থান পাওয়া যায় ততক্ষণ হরিণের জনসংখ্যা প্রতি 2 / 3 বছরে দ্বিগুণ হতে পারে।
বন্দী অবস্থায় হরিণের আয়ুষ্কাল কত ?
ANS: বন্দী অবস্থায় একটি হরিণের গড় আয়ু 15 থেকে 20 বছরের মধ্যে।
এগুলি হল একটি সফল হরিণ চাষ (Deer Farming) ব্যবসা শুরু এবং পরিচালনা করার সাধারণ পদক্ষেপ এবং উপায়। আশা করি এই গাইড আপনাকে সাহায্য করেছে ! এই রকমই আরও নতুন নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে আমাদের সাইটে নিয়মিত নজর রাখুন । সাইটটি লাইক, শেয়ার ও সাবস্ক্রাইব করুন । বন্ধুদের মধ্যে কারো প্রয়োজন থাকলে শেয়ার করে সাহায্য করুন । আপনার উন্নতির জন্য শুভকামনা রইলো । ধন্যবাদ ।