Table of Contents
Dragon Fruit Cultivation in Bengali সহজ ড্রাগন ফলের চাষ
আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় হল ড্রাগন ফ্রুট Dragon Fruit Cultivation । এই ফলটি এখনও আমাদের মধ্যে সেইভাবে জনপ্রিয়তা পায় নি, কিন্তু এর অত্যধিক চাহিদা আছে । যেমন চাহিদা তেমনি ভালো বাজারদর । তাই এই ফলের চাষ বর্তমানে খুবই লাভজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে । চাষিদের মধ্যে এই চাষটি ধীরে ধীরে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, কারন ড্রাগন ফ্রুট একবার রোপণ করে টানা ২০ থেকে ২৫ বছর ফসল পাওয়া যায় । খাদ্যগুণের হিসাবে এই ফল অতুলনীয় । তার ফলে চাহিদাও বেড়ে চলেছে উত্তরোত্তর । শুধুমাত্র খাদ্যগুনাগুণের কারনে বিদেশী এই ফলটি আমাদের দেশে দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়ে যাচ্ছে । আকর্ষণীয় লাভজনক একটি চাষ ।
সঠিক পদ্ধতি ও পরিচর্যার মাধ্যমে ড্রাগন ফ্রুটের চাষ Dragon Fruit Cultivation করলে প্রতিমাসে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করা যেতে পারে সত্যি । তবে ড্রাগন ফলের চাষ করার আগে, চাষের পদ্ধতি, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও অন্যান্য সবকিছু খুঁটিনাটি ভালো করে জেনে নেওয়া জরুরী । তাহলে কি ভাবছেন ? চাষটি করা যায় তো ? তাহলে আর দেরি না করে, চলে যাই আসল কথার আলোচনাতে ।
ড্রাগন ফ্রুটের ইতিহাস
আমরা কি জানি, ড্রাগন ফ্রুট কোথাকার ফসল ? আমরা কি জানি, কোথায় এর প্রথম উৎপাদন শুরু হয়েছিল ? এখন সেই সম্পর্কেই আলোচনা করবো । ড্রাগন ফ্রুটের ইতিহাস সম্পর্কে এবার আমরা একটু জেনে নিইঃ
১) প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো যে, ড্রাগন ফ্রুট মোটেও ভারতের ফল নয় । ড্রাগন ফ্রুট প্রথমে পাওয়া গিয়েছিলো দক্ষিন আমেরিকাতে । কিন্তু তখন ব্যবসায়িকভাবে এর চাষআবাদ শুরু হয় নি ।
২) এটি একটি ক্যাকটাস জাতীয় উদ্ভিদ । দেখতে সুন্দর । তাই প্রথমদিকে বাড়িতে সাজসজ্জা হিসাবে ড্রাগন ফ্রুটের গাছ লাগানো হতো । Dragon Fruit Cultivation
৩) এর ব্যবসায়ীক চাষ শুরু হয়েছিল ভিয়েতনামে । এর ফল খুবই সুস্বাদু এবং রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা ভীষণ । এই গুনের কথা জানতে পেরেই ধীরে ধীরে বড়ো আকারে ড্রাগন ফলের চাষ Dragon Fruit Cultivation শুরু হতে থাকে ।
৪) তারপর একটু একটু করে সারা পৃথিবীব্যাপী এটি ছড়িয়ে পড়ে । জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে যেতে থাকে । বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এই মহামূল্যবান ড্রাগন ফ্রুটের ব্যবসায়িক চাষ শুরু হয়েছে ।
ড্রাগন ফ্রুট চাষের উদ্দেশ্য
চাষ মানুষের প্রয়োজন ভিত্তিক । প্রতিটি চাষেরই কোনও না কোনও উদ্দেশ্য অবশ্যই থাকে । ড্রাগন ফ্রুট চাষের উদ্দেশ্যগুলো জানার প্রয়োজন । তা না হলে চাষ করবো কেন ? আসুন জেনে নিইঃ
১) ড্রাগন ফ্রুট সাধারণত ফলের জন্যই চাষ করা Dragon Fruit Cultivation হয়ে থাকে । আমেরিকার এই ফল ইজরায়েল, শ্রীলংকা, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে বেশি মাত্রায় চাষ করা হয় ।
২) ড্রাগন ফ্রুট খাদ্য হিসেবেই বেশি ব্যবহৃত হয় । ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল ইত্যাদি রোগ নিয়ন্ত্রণে এই ফল দারুণভাবে উপকারী । যে কারণে এই ফলের চাহিদা ভারতে দিনে দিনে বেড়েই চলেছে ।
৩) তাছাড়া জ্যাম, জেলি, আইসক্রিম ইত্যাদি তৈরি করার জন্য ড্রাগন ফ্রুট ব্যবহার Dragon Fruit Cultivation করা হয়ে থাকে ।
৪) ব্যবসায়িক এবং ঔষধি গুনের জন্য ড্রাগন ফ্রুটের বিপুল চাহিদা তৈরি হয়েছে । চাহিদা বৃদ্ধি পেলে চাষও বৃদ্ধি পায় । আপনিও ড্রাগন ফ্রুট চাষ করে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করার সুযোগটা হাত ছাড়া করবেন কেন ?
ড্রাগন ফ্রুটের উপকারিতা
গুনের কথা বলতে গেলে, ড্রাগন ফ্রুটের বিশেষত্ব শেষ নেই । মানুষের দেহের অনেক প্রকার রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে থাকে এই ফল । বেশ কিছু রোগের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করে থাকে । ড্রাগন ফ্রুটের Dragon Fruit Cultivation বিভিন্ন গুনাগুন সম্পর্কে আলোচনা করা হলঃ
ডায়াবেটিস রোগে উপযোগী
ড্রাগন ফ্রুটের মধ্যে ন্যাচারাল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফেনোলিক অ্যাসিড ফাইবার এবং অ্যাসকরবিক অ্যাসিড পর্যাপ্ত মাত্রায় রয়েছে । যে কারণে এই ফল ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে প্রচুর লাভ দায়ক । যে সমস্ত মানুষেরা ডায়াবেটিস বা মধুমেহ সমস্যায় ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে এই ফল বিশেষ উপকারী । পাশাপাশি, একজন সুস্থ মানুষ যদি এই ফল খায়, তার ডায়াবেটিস বা মধুমেহ রোগ হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায় ।
হার্টের সমস্যায় লাভ দায়ক
হার্টের সমস্যায় ড্রাগন ফ্রুট বেশ উপকার দায়ক । ড্রাগন ফ্রুটে থাকা বিটালাইন শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল ধ্বংস করে হার্টের রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমাতে সাহায্য করে । এছাড়া, এর কালো কালো বীজে ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৯ নামক ফ্যাটি থাকে যা হার্টের পক্ষে খুবই উপকারী ।
ক্যান্সারের রোগে উপকারি
ড্রাগন ফ্রুটে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি টিউমার বেশ ভালো মাত্রায় রয়েছে । কয়েকটি রিসার্চে জানা গেছে যে, ড্রাগন ফ্রুটে থাকা উপাদানগুলি কোলোন ক্যান্সারের ঝুঁকি কে অনেকটাই কমিয়ে দেয় ।
কোলেস্টেরলের সমস্যায়
এখনকার সময়ে কোলেস্টেরলের বৃদ্ধি প্রত্যেক মানুষের একটি সাধারণ সমস্যা । শরীরে কোলেস্টেরল বাড়ার কারণে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয় । যেমন হার্ট অ্যাটাক, সুগারের মতো মারাত্মক রোগ দেখা দেয় । ড্রাগন ফ্রুট নিয়মিত খাওয়ার ফলে এই ধরনের সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব । ড্রাগন ফলের ভিটামিন বি রক্তের কোলেস্টেরল কমায় এবং ত্বক মসৃন রাখে ।
ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে লাভ দায়ক
ডেঙ্গু একটি ভয়ানক রোগ । এই রোগের কারণে মানুষ খুব তাড়াতাড়ি দুর্বল এবং অসুস্থ হয়ে পড়ে । ইমিউনিটি কম থাকলে অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত হয় । ড্রাগন ফ্রুটের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ গুলিকে খুব দ্রুত কমাতে সাহায্য করে ।
ইমিউনিটি বাড়ানোর ক্ষেত্রে উপযোগী
রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাকে ইমিউনিটি বলা হয় । যার ইমিউনিটি সিস্টেম শক্তিশালী সে যেকোনো রোগ থেকে তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পারে । এই ইমিউনিটি সিস্টেম আমাদের দৈনন্দিন খাবার দাবারের উপরে নির্ভরশীল । ড্রাগন ফ্রুটের ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যারোটিনয়েড আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেম অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ভীষণ ভাবে বাড়িয়ে দেয় ।
শরীরের সার্বিক মজবুতি
ড্রাগন ফ্রুটের উপকারের কথা বলে শেষ করা যাবে না । ড্রাগন ফ্রুটের ক্যারোটিন চোখের জন্য উপকারী, ফাইবার হজমের জন্য উপকারী এবং শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করে, ক্যালসিয়াম দাঁত ও হাড় মজবুত রাখে, ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে এবং ত্বক, দাঁত ও চুল ভালো রাখে । এককথায়, ড্রাগনের Dragon Fruit Cultivation উপকারের শেষ নেই ।
ড্রাগন ফ্রুটের বিভিন্ন প্রজাতি
ড্রাগন ফ্রুট চাষের আগে এর বিভিন্ন প্রজাতি সম্পর্কে আমাদের জেনে নেওয়া দরকার । কেননা চাষ, ফলন এবং তা থেকে লাভের পরিমাণ এই প্রজাতির উপরে অনেকাংশেই নির্ভর করে থাকে । ড্রাগন ফ্রুটের Dragon Fruit Cultivation প্রজাতি তিন প্রকারের, যেমনঃ
সাদা ড্রাগন ফ্রুট
আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি এই সাদা প্রজাতির ড্রাগন ফ্রুট চাষ করা হয়ে থাকে । এই ড্রাগন ফ্রুট খুব সহজেই পাওয়া যায় । সাদা ড্রাগন ফ্রুটের ভিতরের অংশ সাদা রংয়ের হয় এবং বীজগুলি কালো রঙের হয়ে থাকে । এই প্রজাতির ড্রাগন ফ্রুটের দাম অন্য প্রজাতি গুলির তুলনায় অনেকটাই কম ।
লাল গোলাপি ড্রাগন ফ্রুট
লাল গোলাপি ড্রাগন ফ্রুট ভারতে কম চাষ হয়ে থাকে । এই ফলের উপরের এবং ভেতরের অংশ গোলাপি রঙের হয়ে থাকে, আর বীজগুলো কালো হয়ে থাকে । খেতে খুবই সুস্বাদু, যে কারণে বাজারে এর দামও বেশি ।
হলুদ ড্রাগন ফ্রুট
এই হলুদ ড্রাগন ফ্রুটের উৎপাদন ভারতে খুবই কম । এই গাছগুলিতে যে ফল ধরে সেগুলির বাইরের অংশ হলুদ এবং ভেতরের অংশ সাদা হয়ে থাকে । এটি খেতেও অনেক সুস্বাদু । ভারতের এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম সমস্ত প্রজাতির ড্রাগন ফুট এর থেকে অনেক বেশি ।
ড্রাগন ফ্রুটের জন্য জমি নির্বাচন
যে কোনও চাষ করার আগে জেনে নেওয়া দরকার, সেই চাষটি কেমন মাটি ও কেমন জমিতে ভালো হয়ে থাকে । চাষের লাভজনক দিকের কথা ভেবেই মাটি ও জমি সম্পর্কে জেনে নেওয়া খুবই দরকার ।
১) সাধারনত, যেকোনো ধরনের মাটিতেই ড্রাগন ফ্রুটের চাষ Dragon Fruit Cultivation হয়ে থাকে । শুধু উপযুক্ত জল নিকাশি ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন ।
২) নিচু জমিতে জল দাঁড়িয়ে থাকলে গাছের বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক রোগ হয়ে থাকে এবং ফসল নষ্ট হয়ে যায় । তাই জমি নিচু হলে এড়িয়ে চলা ভালো । যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে জমিতে চওড়া উঁচু উঁচু আল তৈরি করে তাতে চারা রোপন করা উচিত । জল যেন গাছের গোঁড়ায় দাঁড়িয়ে না থাকে ।
৩) ড্রাগন ফ্রুটের চাষের Dragon Fruit Cultivation ক্ষেত্রে জমির মাটির পিএইচ লেভেল (PH) 6 থেকে 7 এর মধ্যে থাকা দরকার ।
৪) ড্রাগন ফ্রুটের চাষের ক্ষেত্রে সাধারণত ক্রান্তীয় অর্থাৎ গ্রীষ্মকালীন জলবায়ু অধিক উপযোগী । ভারতের মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, গুজরাট ইত্যাদি রাজ্যে বেশি পরিমাণে ড্রাগন ফ্রুটের চাষ করা হয়ে থাকে । পশ্চিমবঙ্গে এই চাষের জনপ্রিয়তা একটু একটু করে তৈরি হচ্ছে । এখন ভালোই প্রসার ঘটেছে ।
ড্রাগন ফ্রুটের চাষ (Dragon Fruit Cultivation) পদ্ধতি
ড্রাগন ফ্রুট ১৪ মাসে ফলন দেওয়ার উপযোগী হয় । তাই ফেব্রুয়ারি মার্চ মাসে চারা রোপণ করলে, পরের বছর এপ্রিল মে মাসে ফলন চলে আসে । এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৫ বা ৬ দফায় ফল দিয়ে থাকে । ড্রাগন ফ্রুটের চাষে জমি তৈরি থেকে শুরু করে ফসল তোলা পর্যন্ত ধাপগুলি নিয়ে আলোচনা করা হলঃ
ড্রাগন চাষের জমি তৈরি
ড্রাগন ফ্রুটের Dragon Fruit Cultivation চারা বসানোর আগে জমিকে চাষের উপযোগী বানিয়ে নিতে হয় । প্রথমে জমিতে সুন্দর ভাবে ৪/৫ টি চাষ দিতে হয় । মাটিকে আলগা ঝুরঝুরে করে জমি সমান করে নিতে হয় ।
ড্রাগন চাষের চারা রোপণ
১) জমি ঠিকঠাক তৈরি হয়ে গেলে চারিদিকে ৬ ফুট দুরত্ব রেখে রেখে গর্ত করতে হবে । প্রতি গর্তের গভীরতা, লম্বা ও চওড়া হবে ৩ ফুট করে ।
২) গর্ত করা হয়ে গেলে তাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সার দেওয়ার প্রয়োজন হয় । প্রতি গর্তে ২৫ কেজি জৈব সার, ৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ৩০০ গ্রাম সুপার ফসফেট, ৩০০ গ্রাম মিউরিয়েট অব পটাশ মাটির সাথে মিশিয়ে গর্ত ভর্তি করতে হবে ।
৩) প্রতিটি গর্তের ঠিক মাঝখানে সিমেন্টের তৈরি খুঁটি বসাতে হবে । ড্রাগন গাছ বড় হয়ে গেলে যাতে ভেঙে না পড়ে তার সাপোর্ট দেওয়ার জন্য এই খুঁটির যথার্থ প্রয়োজন । Dragon Fruit Cultivation মাটির উপরে ৫ ফুট এবং মাটির নিচে ৩ ফুট থাকার প্রয়োজন ।
৪) সিমেন্টের খুঁটির গা ঘেসে খুঁটির চারপাশে ৩ থেকে ৪ টি করে ড্রাগনের চারা রোপণ করতে হবে ।
ড্রাগনের চারার সাপোর্ট তৈরি
প্রতিটি পিলারের মাথায় জিআই পাইপের লোহার রিং বা সাইকেলের চাকার রিং বা টায়ার ফ্রেম তৈরি করে লাগাতে হয় । গাছগুলি মাটি থেকে পাঁচ ফুট উচ্চতায় খুঁটি বেয়ে উপরে উঠে লোহার রিং ভেদ করে চারপাশে ফোয়ারার মত ঝুলতে থাকবে । এতে গাছগুলি আলো বাতাস বেশি পাবে এবং ফলন ভালো দেবে Dragon Fruit Cultivation । গাছগুলি ভেঙ্গে নষ্ট হবে না । অনেক দিন বেঁচে থাকবে ।
ড্রাগন ফ্রুটের সাপোর্টিং সিস্টেমের প্রয়োজনীয়তা
১) একটি ড্রাগন ফলের গাছ কুড়ি থেকে পঁচিশ বছর পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে ফলন দিয়ে থাকে । গাছের কাণ্ডগুলো দুর্বল ও লতানো প্রকৃতির হয়ে থাকে । তাই কিছুদিন পর থেকে কাণ্ডগুলো সোজা হয়ে থাকতে পারে না । মাটিতে নুইয়ে পড়ে অথবা ভেঙে যায় । তাতে গাছের প্রচণ্ড ক্ষতি হয় । এই ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানোর জন্যই সাপোর্টিং খুঁটি বসাতে হয় । গাছগুলো যখন বড় হয় তখন খুঁটির সাথে বেঁধে দিলে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানো যায় ।
২) শুধু তাই নয়, কিছুদিন পরে আবার জিআই পাইপ দিয়ে প্রায় দুই ফুট ব্যাসার্ধ নিয়ে বৃত্তাকার ফ্রেম বানিয়ে তা ওই খুঁটির মাথায় সেট করতে হয় অথবা সাইকেলের টায়ারকে লোহার ফ্রেমের সাহায্যে শক্ত করে খুঁটির মাথায় সেট করে দিতে হয় । যাতে গাছের শাখা প্রশাখা গুলো ওই ফ্রেম ভেদ করে আবার নিচের দিকে ফোয়ারার মতো ঝুলে পড়বে, আলো বাতাস অধিক পরিমানে পাবে আর ফলন ভালো দেবে । সুতরাং, ড্রাগন চাষে Dragon Fruit Cultivation সাপোর্টিং সিস্টেমের খুবই প্রয়োজন ।
ড্রাগন ফ্রুটের জমিতে সেচ প্রদান
জলসেচ যে কোনও চাষের Dragon Fruit Cultivation একটি আবশ্যিক প্রক্রিয়া । জলের প্রয়োজন ঘটলে বা কোনও কারনে অভাব দেখা দিলে সেচ প্রদান করতেই হবে । যেমনঃ
১) ড্রাগন ফ্রুট গ্রীষ্মকালীন ফসল হওয়ায় এতে জলসেচের পরিমাণ খুবই কম লাগে বলা যেতে পারে । গরমকালে সপ্তাহে একবার সেচ দিলেই চলে । জমিতে আর্দ্রতার ভাব কমে গেলেই সেচ দেওয়ার প্রয়োজন হয় ।
২) শীতকালে Dragon Fruit Cultivation প্রতি 15 দিন অন্তর প্রয়োজন বুঝে জল সেচের প্রয়োজন হয় ।
৩) কিন্তু বর্ষা কালের সময় সেচের প্রয়োজন না হওয়ার কথা । যদি বৃষ্টিপাত না হয় শুধু সেই সময়ে জলসেচের দরকার পড়ে ।
৪) গাছে যখন ফুল ধরবে তখন একদমই জলসেচ দেওয়ার প্রয়োজন নেই । ফুল থেকে যখন ছোটো ছোটো ফল আসতে শুরু করে তখন জমিতে আর্দ্রতা বজায় রাখার প্রয়োজন হওয়ায় মাঝে মাঝে জলসেচের দরকার ।
ড্রাগন ফ্রুট ফসলের রোগ ও প্রতিকার
ড্রাগন ফ্রুটের Dragon Fruit Cultivation গাছের ক্ষেত্রে গুরুতর কোনও রোগ বা সমস্যা দেখা যায় না । মাঝে মাঝে কিছু হালকা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় । যেমনঃ
ড্রাগন চাষে পিঁপড়ের উপদ্রব
ফসল তোলার আগে গাছের শাখায় পিঁপড়ের আক্রমণের কারণে রস বেরোতে থাকে এবং সংক্রমণের সৃষ্টি হয় । নিমের পাতা বা নিম তেলের স্প্রে করলে এ রোগ সহজে সারানো যায় । Dragon Fruit Cultivation
ড্রাগন চাষে পাখির উপদ্রব
ড্রাগনের ফুল ও পাকা ফল দেখতে খুব সুন্দর হয়ে থাকে । পাখিরা এতে আকর্ষিত হয় এবং ফুল ও পাকা ফলের ক্ষতি করে । এর থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য উপযুক্ত পাহারার ব্যবস্থা করতে হবে । Dragon Fruit Cultivation
ড্রাগন চাষে কাণ্ড ও গোড়া পচা রোগ
ছত্রাক অথবা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এই রোগ হতে পারে । এই রোগ হলে গাছের কাণ্ড প্রথমে হলুদ রং এবং পরে কাল রঙ ধারন করে । শেষে পচন ধরে এবং গাছটি মরে যায় । এই রোগ দমনের জন্য প্রতি লিটার জলে ছত্রাকনাশক যেমন কারবেনডাজিম, ব্যাভিস্তিন, থিওভিট ইত্যাদি ২ গ্রাম ভাল ভাবে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে ।
ড্রাগন চাষে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড়
পোকা-মাকড়ের আক্রমন খুব একটা দেখা যায় না । মাঝে মাঝে জাব পোকা ও দয়ে পোকার আক্রমন হয়ে থাকে । এরা গাছের কচি শাখা ও পাতার রস চুষে খায় আর গাছের ডগায় আঠালো রসের মত মল ত্যাগ করে । ফলে আক্রান্ত গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং বৃদ্ধি ও ফলন কমে যায় । Dragon Fruit Cultivation
মলে শুটি মোলড নামক কালো ছত্রাক রোগের সৃষ্টি হয় যা গাছের খাদ্য তৈরিকে ব্যহত করে । ফলে ফুল ও ফল ধারন কমে যায় । এই পোকা দমনের জন্য কীটনাশক যেমন সুমিথিওন বা ম্যালাথিওন প্রতি লিটার জলে ২ মিলি ভালো করে গুলে প্রয়োগ করতে হবে ।
ড্রাগন ফ্রুট চাষের মোট খরচ
এই চাষের মজার ব্যাপার হল, খরচ একবারই করতে হয় । কোনও ধারাবাহিক নেই । চাষ শুরু করার খরচটাই আসল খরচ । বিঘাপ্রতি খরচের আনুমানিক হিসেব এখানে তুলে ধরলামঃ
১) জমি নিজস্ব থাকলে ভালো, নয়তো ভাড়াতে নিতে হবে । Dragon Fruit Cultivation সেখানে মোটামুটি বছরে ১৫০০০ থেকে ২০০০০ ধরে নেওয়া যায় ।
২) এক বিঘাতে ৮ ফুট বাই ৮ ফুট হিসাবে প্রায় ২০০ টি পিলার বসবে । ২০০ টি পিলারের দাম প্রতি পিলার ৬০০ টাকা হিসাবে ১২০০০০ টাকা ।
৩) এক পিলারে চারটি চারা হিসাবে মোট ৮০০ চারা লাগবে । প্রতি চারা ৩০ টাকা হিসাবে ২৪০০০ টাকা পড়বে ।
৪) প্রতি পিলারের মাথায় সাপোর্ট দিতে ২০০ টাকা করে ৪০০০০ টাকা খরচ । Dragon Fruit Cultivation
৫) ২০০ গর্ত করে সার দেওয়ার জন্য লেবার খরচ প্রায় ২০০০০ টাকা ।
৬) সার ও অন্যান্য খরচ ২০০০০ হাজার টাকা । Dragon Fruit Cultivation
মোট খরচ দাঁড়ালো, ২০০০০ + ১২০০০০ + ২৪০০০ + ৪০০০০ + ২০০০০ + ২০০০০ = ২৪৪০০০ টাকা । এই টাকা একবার খরচ করতে পারলে, পঁচিশ বছর ধরে টানা ইনকাম করতে পারবেন । বছর পাঁচেকের মধ্যেই লক্ষ লক্ষ টাকা গনার সুযোগ তৈরি হবে । প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা ।
ড্রাগন ফ্রুটের দাম এবং লাভ
এবার আসা যাক আসল কথায় । প্রত্যেকটা চাষের পিছনে মূল কারনই হচ্ছে, সব শেষে কি পরিমান মুনাফা ঘরে আনা যাবে । ড্রাগন ফ্রুট Dragon Fruit Cultivation সত্যিই খুবই লাভদায়ক ফসল । তবে অর্থ আমদানি শুরু হতে একটু সময় লাগে । গাছে ফল আসতে সময় লাগে ১২ থেকে ১৪ মাস আর পরিপূর্ণ ফলন পেতে সময় লাগে দুই থেকে তিন বছর । একটু চাপের হলেও, সহ্য করার ক্ষমতা থাকলে আপনি একদিন মালামাল অবশ্যই হবেন নিশ্চিত ।
১) প্রতি বিঘা জমিতে ২০০ পিলার থাকবে । প্রথমবারে প্রতি পিলারে ২ কেজি হিসাবে ২০০ পিলারে ৪০০ থেকে ৫০০ কেজি ড্রাগন ফলের উৎপাদন হয়ে থাকে । প্রতি কেজি মিনিমাম ২০০ টাকা হিসাবে আপনার প্রথম বছরেই আমদানি হবে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা ।
২) গাছের বয়স যখন তিন থেকে চার বছর হবে, তখন পিলার প্রতি উৎপাদন বেড়ে ৫ থেকে ৬ কেজি । প্রতি বিঘাতে যার পরিমান ১০০০ – ১২০০ কেজি । তখন আপনার আমদানি প্রতি বিঘাতে ২ লক্ষ টাকার বেশি ।
৩) গাছের বয়স পাঁচ থেকে ছয় বছর হলে, প্রতি পিলারে এই ফলন দাঁড়াবে গড়ে ১৫ থেকে ২০ কেজি । প্রতি বিঘাতে ৩০০০ – ৪০০০ কেজি । আপনার আমদানি বিঘা প্রতি ৬ লক্ষ থেকে ৮ লক্ষ টাকা ।
এখানে ড্রাগনের দাম ও ফলন কম করে ধরে নিয়ে হিসেব করা হয়েছে । আপনি প্রকৃত ফলন ও দাম পেলে টাকা রাখার জায়গা পাবেন না ।
৪) এছাড়া চারা বিক্রি করেও প্রচুর টাকা লাভ করা যায় । একটি পিলারে গড়ে বছরে দশটি চারা পাওয়া গেলে বিঘাতে ২০০০ চারা হবে । প্রতি চারা ৩০ টাকায় বেচতে পারলে ৬০ হাজার টাকা চোখ বুজে আমদানি হয়ে যাবে ।
৫) ড্রাগন চাষের আর একটা সুবিধা হল, এই চাষের মধ্যেই ফাঁকে ফাঁকে অন্য সবজি যেমন একাঙ্গি, পেঁয়াজ, রসুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদি চাষ করে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করে নিতে পারবেন ।
তাই বলছি, আপনি ড্রাগন ফলের চাষ করতে চাইলে সময় নষ্ট না করে খুব তাড়াতাড়ি শুরু করে দিন । আগামী দিনে এই ফল সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা আরো বাড়বে । ভারতের মতো বাজারে এই ড্রাগন ফ্রুটের চাহিদাও যথেষ্ট রয়েছে । সত্যিই বলছি । আপনার উন্নতি দেখে লোকে হিংসা করবে ।
Frequently Asked Questions
ড্রাগন ফলের কি কি গুন আছে ?
ANS: ড্রাগন ফলে অনেক গুন আছে । এতো গুনের অস্তিত্ব অন্য কোনও ফলে পাওয়া যায় না । এক কথায় বলতে গেলে ড্রাগন ফল একটি মহাঔষধি ।
ড্রাগন ফল খেতে স্বাদ কেমন ?
ANS: ড্রাগন ফল খেতে খুবই সুস্বাদু । হালকা মিষ্টি স্বাদের সঙ্গে ক্ষারীয় ভাব, যা ফলটিকে আরও সুস্বাদু করে তুলেছে ।
ড্রাগন ফল চাষ কেমন লাভজনক ?
ANS: প্রচুর লাভজনক চাষ এটি । সব চেয়ে বড় কথা, একবার চাষ করে ২০ থেকে ২৫ বছর একটানা বিপুল মুনাফা নেওয়া যায় । বিঘাপ্রতি বছরে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা অনায়াসে পাওয়া যায় ।
ড্রাগন ফল চাষে কেমন খরচ ?
ANS: চাষ শুরু করতে একটু বেশি খরচ । একবারই খরচ করতে হয় । বিঘাপ্রতি সব মিলিয়ে ২ থেকে ২.৫ লাখ টাকা খরচ হতে পারে । এক খরচেই ২৫ বছর ইনকাম করা যায় ।
ড্রাগন ফল পশ্চিমবঙ্গে চাষ করা যাবে কি ?
ANS: অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গে করা যাবে । পশ্চিমবঙ্গে অলরেডি অনেক জায়গায় চাষ হচ্ছে । আপনি চাইলে আপনার এলাকায় এই চাষ করতে পারবেন ।
ড্রাগন ফল কতদিন ফল দেয় ?
ANS: প্রতি বছর এপ্রিল মাস থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ফলন দিয়ে থাকে । একবার চাষ করলে টানা কুড়ি থেকে পঁচিশ বছর ফলন দিয়ে থাকে ।
ড্রাগনের বাজার দর কেমন ?
ANS: ড্রাগনের বাজার দর যথেষ্ট ভালো । আমাদের দেশে এখনও সে ভাবে প্রচলন হয়ে পারে নি । প্রচলন হলে চাহিদা বাড়তে থাকবে এবং দামও বেশী পাওয়া যাবে ।
ড্রাগনের প্রচলন কি ভাবে বাড়ানো যেতে পারে ?
ANS: প্রথমত, সরকারী ভাবে উদ্যোগ নিয়ে প্রচার চালাতে হবে । এর গুনাগুণ ও চাষে লাভের পরিমান দুইই প্রচার করতে হবে । ফলে চাষি ও উপভোক্তা দুইয়ের মধ্যেই আগ্রহ তৈরি হবে । দ্বিতীয়ত, হোটেলে, রেস্টুরেন্টে, দোকানে কিংবা অনুষ্ঠান বাড়িতে ড্রাগনের নানা পদ তৈরি করে মানুষকে খাওয়ালে মানুষের মধ্যে আগহ তৈরি হবে ।
ড্রাগন চারা বিঘাতে কতোগুলি চাষ করা যায় ?
ANS: মোটামুটি হিসাবে দেখা গেছে, এক বিঘা জমিতে কমবেশি ২০০ টি পিলার বসবে । প্রতি পিলারে ৩ থেকে ৪ টি চারা দিলে মোট ৭০০ থেকে ৮০০ চারা বসানো যায় । একটু দুরত্ব বজায় রেখে চারা বসানো ভালো ।
ড্রাগন ফল চাষের বিশেষত্ব কি ?
ANS: ড্রাগন ফল চাষের প্রধান বিশেষত্ব হল দুটি । একঃ একবার চাষ করলে টানা কুড়ি পঁচিশ বছর ফলন তোলা যায় । দুইঃ এতে একটি ভিন্ন ধরনের সাপোর্ট সিস্টেম লাগে, যা অন্য কোনও চাষে দেখা যায় না ।
আজ আমরা ড্রাগন ফল চাষ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম । আগামীতে ড্রাগন ফল চাষ নিয়ে আরো নতুন নতুন আলোচনা করবো, তাই আমাদের পেজে নিয়মিত চোখ রাখুন । এই লেখাটি অনেকের কাজে লাগতে পারে তাই লেখাটি যতটুকু সম্ভব শেয়ার করুন, যাতে করে অনেকের উপকারে আসে । ধন্যবাদ ।