Table of Contents
Capsicum Cultivation in Bengali লাভজনক ক্যাপসিকাম চাষ
আজ আমরা আলোচনা করবো Capsicum Cultivation in Bengali. ক্যাপসিকাম একটি অতিসুন্দর সুস্বাদু ও পুষ্টিকর সবজি । অত্যধিক চাহিদা ও ভালো বাজারদর থাকায় এই সবজির চাষ খুবই লাভজনক ।
চাষিদের মধ্যে Capsicum Cultivation খুবই জনপ্রিয় । খাদ্যগুণে অতুলনীয় এই সবজি । ক্যাপসিকাম বারো মাসের সবজি । হোটেল রেস্টুরেন্টে ক্যাপসিকাম ছাড়া রান্না প্রায় হয় না বললেই চলে । বাজারে সারাবছরই মেলে । দামও বেশ ভালই পাওয়া যায় । এই চাষ করে চাষিরা বিপুল আর্থিক লাভও করছেন । পাশাপাশি করা হচ্ছে সরকারি সাহায্যও ।
সঠিক পদ্ধতিতে Capsicum Cultivation করে আপনি অনেক অনেক টাকা ইনকাম করতে পারেন এটা সত্যি । তবে ক্যাপসিকাম চাষ করার আগে, চাষের পদ্ধতি ও অন্যান্য বেশ কিছু খুঁটিনাটি ভালো করে জেনে নেওয়া দরকার । তবে আর দেরি না করে, চলে যাই মূল আলোচনাতে ।
ক্যাপসিকামের অজানা ইতিহাস
ক্যাপসিকাম আমাদের দেশের ফসল নয় । লঙ্কা জাতীয় এই ফসলের ইতিহাস সম্পর্কে নিচের তথ্যগুলি জানা যায়ঃ
১) ক্যাপসিকামের মূল উৎস আমেরিকা । সেখানে খ্রিষ্টপূর্ব ৭৫০০ থেকে খাদ্য হিসাবে এর ব্যবহার চলে আসছে ।
২) কলম্বাস এটাকে মরিচ হিসাবে সারা বিশ্বের সঙ্গে পরিচয় ঘটায় । বর্তমানে পৃথিবী জুড়ে ক্যাপসিকামের পরিচিতি বিদ্যমান ।
৩) Capsicum Cultivation প্রথম শুরু হয় স্পেনে ১৪৯৩ সালে । যদিও ভূমধ্যসাগর ও ইংল্যান্ডে এটি বিস্তার লাভ করে ১৫৪৮ সালে । আর মধ্য ইউরোপে এটি আসে ১৬ শতকের শেষের দিকে ।
৪) ক্যাপসিকাম কথাটি আসে গ্রীক শব্দ ক্যাপটো থেকে যার অর্থ চিবানো বা গলাধঃকরণ করা । Capsicum Cultivation in Bengali ক্যাপসিকাম কথার অর্থ হল একপ্রকার ফুল প্রজাতির বর্গ ।
৫) ভারত, নিউজিল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়াতে এর নাম ক্যাপসিকাম । ব্রিটেনে একে চিলি পেপার নামে ডাকা হয় । আবার আমেরিকা ও কানাডাতে এর নাম বেল পেপার ।
৬) প্রচলিত ধারনা অনুযায়ী, ভাস্কোদাগামা সর্বপ্রথম ক্যাপসিকাম ভারতে আনেন । গোয়াতে এর প্রথম চাষ হয় এবং ধীরে ধীরে বোম্বেতে ছড়িয়ে পড়ে । তখন এটি গোয়া মির্চ নামে পরিচিত ছিল ।
৭) পরবর্তী ১০০ বছরে ভারতের সর্বত্র Capsicum Cultivation এতো ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে যে পশ্চিমের দেশগুলিতে রপ্তানি শুরু করে দিয়েছে । বর্তমানে ভারত ক্যাপসিকাম উতপাদনে বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ বৃহত্তম দেশ ।
ক্যাপসিকাম চাষের উদ্দেশ্য
প্রতিটি চাষের একটি উদ্দেশ্য থাকে । Capsicum Cultivation এর উদ্দেশ্যগুলো হলঃ
১) ক্যাপসিকাম সাধারণত সবজি হিসাবে চাষ করা হয়ে থাকে । সবজির চাহিদা সারা বছরই ব্যাপক ভাবে থাকে । ফলে চাষের পরিমাণও বৃদ্ধি করা উচিত ।
২) বাড়িতে, হোটেলে বা রেস্টুরেন্টে এই সবজি সর্বদা দেখা যায় । বর্তমানে যে কোনো খাবারের আয়োজনে ক্যাপসিকামের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় । ফলে ক্যাপসিকাম উৎপাদন হলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় নেই ।
৩) Capsicum Cultivation রোগ নিয়ন্ত্রণে এই সবজিটি দারুণভাবে উপকারী । যে কারণে এই সবজির চাহিদা ভারতে দিনে দিনে বেড়েই চলেছে ।
৪) এমন একটি চাহিদাপূর্ণ সবজি চাষ করলে ক্ষতির সম্ভাবনা একেবারে থাকে না বললেই চলে । Capsicum Cultivation in Bengali তাই কৃষকরা এই চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছে । আপনিও Capsicum Cultivation বেছে নিয়ে অনেক মুনাফা অর্জন করতে পারবেন ।
ক্যাপসিকামের উপকারিতা
মানুষের বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে থাকে এই সবজি । বেশ কিছু রোগের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করে । চলুন, ক্যাপসিকামের বিভিন্ন গুনাগুন সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাকঃ
চোখের জন্য উপকারী
ক্যাপসিকামে চোখের স্বাস্থ্য ও দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখার জন্য বিপুল ভূমিকা আছে । এতে জিয়াক্সান্থিন ও লিউটিন নামে ক্যারোটিনয়েড প্রচুর পরিমানে থাকে, যা চোখের রেটিনাকে অক্সিডেটিভ ড্যামেজ থেকে রক্ষা করে । চোখ সুরক্ষিত রাখে ।
মানসিক উদ্বেগে লাভ দায়ক
ক্যাপসিকামে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন বি৬, ম্যাগনেসিয়াম, এমন কি সোডিয়াম থাকে । এই তিনটি উপাদান নার্ভের ক্রিয়াকলাপে সাহায্য করে ও মানসিক উদ্বেগ কমায় । এমন কি প্যানিক অ্যাটাককেও নিয়ন্ত্রণ করে । উচ্চ মাত্রায় ম্যাগনেসিয়াম উদ্বেগে কঠিন হওয়া পেশীকে স্বাভাবিক করে তোলে । তাছাড়া, হার্টবিটকে সঠিক মাত্রায় নিয়ন্ত্রণে রেখে হার্ট সুস্থ রাখে ও ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক রাখে ।
ক্যানসারের রোগে উপকারী
ক্যাপসিকামে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও প্রদাহ বিরোধী উপাদান যথেষ্ট পরিমানে থাকে, যা কিছু নির্দিষ্ট ক্যানসারের পক্ষে খুবই উপকারী । এটা প্রমাণিত যে, হলুদ ও লাল ক্যাপসিকাম প্রস্টেট ক্যানসারকে প্রায় ৭৫% কমাতে সাহায্য করে ।
হাড়ের গঠনে উপকারী
ক্যাপসিকামে ম্যাঙ্গানিজ অতি মাত্রায় পরিপূর্ণ । এটি তরুনাস্থি ও কোলাজেন গঠনে সাহায্য করে, যা হাড়ের ধাতব পরিনতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ । ক্যাপসিকামে ভিটামিন কে থাকে প্রচুর পরিমানে । ভিটামিন কে হাড়কে মজবুত করতে সাহায্য করে এবং অস্টিওপরোসিস হওয়ার হাত থেকে হাড়কে রক্ষা করে ।
রক্তাল্পতা প্রতিরোধে লাভ দায়ক
রক্তাল্পতা সচরাচর দেখা যায় মহিলাদের মধ্যে । রক্তে আয়রন লেভেল কম থাকার জন্য রক্তাল্পতা ঘটে । ফলে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায় । মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে । ক্যাপসিকাম আয়রনে ভরপুর । তাই ক্যাপসিকাম খেলে আমাদের দেহ দ্রুত সেই আয়রন গ্রহন করে এবং রক্তে লোহিত কনিকার পরিমান বাড়িয়ে দিয়ে রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে ।
ইমিউনিটি বাড়ানোর ক্ষেত্রে উপযোগী
রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাকে ইমিউনিটি বলা হয় । যার ইমিউনিটি সিস্টেম শক্তিশালী সে যে কোনো রোগ থেকে তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পারে । এই ইমিউনিটি সিস্টেম আমাদের দৈনন্দিন খাবার দাবারের উপরে নির্ভরশীল । Capsicum Cultivation in Bengali ক্যাপসিকামে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যারোটিনয়েড আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেমকে ভীষণ ভাবে বাড়িয়ে তোলে স্বেত রক্ত কনিকা উৎপাদনের মাধ্যমে ।
ত্বক ও চুলের জন্য লাভ দায়ক
ক্যাপসিকামে ভিটামিন সি থাকে উচ্চ মাত্রায় । ভিটামিন সি কোলাজেন গঠনে সাহায্য করে, যা ত্বককে সুস্থ রাখে এবং ক্ষতির হাত থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলে । নিয়মিত ক্যাপসিকাম খেলে ত্বক উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর থাকে । অন্যদিকে, ভিটামিন সি থেকে তৈরি কোলাজেন চুলের রুক্ষতা, ভেঙে যাওয়া বা ফেটে যাওয়া থেকে চুলকে রক্ষা করে চুলের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করে ।
শরীরের ওজন কমাতে উপকারী
ক্যাপসিকামের একটি আদর্শ গুন হলো শরীরের ওজন হ্রাস করা । এতে প্রচুর মাত্রায় ফাইবার থাকে, যার ওজন কমানো এবং তা স্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে পুস্টিগত গুরুত্ব অপরিসীম । ফাইবার অতিরিক্ত ক্ষুধা ও খাওয়ার অভ্যেসকে কমিয়ে দেয় । ভিটামিন বি৬ বিভিন্ন বিপাক ক্রিয়ার হার বাড়িয়ে তোলে এবং জমে যাওয়া অতিরিক্ত এনার্জি ধ্বংস করে । ভিটামিন বি৬ অ্যামাইনো অ্যাসিড, কার্বোহাইড্রেড, লিপিডকে ভেঙে দেয় । রক্তে সুগারের মাত্রা কন্ট্রোল করে । ফলে শরীরের ওজন বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করে ও শরীর সুস্থ রাখে ।
ক্যাপসিকামের বিভিন্ন প্রজাতি
বাজারে বিভিন্ন প্রজাতির ক্যাপসিকামের বীজ পাওয়া যায় । যেমনঃ
১) উন্নত কয়েকটি জাত হল ক্যালিফোর্নিয়া ওয়াণ্ডার, ইয়োলো ওয়াণ্ডার, চায়নিজ জায়েন্ট, হাম্বার্স, কিং অফ নর্থ ইত্যাদি ।
২) হাইব্রিড প্রজাতির মধ্যে ভারত, বিটলিবেল, কানাপে, ওসির, ইন্দিরা, মহাভারত, ম্যানহাটন, রতন, অনুপম, তানভি, মানহেম-৩০১৯, মানহেম-৩০২০, আ্যটলাস, লেডিবেল, ভ্যালডর, নাথহীরা, সিডওয়ে, সুইট ব্যানানা, আর্লি বনতি, ইত্যাদি কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে ।
ক্যাপসিকাম চাষের উপযুক্ত সময়
বর্তমানে সারা বছরই ক্যাপসিকাম উৎপন্ন হয় । তবে খুব ভাল ফলন পেতে হলে তার নির্দিষ্ট সময়েই চাষ Capsicum Cultivation করা উচিত । যেমনঃ
১) পশ্চিমবঙ্গের বেশীরভাগ জেলায় ভাদ্র আশ্বিন মাসে বীজ বুনে চারা তৈরির কাজ চলবে । চারা তৈরি হতে প্রায় একমাস সময় লাগবে ।
২) চারা তৈরি হয়ে গেলে ১ মাস বা তারও বেশি বয়সের চারা মূল জমিতে বসাতে হবে । তখন আশ্বিন কার্ত্তিক মাস । পরবর্তী ৪/৫ মাস পর্যন্ত আবাদ রাখা যায় ।
৩) পশ্চিমবঙ্গ ও পার্শ্ববর্তী রাজ্যে পার্বত্য অঞ্চলে ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বীজ বুনে পরবর্তী বৈশাখ থেকে শ্রাবনের প্রথমার্ধ অবধি আবার ভাদ্র মাসে বীজ বুনে অহায়নের প্রথমার্ধ অবধি রঙিন ক্যপসিকামের আবাদ Capsicum Cultivation করা যাবে ।
৪) সমতলের ক্ষেত্রে নেট হাউসের আচ্ছাদনের মধ্যে অসময়ে অনায়াসেই রঙিন উঁচু দামের এই সবজিটি চাষ করে বাজার জাত করা যাবে ।
ক্যাপসিকামের জন্য জমি নির্বাচন
যে কোনও চাষের জন্য জমি ঠিকঠাক হওয়া প্রয়োজন । জমি এবং মাটি সঠিক নির্বাচন করতে না পারলে ফলনের ক্ষতি হবে । Capsicum Cultivation এর জন্য কেমন জমি উপকারী তার আলোচনা নিচে করা হলঃ
১) জলনিকাশী ব্যবস্থা অবশ্যই থাকতে হবে । গাছের গোঁড়ায় জল দাঁড়ালে গাছ নষ্ট হয়ে যাবে । তাই উঁচু বা মাঝারী উঁচু জমি বেশ উপকারী ।
২) যেহেতু জল দাঁড়ালে চলবে না, তাই দোঁয়াশ ও বেলে দোঁয়াশ মাটি যুক্ত জমি ক্যাপসিকাম চাষের জন্য হওয়া উচিত ।
৩) পর্যাপ্ত সূর্যালোক ক্যাপসিকাম চাষের পক্ষে অত্যন্ত জরুরী । তাই জমিতে যেন পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পড়ে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে ।
৪) আবহাওয়ার কথা বললে বলবো, ২৪° সি এর বেশী তাপমাত্রায় ক্যাপসিকাম ভালো হয় না । খুব বেশী বৃষ্টিপাত এবং অনিয়মিত তাপমাত্রায় ফুল, ফল ও পাতা ঝরে যায় এবং গাছ মরে যায় ।
ক্যাপসিকাম চাষ পদ্ধতি
ক্যাপসিকাম চাষ মোটামুটি তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়ে থাকে । চারা তৈরি, জমি তৈরি এবং ফসল তোলা- এই ধাপগুলি নিয়ে আলোচনা করা হলঃ
ক্যাপসিকাম চাষের চারা তৈরি
ক) খোলামেলা উঁচু জমি যেখানে সারাদিন রোদ পায়, জল দাঁড়ায় না অথচ সেচের সুবিধা আছে – এ রকম জমিই বীজতলার পক্ষে উপযুক্ত ।
খ) বীজবোনার ১০/ ১৫ দিন আগে বীজতলার মাটি ভালো করে কুপিয়ে বা লাঙ্গল দিয়ে রোদ খাওয়াতে হবে ।
গ) এরপর, আগাছা মুক্ত মাটি ঝুরঝুরে গুঁড়ো করে তার সাথে গোবর বা কম্পোস্ট সার এবং প্রয়োজন মতো রাসায়নিক সার মেশাতে হবে ।
ঘ) মূল জমি থেকে বীজতলা ৬ ইঞ্চি উঁচু করতে হবে । কপার অক্সিক্লোরাইড জলে মিশিয়ে বীজতলার মাটি ভালো করে ভিজিয়ে শোধন করতে হবে ।
ঙ) বীজতলায় সারি করে বীজ বুনতে হবে । বীজ থেকে বীজের দূরত্ব হবে ১ ইঞ্চি এবং সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ২.২৫ ইঞ্চি । বোনার আগে বীজ অবশ্যই কীটনাশক দিয়ে শোধন করে নিতে হবে ।
চ) বর্ষার হাত থেকে বীজতলাকে রক্ষা করার জন্য ৪ ফুট উঁচুতে সাদা জল রঙ পলিথিন দিয়ে ছাউনি দিতে হবে ।
ক্যাপসিকাম চাষের জমি তৈরি
ক) মূল জমিতে ৫/৬ বার চাষ দিয়ে আগাছা মুক্ত করতে হবে এবং মাটি ভালোভাবে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে ।
খ) চারা রোয়ার অন্তত ১০/১৫ দিন আগে বিঘাপ্রতি ১.৫ টন গোবর সার এবং ১ কেজি আ্যজোটোব্যাকটর মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে ।
গ) ৫/৭ দিন আগে শেষ চাষের সাথে বিঘাপ্রতি ১০/১২ কেজি এনপিকে সার মাটির সাথে মিশিয়ে মাটি ভালো করে সমান করে দিতে হবে ।
ক্যাপসিকাম চাষের চারা রোপণ
ক) বিকালের দিকে চারা রোয়া Capsicum Cultivation সবথেকে ভালো কারন রাতের শিশিরে চারা চট করে দাঁড়িয়ে যায় ও মরে যাওয়ায় ভয় কম থাকে ।
খ) চারা রোয়ার আগে শিকড় থেকে মাটি ঝরিয়ে, পরিষ্কার জলে ধুয়ে, ইমিডাক্লোপ্রিতা ৭০% জলে গুলে তাতে ২০/২৫ মিনিট ডুবিয়ে তবেই রোয়া করলে, বেশ কিছুদিন শোষক পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে ।
গ) চারা রোয়ার সময় সারি থেকে সারির দূরত্ব ২ ফুট এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ১.৫ ফুট রাখা উচিত যাতে আলো বাতাস ভালো খেলতে পারে ।
ঘ) উন্নত প্রজাতির বীজগুলি বিঘা প্রতি ৫০ গ্রাম এবং হাইব্রিড প্রজাতির বীজগুলি বিঘা প্রতি ৩০ থেকে ৩৫ গ্রাম প্রয়োজন ।
ক্যাপসিকাম চাষের পরিচর্যা
সুস্থ সবল গাছ এবং অধিক ফলন পাওয়ার জন্য সযত্ন পরিচর্যা যে কোনও চাষের জন্য অত্যন্ত জরুরী । ক্যাপসিকামও তার ব্যাতিক্রম নয় । পরিচর্যা গুলো হলঃ
Capsicum Cultivation ক্যাপসিকাম চাষের জলসেচ
ক) সাধারন ভাবে ১২/১৪ দিনের ব্যবধানে সেচ দেওয়ার দরকার হয় । Capsicum Cultivation সবথেকে আদর্শ হল ড্রিপ সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে জল দেওয়া ।
খ) প্রত্যেকবার সার প্রয়োগ করার পরেই সেচ দেওয়ার প্রয়োজন । সেচ ঠিকমতো না হলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হবে । ফলে ফলন ভালো হবে না ।
ক্যাপসিকাম চাষের সার প্রয়োগ
ক) জমি তৈরির সময় বিঘা প্রতি ১.৫ টন গোবর সার ও ১ কেজি আ্যজোটোব্যাকটর এবং ১০/১২ কেজি এনপিকে প্রয়োগ করা হয় ।
খ) Capsicum Cultivation চারা লাগানোর ২০ দিন পরে বিঘা প্রতি ৬ কেজি নাইট্রোজেন এবং ৩ কেজি কার্বোফিউরান জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে ।
গ) দ্বিতীয় ও তৃতীয় চাপান দিতে হবে চারা লাগানোর ৪০ দিন ও ৬০ দিন পরে প্রতি বারে বিঘা প্রতি ৭ কেজি নাইট্রোজেন হিসাবে ।
ঘ) মাটিতে অনুখাদ্য তিন চারটি ফসলের জন্য একবার প্রয়োগ করলেই যথেষ্ট । প্রয়োজনে পাতায় স্প্রে করার অনুখাদ্য এক লিটার জলে ২ গ্রাম মিশিয়ে চারা বসানোর পর এক ও দেড় মাসের মাথায় প্রয়োগ করা হয় ।
ঙ) চাপান সার ও দানা ওষুধ চারা থেকে ২/৩ ইঞ্চি দূরে মাটিতে মেশানো উচিৎ । প্রত্যেক বার চাপান সার প্রয়োগের পর পরই হালকা করে সেচ দিতে হবে ।
ক্যাপসিকাম চাষের আগাছা দমন
১) আগাছামুক্ত পরিচ্ছন্ন জমিতে রোগ ও পোকার আক্রমণ কম হয় এবং ফলন বেশী পাওয়া যায় ।
২) চারা রোয়ার ২০/২৫ দিনের মধ্যে একবার ও ৪০/৪৫ দিনের মাথায় আরেকবার হাত নিড়ানি দিতে হবে ।
ক্যাপসিকাম ফসলের রোগ ও পোকামাকড়
প্রত্যেক চাষে বিভিন্ন রোগ ও পোকামাকড়ের উৎপাত থাকেই । এ সবের হাত থেকে ফসলকে রক্ষা করে তবেই ভালো ফলন পাওয়া যায় । Capsicum Cultivation যেমনঃ
Capsicum Cultivation in Bengali ক্যাপসিকাম চাষের রোগ
Capsicum Cultivation এ জলদি ও নাবি ধসা রোগ বেশি দেখা যায় । চারা রোপনের পর গাছে প্রথমে নিচের পাতায় কালচে ও বাদামী বর্ণের নানা আকৃতির দাগ হয় । এই রোগ থেকে বাঁচার জন্য ম্যানকোজেব ৭৫% আড়াই গ্রাম, কপার অক্সি ক্লোরাইড ৫০% চার গ্রাম জলে মিশিয়ে স্প্রে করা হয় ।
এছাড়া, ছত্রাকজনিত গোড়া পচা রোগে গাছ ধীরে ধীরে হলদে হয়ে শুকিয়ে যায় । এই রোগ প্রতিরোধে গাছের গোড়ায় থায়াফ্যানেট মিথাইল ২ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে । এছাড়া, কৃষি বিশেষজ্ঞদের কাছে পরামর্শ নিয়ে তার প্রতিকার করতে হবে ।
ক্যাপসিকাম চাষে পোকামাকড়ের উপদ্রব
ক্যাপসিকামে ফল ও কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকাগুলিকে বলা হয় কীড়া পোকা । এগুলি গাছের ডগা ও ফলের মধ্যে প্রবেশ করে ভিতর থেকে খেতে শুরু করে । আক্রান্ত ডগা শুকিয়ে যায় এবং ফল পচে যায় । সারা বছর এই পোকার উপদ্রব থাকে । আক্রান্ত ডগার নিচ থেকে কেটে পুড়িয়ে নষ্ট করে দিতে হয় ।
ক্যাপসিকামে বাঘাপোকার আক্রমণ দেখা যায় । এই পোকা পাতার সবুজ অংশ খেয়ে ঝাঁজরা করে দেয় । কার্বাডিল আড়াই গ্রাম বা থায়োডিকার্ব এক গ্রাম বা কুইনালফস স্প্রে করা যায় ।
এছাড়া, হলদে ও লাল মাকড়ের আক্রমন ক্যাপসিকামে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় । খালি চোখে দেখা যায় না এমন ক্ষুদ্র হলদে পোকা দলবদ্ধভাবে ডগার পাতার রস নিচ থেকে চুষে খায় । শুষ্ক ও গরম আবহাওয়াতেই এদের আক্রমণ সবচেয়ে বেশি ঘটে । বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা করা উচিত ।
ক্যাপসিকাম চাষের মোট খরচ খরচা
চাষ করতে গেলে প্রাথমিক ভাবে একটা খরচ করতে হয় । বিঘাপ্রতি খরচের আনুমানিক হিসেব এখানে তুলে ধরলামঃ
১) Capsicum Cultivation বীজ কিনতে প্রায় ৪০০ টাকা খরচ পড়বে ।
২) বীজখোলা ও চারা তৈরি করতে আনুমানিক ২০০০ টাকা খরচ হবে ।
৩) জমিতে পাঁচ ছয় বার লাঙ্গল দিতে হবে । প্রতি বারে ৭০০ টাকা হিসাবে ৬ বারে মোট ৪২০০ টাকা লাঙ্গলের খরচ ।
৪) বীজ রোয়া করতে দুজন লেবারের দুদিন লাগবে । প্রতি লেবার ৩০০ টাকা হিসাবে মোট খরচ ১২০০ টাকা ।
৫) জলসেচ, আগাছা দমন ও সারের পিছনে সর্বাধিক ৫০০০ টাকা খরচ হতে পারে ।
৬) তাহলে খরচ দাঁড়ালো, ৪০০ + ২০০০ + ৪২০০ + ১২০০ + ৫০০০ = ১২৮০০ টাকা । এর সঙ্গে অন্যান্য খরচ হিসাবে আরও ২২০০ টাকা ধরলে মোট খরচ হয়, ১২৮০০ + ২২০০ = ১৫০০০ টাকা ।
এই টাকা একবার খরচ করতে পারলে, চার মাসের মধ্যেই কয়েকগুন টাকা উপার্জন করা যাবে সন্দেহ নেই ।
ক্যাপসিকামের দাম এবং লাভের হিসাব
এবার এলাম আসল কথায় । প্রত্যেকটা চাষের মূল কারনই হচ্ছে, সব শেষে কি পরিমান মুনাফা ঘরে আনা যাবে । Capsicum Cultivation সত্যিই খুবই লাভদায়ক ফসল । লাভের একটা পরিসংখ্যান দেওয়া হলঃ
১) চারা বসানোর দু’মাসের পর থেকে পরবর্তী এক থেকে দেড় মাস ফলন দেয় ।
২) বিঘা প্রতি ২৫ থেকে ৩০ কুইন্টাল পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায় । বাজারে কম করে খুচরো হিসাবে কিলোপ্রতি ১০০ – ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করা যেতে পারে ।
৩) যদি ২৫ কুইন্টাল ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা যায়, তবে ২৫ * ১০০ * ১০০ = ২৫০০০০ টাকা আমদানি হবে । খরচ যার সামান্য । খরচ বাদ দিয়ে লাভ দাঁড়াবে, ২৫০০০০ – ১৫০০০ = ২৩৫০০০ টাকা । চার মাসে লাখপতি হয়ে যাবেন । সুতরাং দ্বিধা না করে আজই Capsicum Cultivation এর কথা মাথায় সেট করে নিন ।
Frequently Asked Questions
ক্যাপসিকাম আসলে কি ?
ANS: ক্যাপসিকাম এক ধরনের লঙ্কা জাতীয় ফসল । বিভিন্ন দেশে এর বিভিন্ন নাম । কোথাও বেল পেপার আবার কোথাও পেপার । আমাদের দেশে এটি ক্যাপসিকাম নামে পরিচিত ।
ক্যাপসিকামের উপকারিতা কি ?
ANS: ক্যাপসিকামের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না । ক্যানসার, হাড়ের গঠন থেকে শুরু করে শরীরে ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য এটি খুব কার্যকরী ।
ক্যাপসিকাম কেমন মাটিতে ভালো হয় ?
ANS: ক্যাপসিকাম সাধারনত দোয়াস বা বেলে দোয়াস মাটিতেই ভালো হয়ে থাকে । তবে এঁটেল মাটিতেও কিছু কিছু চাষ হয়ে থাকে ।
ক্যাপসিকাম চাষের বান্ধব জলবায়ু কি ?
ANS: সত্যি কথা বলতে গেলে, ক্যাপসিকাম সারা বছরই চাষ করা যায় । তবে মোটামুটি নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া এর পক্ষে খুবই ভালো ।
পশ্চিমবঙ্গে ক্যাপসিকাম চাষ কেমন হয় ?
ANS: পশ্চিমবঙ্গে ক্যাপসিকাম চাষ যথেষ্ট ভালো পরিমানে হয়ে থাকে । প্রায় সারা বছরই এর জোগান দেখা যায় ।
নিচু ও জলজ জমিতে কি ক্যাপসিকাম চাষ করা সম্ভব ?
ANS: উঁচু জমির ব্যবস্থা থাকলে নিচু জমিকে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো । যদি সেটা সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে নিচু জমিতে উঁচু উঁচু বেড তৈরি করে তাতে চাষ করা যেতে পারে । ব্যয় সাপেক্ষ ব্যাপার ।
ক্যাপসিকাম চাষের সম্ভাবনা কতোটা ?
ANS: সম্ভাবনা বলতে গেলে, এই চাষের ক্ষেত্রে যথেষ্টই আছে । এর চাহিদা যেমনি খুবই বেশী, দামও তেমনি যথেষ্ট । চাষিরা এই চাষ করলে লাভের মুখ অবশ্যই দেখবে ।
ক্যাপসিকাম ব্যবহার হয় কিসে কিসে ?
ANS: ক্যাপসিকাম প্রধানত খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয় । যেকোনো তরকারী, মাছ ও মাংসে, বিরিয়ানি, ফ্রায়েড রাইস ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয় । স্যালাড হিসাবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।
সংরক্ষিত খাবারে এর ব্যবহার আছে কি ?
ANS: সংরক্ষিত খাবারেও এর ব্যবহার আছে । ক্যাপসিকামের চাটনি ও আচার বিপুল পরিমানে বিক্রি হয়ে থাকে ।
ক্যাপসিকামের কতো রকমের প্রজাতি আছে ও তাদের নাম কি ?
ANS: ক্যাপসিকামের অনেক প্রজাতি আছে । তার মধ্যে উন্নত কয়েকটি প্রজাতিই বাজারে প্রচলিত ও জনপ্রিয় । সেইসব প্রজাতিগুলোই আমরা ব্যবহার করে থাকি । যেমনঃ ভারত, বিটলিবেল, ক্যালিফোর্নিয়া ওয়াণ্ডার, ইয়োলো ওয়াণ্ডার, চায়নিজ জায়েন্ট, হাম্বার্স, কিং অফ নর্থ, কানাপে, ওসির, ইন্দিরা, মহাভারত, ম্যানহাটন, রতন, অনুপম, তানভি, মানহেম ৩০১৯, মানহেম ৩০২০, আ্যটলাস, ইত্যাদি ।
আজ আমরা Capsicum Cultivation নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম । আগামীতে Capsicum Cultivation নিয়ে আরো নতুন নতুন আলোচনা করবো, তাই আমাদের পেজে নিয়মিত চোখ রাখুন । এই লেখাটি অনেকের কাজে লাগতে পারে তাই লেখাটি যতটুকু সম্ভব শেয়ার করুন, যাতে করে অনেকের উপকারে আসে । ধন্যবাদ ।