Huge Profitable Capsicum Cultivation in Bengali 2022. খুব লাভজনক ক্যাপসিকাম চাষ

Table of Contents

Capsicum Cultivation in Bengali লাভজনক ক্যাপসিকাম চাষ

আজ আমরা আলোচনা করবো Capsicum Cultivation in Bengali. ক্যাপসিকাম একটি অতিসুন্দর সুস্বাদু ও পুষ্টিকর সবজি । অত্যধিক চাহিদা ও ভালো বাজারদর থাকায় এই সবজির চাষ খুবই লাভজনক ।

চাষিদের মধ্যে Capsicum Cultivation খুবই জনপ্রিয় । খাদ্যগুণে অতুলনীয় এই সবজি । ক্যাপসিকাম বারো মাসের সবজি । হোটেল রেস্টুরেন্টে ক্যাপসিকাম ছাড়া রান্না প্রায় হয় না বললেই চলে । বাজারে সারাবছরই মেলে । দামও বেশ ভালই পাওয়া যায় । এই চাষ করে চাষিরা বিপুল আর্থিক লাভও করছেন । পাশাপাশি করা হচ্ছে সরকারি সাহায্যও ।

সঠিক পদ্ধতিতে Capsicum Cultivation করে আপনি অনেক অনেক টাকা ইনকাম করতে পারেন এটা সত্যি । তবে ক্যাপসিকাম চাষ করার আগে, চাষের পদ্ধতি ও অন্যান্য বেশ কিছু খুঁটিনাটি ভালো করে জেনে নেওয়া দরকার । তবে আর দেরি না করে, চলে যাই মূল আলোচনাতে ।

ক্যাপসিকামের অজানা ইতিহাস

ক্যাপসিকাম আমাদের দেশের ফসল নয় । লঙ্কা জাতীয় এই ফসলের ইতিহাস সম্পর্কে নিচের তথ্যগুলি জানা যায়ঃ

১) ক্যাপসিকামের মূল উৎস আমেরিকা । সেখানে খ্রিষ্টপূর্ব ৭৫০০ থেকে খাদ্য হিসাবে এর ব্যবহার চলে আসছে ।

২) কলম্বাস এটাকে মরিচ হিসাবে সারা বিশ্বের সঙ্গে পরিচয় ঘটায় । বর্তমানে পৃথিবী জুড়ে ক্যাপসিকামের পরিচিতি বিদ্যমান ।

৩) Capsicum Cultivation প্রথম শুরু হয় স্পেনে ১৪৯৩ সালে । যদিও ভূমধ্যসাগর ও ইংল্যান্ডে এটি বিস্তার লাভ করে ১৫৪৮ সালে । আর মধ্য ইউরোপে এটি আসে ১৬ শতকের শেষের দিকে ।

৪) ক্যাপসিকাম কথাটি আসে গ্রীক শব্দ ক্যাপটো থেকে যার অর্থ চিবানো বা গলাধঃকরণ করা । Capsicum Cultivation in Bengali ক্যাপসিকাম কথার অর্থ হল একপ্রকার ফুল প্রজাতির বর্গ ।

৫) ভারত, নিউজিল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়াতে এর নাম ক্যাপসিকাম । ব্রিটেনে একে চিলি পেপার নামে ডাকা হয় । আবার আমেরিকা ও কানাডাতে এর নাম বেল পেপার ।

৬) প্রচলিত ধারনা অনুযায়ী, ভাস্কোদাগামা  সর্বপ্রথম ক্যাপসিকাম ভারতে আনেন । গোয়াতে এর প্রথম চাষ হয় এবং ধীরে ধীরে বোম্বেতে ছড়িয়ে পড়ে । তখন এটি গোয়া মির্চ নামে পরিচিত ছিল ।

৭) পরবর্তী ১০০ বছরে ভারতের সর্বত্র Capsicum Cultivation এতো ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে যে পশ্চিমের দেশগুলিতে রপ্তানি শুরু করে দিয়েছে । বর্তমানে ভারত ক্যাপসিকাম উতপাদনে বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ বৃহত্তম দেশ ।

ক্যাপসিকাম চাষের উদ্দেশ্য

প্রতিটি চাষের একটি উদ্দেশ্য থাকে । Capsicum Cultivation এর উদ্দেশ্যগুলো হলঃ

Capsicum Cultivation
Capsicum Recipe

১) ক্যাপসিকাম সাধারণত সবজি হিসাবে চাষ করা হয়ে থাকে । সবজির চাহিদা সারা বছরই ব্যাপক ভাবে থাকে । ফলে চাষের পরিমাণও বৃদ্ধি করা উচিত ।

২) বাড়িতে, হোটেলে বা রেস্টুরেন্টে এই সবজি সর্বদা দেখা যায় । বর্তমানে যে কোনো খাবারের আয়োজনে ক্যাপসিকামের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় । ফলে ক্যাপসিকাম উৎপাদন হলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় নেই ।

৩) Capsicum Cultivation রোগ নিয়ন্ত্রণে এই সবজিটি দারুণভাবে উপকারী । যে কারণে এই সবজির চাহিদা ভারতে দিনে দিনে বেড়েই চলেছে ।

৪) এমন একটি চাহিদাপূর্ণ সবজি চাষ করলে ক্ষতির সম্ভাবনা একেবারে থাকে না বললেই চলে । Capsicum Cultivation in Bengali তাই কৃষকরা এই চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছে । আপনিও Capsicum Cultivation বেছে নিয়ে অনেক মুনাফা অর্জন করতে পারবেন ।

ক্যাপসিকামের উপকারিতা

মানুষের বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে থাকে এই সবজি । বেশ কিছু রোগের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করে । চলুন, ক্যাপসিকামের বিভিন্ন গুনাগুন সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাকঃ

চোখের জন্য উপকারী

ক্যাপসিকামে চোখের স্বাস্থ্য ও দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখার জন্য বিপুল ভূমিকা আছে । এতে জিয়াক্সান্থিন ও লিউটিন নামে ক্যারোটিনয়েড প্রচুর পরিমানে থাকে, যা চোখের রেটিনাকে অক্সিডেটিভ ড্যামেজ থেকে রক্ষা করে । চোখ সুরক্ষিত রাখে ।

READ MORE   Easy Sunflower Cultivation in Bengali 2022. সূর্যমুখী চাষ পদ্ধতি

মানসিক উদ্বেগে লাভ দায়ক

ক্যাপসিকামে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন বি৬, ম্যাগনেসিয়াম, এমন কি সোডিয়াম থাকে । এই তিনটি উপাদান নার্ভের ক্রিয়াকলাপে সাহায্য করে ও মানসিক উদ্বেগ কমায় । এমন কি প্যানিক অ্যাটাককেও নিয়ন্ত্রণ করে । উচ্চ মাত্রায় ম্যাগনেসিয়াম উদ্বেগে কঠিন হওয়া পেশীকে স্বাভাবিক করে তোলে । তাছাড়া, হার্টবিটকে সঠিক মাত্রায় নিয়ন্ত্রণে রেখে হার্ট সুস্থ রাখে ও ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক রাখে ।

ক্যানসারের রোগে উপকারী

ক্যাপসিকামে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও প্রদাহ বিরোধী উপাদান যথেষ্ট পরিমানে থাকে, যা কিছু নির্দিষ্ট ক্যানসারের পক্ষে খুবই উপকারী । এটা প্রমাণিত যে, হলুদ ও লাল ক্যাপসিকাম প্রস্টেট ক্যানসারকে প্রায় ৭৫% কমাতে সাহায্য করে ।

হাড়ের গঠনে উপকারী

ক্যাপসিকামে ম্যাঙ্গানিজ অতি মাত্রায় পরিপূর্ণ । এটি তরুনাস্থি ও কোলাজেন গঠনে সাহায্য করে, যা হাড়ের ধাতব পরিনতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ । ক্যাপসিকামে ভিটামিন কে থাকে প্রচুর পরিমানে । ভিটামিন কে হাড়কে মজবুত করতে সাহায্য করে এবং অস্টিওপরোসিস হওয়ার হাত থেকে হাড়কে রক্ষা করে ।

রক্তাল্পতা প্রতিরোধে লাভ দায়ক

রক্তাল্পতা সচরাচর দেখা যায় মহিলাদের মধ্যে । রক্তে আয়রন লেভেল কম থাকার জন্য রক্তাল্পতা ঘটে । ফলে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায় । মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে । ক্যাপসিকাম আয়রনে ভরপুর । তাই ক্যাপসিকাম খেলে আমাদের দেহ দ্রুত সেই আয়রন গ্রহন করে এবং রক্তে লোহিত কনিকার পরিমান বাড়িয়ে দিয়ে রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে ।

ইমিউনিটি বাড়ানোর ক্ষেত্রে উপযোগী

রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাকে ইমিউনিটি বলা হয় । যার ইমিউনিটি সিস্টেম শক্তিশালী সে যে কোনো রোগ থেকে তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পারে । এই ইমিউনিটি সিস্টেম আমাদের দৈনন্দিন খাবার দাবারের উপরে নির্ভরশীল । Capsicum Cultivation in Bengali ক্যাপসিকামে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যারোটিনয়েড আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেমকে ভীষণ ভাবে বাড়িয়ে তোলে স্বেত রক্ত কনিকা উৎপাদনের মাধ্যমে ।

ত্বক ও চুলের জন্য লাভ দায়ক

ক্যাপসিকামে ভিটামিন সি থাকে উচ্চ মাত্রায় । ভিটামিন সি কোলাজেন গঠনে সাহায্য করে, যা ত্বককে সুস্থ রাখে এবং ক্ষতির হাত থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলে । নিয়মিত ক্যাপসিকাম খেলে ত্বক উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর থাকে । অন্যদিকে, ভিটামিন সি থেকে তৈরি কোলাজেন চুলের রুক্ষতা, ভেঙে যাওয়া বা ফেটে যাওয়া থেকে চুলকে রক্ষা করে চুলের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করে ।

শরীরের ওজন কমাতে উপকারী

ক্যাপসিকামের একটি আদর্শ গুন হলো শরীরের ওজন হ্রাস করা । এতে প্রচুর মাত্রায় ফাইবার থাকে, যার ওজন কমানো এবং তা স্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে পুস্টিগত গুরুত্ব অপরিসীম । ফাইবার অতিরিক্ত ক্ষুধা ও খাওয়ার অভ্যেসকে কমিয়ে দেয় । ভিটামিন বি৬ বিভিন্ন বিপাক ক্রিয়ার হার বাড়িয়ে তোলে এবং জমে যাওয়া অতিরিক্ত এনার্জি ধ্বংস করে । ভিটামিন বি৬ অ্যামাইনো অ্যাসিড, কার্বোহাইড্রেড, লিপিডকে ভেঙে দেয় । রক্তে সুগারের মাত্রা কন্ট্রোল করে । ফলে শরীরের ওজন বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করে ও শরীর সুস্থ রাখে ।

ক্যাপসিকামের বিভিন্ন প্রজাতি

Capsicum Cultivation
Types of Capsicum

বাজারে বিভিন্ন প্রজাতির ক্যাপসিকামের বীজ পাওয়া যায় । যেমনঃ

১) উন্নত কয়েকটি জাত হল ক্যালিফোর্নিয়া ওয়াণ্ডার, ইয়োলো ওয়াণ্ডার, চায়নিজ জায়েন্ট, হাম্বার্স, কিং অফ নর্থ ইত্যাদি ।

২) হাইব্রিড প্রজাতির মধ্যে ভারত, বিটলিবেল, কানাপে, ওসির, ইন্দিরা, মহাভারত, ম্যানহাটন, রতন, অনুপম, তানভি, মানহেম-৩০১৯, মানহেম-৩০২০, আ্যটলাস, লেডিবেল, ভ্যালডর, নাথহীরা, সিডওয়ে, সুইট ব্যানানা, আর্লি বনতি, ইত্যাদি কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে ।

ক্যাপসিকাম চাষের উপযুক্ত সময়

বর্তমানে সারা বছরই ক্যাপসিকাম উৎপন্ন হয় । তবে খুব ভাল ফলন পেতে হলে তার নির্দিষ্ট সময়েই চাষ Capsicum Cultivation করা উচিত । যেমনঃ

১) পশ্চিমবঙ্গের বেশীরভাগ জেলায় ভাদ্র আশ্বিন মাসে বীজ বুনে চারা তৈরির কাজ  চলবে । চারা তৈরি হতে প্রায় একমাস সময় লাগবে ।

২) চারা তৈরি হয়ে গেলে ১ মাস বা তারও বেশি বয়সের চারা মূল জমিতে বসাতে হবে । তখন আশ্বিন কার্ত্তিক মাস । পরবর্তী ৪/৫ মাস পর্যন্ত আবাদ রাখা যায় ।

৩) পশ্চিমবঙ্গ ও পার্শ্ববর্তী রাজ্যে পার্বত্য অঞ্চলে ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বীজ বুনে পরবর্তী বৈশাখ থেকে শ্রাবনের প্রথমার্ধ অবধি আবার ভাদ্র মাসে বীজ বুনে অহায়নের প্রথমার্ধ অবধি রঙিন ক্যপসিকামের আবাদ Capsicum Cultivation করা যাবে ।

৪) সমতলের ক্ষেত্রে নেট হাউসের আচ্ছাদনের মধ্যে অসময়ে অনায়াসেই রঙিন উঁচু দামের এই সবজিটি চাষ করে বাজার জাত করা যাবে ।

ক্যাপসিকামের জন্য জমি নির্বাচন

যে কোনও চাষের জন্য জমি ঠিকঠাক হওয়া প্রয়োজন । জমি এবং মাটি সঠিক নির্বাচন করতে না পারলে ফলনের ক্ষতি হবে । Capsicum Cultivation এর জন্য কেমন জমি উপকারী তার আলোচনা নিচে করা হলঃ

১) জলনিকাশী ব্যবস্থা অবশ্যই থাকতে হবে । গাছের গোঁড়ায় জল দাঁড়ালে গাছ নষ্ট হয়ে যাবে । তাই উঁচু বা মাঝারী উঁচু জমি বেশ উপকারী ।

২) যেহেতু জল দাঁড়ালে চলবে না, তাই দোঁয়াশ ও বেলে দোঁয়াশ মাটি যুক্ত জমি ক্যাপসিকাম চাষের জন্য হওয়া উচিত ।

৩) পর্যাপ্ত সূর্যালোক ক্যাপসিকাম চাষের পক্ষে অত্যন্ত জরুরী । তাই জমিতে যেন পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পড়ে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে ।

READ MORE   How Easy Pineapple Cultivation in Bengali 2022. আনারস চাষ করে আয়

৪) আবহাওয়ার কথা বললে বলবো, ২৪° সি এর বেশী তাপমাত্রায় ক্যাপসিকাম ভালো হয় না । খুব বেশী বৃষ্টিপাত এবং অনিয়মিত তাপমাত্রায় ফুল, ফল ও পাতা ঝরে যায় এবং গাছ মরে যায় ।

ক্যাপসিকাম চাষ পদ্ধতি

ক্যাপসিকাম চাষ মোটামুটি তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়ে থাকে । চারা তৈরি, জমি তৈরি এবং ফসল তোলা- এই ধাপগুলি নিয়ে আলোচনা করা হলঃ

ক্যাপসিকাম চাষের চারা তৈরি

Capsicum Cultivation
Plante of Capsicum

ক) খোলামেলা উঁচু জমি যেখানে সারাদিন রোদ পায়, জল দাঁড়ায় না অথচ সেচের সুবিধা আছে – এ রকম জমিই বীজতলার পক্ষে উপযুক্ত ।

খ) বীজবোনার ১০/ ১৫ দিন আগে বীজতলার মাটি ভালো করে কুপিয়ে বা লাঙ্গল দিয়ে রোদ খাওয়াতে হবে ।

গ) এরপর, আগাছা মুক্ত মাটি ঝুরঝুরে গুঁড়ো করে তার সাথে গোবর বা কম্পোস্ট সার এবং প্রয়োজন মতো রাসায়নিক সার মেশাতে হবে ।

ঘ) মূল জমি থেকে বীজতলা ৬ ইঞ্চি উঁচু করতে হবে । কপার অক্সিক্লোরাইড জলে মিশিয়ে বীজতলার মাটি ভালো করে ভিজিয়ে শোধন করতে হবে ।

ঙ) বীজতলায় সারি করে বীজ বুনতে হবে । বীজ থেকে বীজের দূরত্ব হবে ১ ইঞ্চি এবং   সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ২.২৫ ইঞ্চি । বোনার আগে বীজ অবশ্যই কীটনাশক দিয়ে শোধন করে নিতে হবে ।

চ) বর্ষার হাত থেকে বীজতলাকে রক্ষা করার জন্য ৪ ফুট উঁচুতে সাদা জল রঙ পলিথিন দিয়ে ছাউনি দিতে হবে ।

ক্যাপসিকাম চাষের জমি তৈরি

ক) মূল জমিতে ৫/৬ বার চাষ দিয়ে আগাছা মুক্ত করতে হবে এবং মাটি ভালোভাবে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে ।

খ) চারা রোয়ার অন্তত ১০/১৫ দিন আগে বিঘাপ্রতি ১.৫ টন গোবর সার এবং ১ কেজি আ্যজোটোব্যাকটর মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে ।

গ) ৫/৭ দিন আগে শেষ চাষের সাথে বিঘাপ্রতি ১০/১২ কেজি এনপিকে সার মাটির সাথে মিশিয়ে মাটি ভালো করে সমান করে দিতে হবে ।

ক্যাপসিকাম চাষের চারা রোপণ

ক) বিকালের দিকে চারা রোয়া Capsicum Cultivation সবথেকে ভালো কারন রাতের শিশিরে চারা চট করে দাঁড়িয়ে যায় ও মরে যাওয়ায় ভয় কম থাকে ।

খ) চারা রোয়ার আগে শিকড় থেকে মাটি ঝরিয়ে, পরিষ্কার জলে ধুয়ে, ইমিডাক্লোপ্রিতা ৭০% জলে গুলে তাতে ২০/২৫ মিনিট ডুবিয়ে তবেই রোয়া করলে, বেশ কিছুদিন শোষক পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে ।

গ) চারা রোয়ার সময় সারি থেকে সারির দূরত্ব ২ ফুট এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ১.৫ ফুট রাখা উচিত যাতে আলো বাতাস ভালো খেলতে পারে ।

ঘ) উন্নত প্রজাতির বীজগুলি বিঘা প্রতি ৫০ গ্রাম এবং হাইব্রিড প্রজাতির বীজগুলি বিঘা প্রতি ৩০ থেকে ৩৫ গ্রাম প্রয়োজন ।

Capsicum Cultivation
Land of Capsicum Cultivation

ক্যাপসিকাম চাষের পরিচর্যা  

সুস্থ সবল গাছ এবং অধিক ফলন পাওয়ার জন্য সযত্ন পরিচর্যা যে কোনও চাষের জন্য অত্যন্ত জরুরী । ক্যাপসিকামও তার ব্যাতিক্রম নয় । পরিচর্যা গুলো হলঃ

Capsicum Cultivation ক্যাপসিকাম চাষের জলসেচ

ক) সাধারন ভাবে ১২/১৪ দিনের ব্যবধানে সেচ দেওয়ার দরকার হয় । Capsicum Cultivation সবথেকে আদর্শ হল ড্রিপ সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে জল দেওয়া ।

খ) প্রত্যেকবার সার প্রয়োগ করার পরেই সেচ দেওয়ার প্রয়োজন । সেচ ঠিকমতো না হলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হবে । ফলে ফলন ভালো হবে না ।

ক্যাপসিকাম চাষের সার প্রয়োগ

ক) জমি তৈরির সময় বিঘা প্রতি ১.৫ টন গোবর সার ও ১ কেজি আ্যজোটোব্যাকটর এবং ১০/১২ কেজি এনপিকে প্রয়োগ করা হয় ।

খ) Capsicum Cultivation চারা লাগানোর ২০ দিন পরে বিঘা প্রতি ৬ কেজি নাইট্রোজেন এবং ৩ কেজি কার্বোফিউরান জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে ।

গ) দ্বিতীয় ও তৃতীয় চাপান দিতে হবে চারা লাগানোর ৪০ দিন ও ৬০ দিন পরে প্রতি বারে বিঘা প্রতি ৭ কেজি নাইট্রোজেন হিসাবে ।

ঘ) মাটিতে অনুখাদ্য তিন চারটি ফসলের জন্য একবার প্রয়োগ করলেই যথেষ্ট । প্রয়োজনে পাতায় স্প্রে করার অনুখাদ্য এক লিটার জলে ২ গ্রাম মিশিয়ে চারা বসানোর পর এক ও দেড় মাসের মাথায় প্রয়োগ করা হয় ।

ঙ) চাপান সার ও দানা ওষুধ চারা থেকে ২/৩ ইঞ্চি দূরে মাটিতে মেশানো উচিৎ । প্রত্যেক বার চাপান সার প্রয়োগের পর পরই হালকা করে সেচ দিতে হবে ।

ক্যাপসিকাম চাষের আগাছা দমন

১) আগাছামুক্ত পরিচ্ছন্ন জমিতে রোগ ও পোকার আক্রমণ কম হয় এবং ফলন বেশী পাওয়া যায় ।

২) চারা রোয়ার ২০/২৫ দিনের মধ্যে একবার ও ৪০/৪৫ দিনের মাথায় আরেকবার হাত নিড়ানি দিতে হবে ।

ক্যাপসিকাম ফসলের রোগ ও পোকামাকড়

প্রত্যেক চাষে বিভিন্ন রোগ ও পোকামাকড়ের উৎপাত থাকেই । এ সবের হাত থেকে ফসলকে রক্ষা করে তবেই ভালো ফলন পাওয়া যায় । Capsicum Cultivation যেমনঃ

Capsicum Cultivation in Bengali ক্যাপসিকাম চাষের রোগ

Capsicum Cultivation এ জলদি ও নাবি ধসা রোগ বেশি দেখা যায় । চারা রোপনের পর গাছে প্রথমে নিচের পাতায় কালচে ও বাদামী বর্ণের নানা আকৃতির দাগ হয় । এই রোগ থেকে বাঁচার জন্য ম্যানকোজেব ৭৫% আড়াই গ্রাম, কপার অক্সি ক্লোরাইড ৫০% চার গ্রাম জলে মিশিয়ে স্প্রে করা হয় ।

READ MORE   Easy Pudina Cultivation in Bengali 2022. পুদিনা পাতা চাষ পদ্ধতি

এছাড়া, ছত্রাকজনিত গোড়া পচা রোগে গাছ ধীরে ধীরে হলদে হয়ে শুকিয়ে যায় । এই রোগ প্রতিরোধে গাছের গোড়ায় থায়াফ্যানেট মিথাইল ২ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে । এছাড়া, কৃষি বিশেষজ্ঞদের কাছে পরামর্শ নিয়ে তার প্রতিকার করতে হবে ।

ক্যাপসিকাম চাষে পোকামাকড়ের উপদ্রব

ক্যাপসিকামে ফল ও কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকাগুলিকে বলা হয় কীড়া পোকা । এগুলি গাছের ডগা ও ফলের মধ্যে প্রবেশ করে ভিতর থেকে খেতে শুরু করে । আক্রান্ত ডগা শুকিয়ে যায় এবং ফল পচে যায় । সারা বছর এই পোকার উপদ্রব থাকে । আক্রান্ত ডগার নিচ থেকে কেটে পুড়িয়ে নষ্ট করে দিতে হয় ।

ক্যাপসিকামে বাঘাপোকার আক্রমণ দেখা যায় । এই পোকা পাতার সবুজ অংশ খেয়ে ঝাঁজরা করে দেয় । কার্বাডিল আড়াই গ্রাম বা থায়োডিকার্ব এক গ্রাম বা কুইনালফস স্প্রে করা যায় ।

এছাড়া, হলদে ও লাল মাকড়ের আক্রমন ক্যাপসিকামে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় । খালি চোখে দেখা যায় না এমন ক্ষুদ্র হলদে পোকা দলবদ্ধভাবে ডগার পাতার রস নিচ থেকে চুষে খায় । শুষ্ক ও গরম আবহাওয়াতেই এদের আক্রমণ সবচেয়ে বেশি ঘটে । বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা করা উচিত ।

ক্যাপসিকাম চাষের মোট খরচ খরচা

চাষ করতে গেলে প্রাথমিক ভাবে একটা খরচ করতে হয় । বিঘাপ্রতি খরচের আনুমানিক হিসেব এখানে তুলে ধরলামঃ

১) Capsicum Cultivation বীজ কিনতে প্রায় ৪০০ টাকা খরচ পড়বে ।

২) বীজখোলা ও চারা তৈরি করতে আনুমানিক ২০০০ টাকা খরচ হবে ।

৩) জমিতে পাঁচ ছয় বার লাঙ্গল দিতে হবে । প্রতি বারে ৭০০ টাকা হিসাবে ৬ বারে মোট ৪২০০ টাকা লাঙ্গলের খরচ ।

৪) বীজ রোয়া করতে দুজন লেবারের দুদিন লাগবে । প্রতি লেবার ৩০০ টাকা হিসাবে মোট খরচ ১২০০ টাকা ।

৫) জলসেচ, আগাছা দমন ও সারের পিছনে সর্বাধিক ৫০০০ টাকা খরচ হতে পারে ।

৬) তাহলে খরচ দাঁড়ালো, ৪০০ + ২০০০ + ৪২০০ + ১২০০ + ৫০০০ = ১২৮০০ টাকা । এর সঙ্গে অন্যান্য খরচ হিসাবে আরও ২২০০ টাকা ধরলে মোট খরচ হয়, ১২৮০০ + ২২০০ = ১৫০০০ টাকা ।

এই টাকা একবার খরচ করতে পারলে, চার মাসের মধ্যেই কয়েকগুন টাকা উপার্জন করা যাবে সন্দেহ নেই ।

ক্যাপসিকামের দাম এবং লাভের হিসাব

Capsicum Cultivation
Profit of Capsicum Cultivation

এবার এলাম আসল কথায় । প্রত্যেকটা চাষের মূল কারনই হচ্ছে, সব শেষে কি পরিমান মুনাফা ঘরে আনা যাবে । Capsicum Cultivation সত্যিই খুবই লাভদায়ক ফসল । লাভের একটা পরিসংখ্যান দেওয়া হলঃ

১) চারা বসানোর দু’মাসের পর থেকে পরবর্তী এক থেকে দেড় মাস ফলন দেয় ।

২) বিঘা প্রতি ২৫ থেকে ৩০ কুইন্টাল পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায় । বাজারে কম করে খুচরো হিসাবে কিলোপ্রতি ১০০ – ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করা যেতে পারে ।

৩) যদি ২৫ কুইন্টাল ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা যায়, তবে ২৫ * ১০০ * ১০০ = ২৫০০০০ টাকা আমদানি হবে ।  খরচ যার সামান্য । খরচ বাদ দিয়ে লাভ দাঁড়াবে, ২৫০০০০ – ১৫০০০ = ২৩৫০০০ টাকা । চার মাসে লাখপতি হয়ে যাবেন । সুতরাং দ্বিধা না করে আজই Capsicum Cultivation এর কথা মাথায় সেট করে নিন ।

Frequently Asked Questions

ক্যাপসিকাম আসলে কি ?

ANS: ক্যাপসিকাম এক ধরনের লঙ্কা জাতীয় ফসল । বিভিন্ন দেশে এর বিভিন্ন নাম । কোথাও বেল পেপার আবার কোথাও পেপার । আমাদের দেশে এটি ক্যাপসিকাম নামে পরিচিত ।

ক্যাপসিকামের উপকারিতা কি ?

ANS: ক্যাপসিকামের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না । ক্যানসার, হাড়ের গঠন থেকে শুরু করে শরীরে ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য এটি খুব কার্যকরী ।

ক্যাপসিকাম কেমন মাটিতে ভালো হয় ?

ANS: ক্যাপসিকাম সাধারনত দোয়াস বা বেলে দোয়াস মাটিতেই ভালো হয়ে থাকে । তবে এঁটেল মাটিতেও কিছু কিছু চাষ হয়ে থাকে ।

ক্যাপসিকাম চাষের বান্ধব জলবায়ু কি ?

ANS: সত্যি কথা বলতে গেলে, ক্যাপসিকাম সারা বছরই চাষ করা যায় । তবে মোটামুটি নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া এর পক্ষে খুবই ভালো ।

পশ্চিমবঙ্গে ক্যাপসিকাম চাষ কেমন হয় ?

ANS: পশ্চিমবঙ্গে ক্যাপসিকাম চাষ যথেষ্ট ভালো পরিমানে হয়ে থাকে । প্রায় সারা বছরই এর জোগান দেখা যায় ।

নিচু ও জলজ জমিতে কি ক্যাপসিকাম চাষ করা সম্ভব ?

ANS: উঁচু জমির ব্যবস্থা থাকলে নিচু জমিকে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো । যদি সেটা সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে নিচু জমিতে উঁচু উঁচু বেড তৈরি করে তাতে চাষ করা যেতে পারে । ব্যয় সাপেক্ষ ব্যাপার ।

ক্যাপসিকাম চাষের সম্ভাবনা কতোটা ?

ANS: সম্ভাবনা বলতে গেলে, এই চাষের ক্ষেত্রে যথেষ্টই আছে । এর চাহিদা যেমনি খুবই বেশী, দামও তেমনি যথেষ্ট । চাষিরা এই চাষ করলে লাভের মুখ অবশ্যই দেখবে ।

ক্যাপসিকাম ব্যবহার হয় কিসে কিসে ?

ANS: ক্যাপসিকাম প্রধানত খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয় । যেকোনো তরকারী, মাছ ও মাংসে, বিরিয়ানি, ফ্রায়েড রাইস ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয় । স্যালাড হিসাবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।

সংরক্ষিত খাবারে এর ব্যবহার আছে কি ?

ANS: সংরক্ষিত খাবারেও এর ব্যবহার আছে । ক্যাপসিকামের চাটনি ও আচার বিপুল পরিমানে বিক্রি হয়ে থাকে । 

ক্যাপসিকামের কতো রকমের প্রজাতি আছে ও তাদের নাম কি ?

ANS: ক্যাপসিকামের অনেক প্রজাতি আছে । তার মধ্যে উন্নত কয়েকটি প্রজাতিই বাজারে প্রচলিত ও জনপ্রিয় । সেইসব প্রজাতিগুলোই আমরা ব্যবহার করে থাকি । যেমনঃ ভারত, বিটলিবেল,  ক্যালিফোর্নিয়া ওয়াণ্ডার, ইয়োলো ওয়াণ্ডার, চায়নিজ জায়েন্ট, হাম্বার্স, কিং অফ নর্থ, কানাপে, ওসির, ইন্দিরা, মহাভারত, ম্যানহাটন, রতন, অনুপম, তানভি, মানহেম ৩০১৯, মানহেম ৩০২০, আ্যটলাস, ইত্যাদি ।

আজ আমরা Capsicum Cultivation নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম । আগামীতে Capsicum Cultivation নিয়ে আরো নতুন নতুন আলোচনা করবো, তাই আমাদের পেজে নিয়মিত চোখ রাখুন । এই লেখাটি অনেকের কাজে লাগতে পারে তাই লেখাটি যতটুকু সম্ভব শেয়ার করুন, যাতে করে অনেকের উপকারে আসে । ধন্যবাদ ।

সুপ্রিয় বন্ধুরা, আমি কিংশুক দেবনাথ (Kingshuk Debnath), এই সাইটের রূপকার ও প্রতিষ্ঠাতা (Creator & Founder) । আমি একজন লেখকও বটে । আমি বিভিন্ন প্রকারের ব্যবসা, চাষআবাদ, পেশা সম্পর্কে সব তথ্য ও তত্ত্ব তুলে ধরতে চাই । শুধু তাই নয়, অনেক নতুন ধারনা যা আপনারা ভাবেন নি বা দেখেন নি সেই সবও । আমি চাই, নতুন প্রজন্ম এবং বেকার কর্মসন্ধানী মানুষেরা নিয়মিত আমার সাইটে নজর রাখুন এবং আকর্ষণীয় ধারনাগুলি দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠা করুন...

Leave a Comment